Sylhet Today 24 PRINT

করোনা পরিস্থিতি: বাংলাদেশের অর্থনীতি

মেরিনা দেবনাথ |  ৩০ মে, ২০২০

করোনা (কোভিড ১৯) বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে বিশ্বের ২০৮ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কোভিড ১৯ সংক্রমণের ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা বাণিজ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে যা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মোটা দাগে কৃষি, সেবা ও শিল্প খাতে ভাগ করা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতিতে এখন সেবা, শিল্প ও কৃষি খাতের অবদান যথাক্রমে প্রায় ৫০ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ এবং ১৪ শতাংশের মতো। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯ অনুসারে দেশের মোট জনসংখ্যার ২০.৪ শতাংশ মানুষ শিল্পে এবং ৩৯ শতাংশ মানুষ সেবা খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট। এসব শিল্প ও সেবা খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বেসরকারি খাত হলো পোশাক ও চামড়া শিল্প। সারাদেশে পোশাক ও চামড়া শিল্পে নিয়োজিত কর্মীর সংখ্যা ৪.৫ মিলিয়ন এবং দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে এই গার্মেন্টস ও চামড়াজাত পণ্য থেকে।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি প্যাকেজে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা (যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ) আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেন। এর মধ্যে করোনার আঘাত থেকে রপ্তানিমুখী খাতের শ্রমিকদের বাঁচাতে ৫ হাজার কোটি টাকার (যা জিডিপির প্রায় ০.২ শতাংশ) প্রণোদনা প্যাকেজও রয়েছে। দেশের শিল্পবাণিজ্যে করোনার আঘাত আসতে পারে মনে করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরাই এই প্যাকেজের সুবিধা পাবেন বলে ঘোষণা করেন। যা দেশ ও দেশের অর্থনীতির জন্য যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।

ক্ষুদ্র (কুটিরশিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধাও প্রদান করা হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে এ ঋণ প্রদান করবে। এ ঋণসুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে। যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাথে জড়িতদের টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ৩৫০ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) যুক্ত হবে অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে সুদের হার ২ দশমিক ৭৩ থেকে কমে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পসেবা খাতগুলোর জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা, যা ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সুবিধায় সুদের হার ৯ শতাংশ। এর অর্ধেক অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতা দেবে। বাকি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে সরকার ব্যাংককে দেবে। এর ফলে দেশের অর্থনীতির চাকা সমানতালে চলবে। প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট ফাইন্যান্স স্কিম নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করবে, এই সুবিধায় সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।

এসবের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষি শিল্পের জন্য আলাদাভাবে কৃষকদের কল্যাণে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছেন। সেটি মাত্র ৫ শতাংশ সুদে ঋণ হিসেবে সরাসরি ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। ৯ হাজার কোটি সারের জন্য ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করা হবে। কৃষি যান্ত্রীকরণের জন্য ১০০ কোটি টাকা, বীজের জন্য ১৫০ কোটি টাকা প্রাথমিক প্রণোদনা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি এসব ভর্তুকি প্রাপ্তির ফলে কৃষকদের কৃষি উপকরণ ক্রয়সহ ফসল উৎপাদনের জন্য কম অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। যন্ত্র ব্যবহারের ফলে শ্রমিক বাবদ খরচ কমে যাবে এবং শ্রমিকদের চলাচলও কম হবে। ফলে করোনা ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। এছাড়া উন্নত মানের বীজ বা ভালো বীজ বা কিছু কিছু বীজ যেগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় সেসকল ক্ষেত্রে অনুদান ও প্রণোদনা প্রদান অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত যা দেশের কৃষি অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখবে।

আমরা আশাবাদী যে, মে মাস শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা ও অর্থনীতির উন্মুক্তকরণ এবং সরকারঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করবে। ব্যবসা বাণিজ্য সহ স্বল্প পরিসরে সকল প্রতিষ্ঠান চালুকরণ এবং সরকার ও জনগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাজার ব্যবস্থা তথা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

মেরিনা দেবনাথ: সহকারী কমিশনার, রংপুর

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.