Sylhet Today 24 PRINT

❛আতঙ্ক❜ ছড়িয়েও যদি রক্ষা মেলে!

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ |  ৩০ মে, ২০২০

মনে হচ্ছে আমরা আরেকটি অরাজক পরিস্থিতিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বলা হচ্ছে গণপরিবহন খুলে দেওয়ার পর পরিবহনের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করার জন্য পরিবহনগুলো তাদের ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী তুলতে পারবে! এই অজুহাতে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে যাত্রীভাড়া বাড়ানোর জন্য আজ বৈঠক করেছে কিন্তু কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। যাত্রীভাড়া নির্ধারণের নিমিত্তে তারা আগামীকাল আবার বৈঠকে বসবে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে।

কী পরিমাণ ভাড়া তারা বাড়াবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে না পারলেও যাত্রীভাড়া যে তারা বাড়াবেই একথা আমরা চোখ বন্ধ করেই বলে দিতে পারি। এমনকি তারা যাত্রীভাড়া দ্বিগুণ করতে পারে এমন আশঙ্কাও আমরা ওড়িয়ে দিতে পারিনা!

বিজ্ঞাপন

সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করার জন্য ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী তুলার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেটাকেও যে তারা বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে দু'চারদিন পরেই ওই উচ্চ ভাড়াতেই ধারণক্ষমতার সমপরিমাণ বা ক্ষেত্রবিশেষে তারও বেশি যাত্রী তুলবে না তারও কোন নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারিনা!

তাছাড়া অফিসগামী লাখ লাখ মানুষের নিজস্ব পরিবহন না থাকায় তারাও সচেতনভাবেই পড়িমরি করে এবং গাদাগাদি করেই বাসে উঠতে বাধ্য হবে! সচেতন ও অসচেতন সব নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত নাগরিকই এটা করতে বাধ্য হবে। ট্রাফিকপুলিশ বা বিআরটিএ'র প্রতিনিধিরাও প্রথম দু'চারদিন কড়াকড়ি করলেও শেষমেশ তারাও হাল ছেড়ে দেবে -আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অন্তত তাই ই বলে!

বস্তুত আমরা সবাই এদেশের পরিবহন শ্রমিকদের খাসলত সম্বন্ধে নিজ নিজ হাতের রেখার চেয়েও বেশি জানি। আর এ কারণেই আমরা তাদের স্বভাবের উপর আস্থা রাখতে না পারলেও তাদের অরাজকতার ব্যাপারে প্রায় শতভাগ নিশ্চিত ভবিতব্য করতে পারি!

করোনা নিশ্চিতভাবেই একদিন এদেশ থেকে বিদায় নেবে কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের অরাজকতা যে বিদায় নেবে না এবং এই উচ্চ ভাড়া যে আর কখনোই কমে স্বাভাবিক হবে না তা অনুমান করতে রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না! বরং আমরা দেখবো যে করোনা চলে যাওয়ার পরও আমাদের মতো ব্যক্তিগত পরিবহনবিহীন আমজনতাকে এই দ্বিগুণ ভাড়াতেই যাতায়াত করতে হবে। কারণ আমরা খুব ভালো করেই জানি পিঁয়াজ সিন্ডিকেটের চেয়ে পরিবহন সিন্ডিকেট আরও অনেক বেশি শক্তিশালী! তারা আরও বড় মাফিয়া!

বিজ্ঞাপন

এ পর্যন্ত যারা পড়েছেন তারা অনেকেই হয়তো ভাবছেন শুধু নেগেটিভ দিকটাই দেখছি। সত্যি বলছি, পজিটিভলিও চিন্তা করেছি কিন্তু তার মাঝেও পজিটিভটি খুঁজে পাইনি।

ধরুন পজিটিভ হয়ে ধরেই নিলাম পরিবহন শ্রমিকরা ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী তুলে সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করবে। যদি এমনটিও হয় তাহলেও কি আমরা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবো?

উপসর্গহীন বা উপসর্গসহ কোন করোনা আক্রান্ত রোগী যদি গণপরিবহন ওঠে তার গন্তব্যে নেমে যাওয়ার পর ঐ একই সিটে গিয়ে আরেকজন সুস্থ যাত্রী বসেন, যদি একই হাতলে হাত রাখেন তাহলে তার সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমবে কীভাবে?

কতটি পরিবহনে কতজন পরিবহন শ্রমিক স্যানিটাইজার দিয়ে এগুলো বারবার জীবাণুমুক্ত করবেন বা সেরকম আশা করাও কতটুকু যৌক্তিক? কতজন যাত্রী স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাথে নিয়ে বাসে উঠবেন বা আমাদের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় কতজনের কাছ থেকে সেই সচেতনতাটুকু আশা করাও যৌক্তিক?

পুনশ্চ: যদি মনে করেন আতঙ্ক ছড়াচ্ছি তাহলে বলবো এখন আমরা এমন একটা সময়ে এসে পৌঁছেছি যখন আতঙ্ক ছড়ানোটাও জরুরি হয়ে পড়েছে। যদি কিছু মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ঘরে বসে থাকে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মনে চলে তাহলেও রক্ষা পাওয়ার ক্ষীণ আশা আছে!

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ: সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.