Sylhet Today 24 PRINT

সময় এখন প্রকৃতির

মো. সামিউল আহসান তালুকদার |  ০৫ জুন, ২০২০

বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বই আজ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে ধরাশায়ী। গতানুগতিক জীবন ধারা পাল্টে এক নতুন স্বাভাবিক জীবন (New Normal)-এর প্রত্যাশায় গৃহবন্দি মানুষ। এহেন করোনা মহামারির সময় ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে ৪৭তম বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জীববৈচিত্র্য’। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি’র এ বছরের স্লোগান হচ্ছে ‘সময় এখন প্রকৃতির’। এবার দিবসটির আয়োজক দেশ কলম্বিয়া।

পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য একটি মৌলিক সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির লক্ষ্যে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতার পরিবেশ বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫-১৬ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই যুগান্তকারী সম্মেলনের ঘোষণার অনুসরণে পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতাকে টেকসই ভাবে বেগবান করার জন্য পরের বছর ১৯৭৩ সালে ১৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৫জুনকে “ বিশ্ব পরিবেশ দিবস” হিসেবে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়। ৫জুন তারিখটি পরিবেশ বিষয়ক প্রথম যুগান্তকারী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিনের সাথে মিল রেখে করা হয়। একই অধিবেশনের অন্য একটি রেজুলেশনে পরিবেশ সংক্রান্ত বিশেষায়িত এজেন্সি ‘জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি’ (United Nation Environment Programme, UNEP) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই দিবসটি জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত দেশ সমূহে ১৯৭৪ সালে প্রথম উদযাপন করা হয়। ধারাবাহিক ভাবে অদ্যাবধি এই দিবসটি জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচীকে ওজোন স্তর হ্রাস, বিষাক্ত রাসায়নিক, মরুকরণ ও বৈশ্বিক উষ্ণতার মতো উদ্বেগগুলিতে সচেতনতা বাড়াতে এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা সৃষ্টিতে সহায়তা করছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ গত জরুরি সমস্যা নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এই দিবসটি একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে বিকশিত হয়েছে।

আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি, বাতাসের সাহায্যে শ্বাস নেই, পানি পান করি এবং জলবায়ু আমাদের গ্রহকে বাসযোগ্য করে তোলে - সবকিছুই প্রকৃতি থেকে আসে। উদাহরণ স্বরূপ, সামুদ্রিক জলজ উদ্ভিদ আমাদের বায়ুমণ্ডলের অর্ধেকের বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ আমাদের প্রায় ২২ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে বিনিময়ে অক্সিজেন ছেড়ে দিয়ে বায়ু নির্মল করে। এতকিছু সুবিধা পাওয়ার পরও আমরা এখনও প্রকৃতির সাথে ন্যায্য আচরণ করছি না। ব্রাজিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার দাবানল থেকে শুরু করে পূর্ব আফ্রিকা জুরে পঙ্গপাল আক্রান্ত হওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি এবং বর্তমানে বিশ^ব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারী মানুষ ও অন্যান্য জীব ও পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের আন্তঃনির্ভরশীলতা জীব-বৈচিত্র্যের গুরুত্ব ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। ‘জীব-বৈচিত্র্য’ আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে অত্যন্ত জরুরি ।

বিজ্ঞাপন

জীবনের ভিত্তি হলো জীব-বৈচিত্র্য। এটি মানুষের স্বাস্থ্য, পুষ্টিকর খাদ্য, প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে জলবায়ু প্রশমন সবকিছুকে প্রভাবিত করে। এই চক্রের একটি উপাদান পরিবর্তন করা বা অপসারণ সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে এবং ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। মানুষের বিবিধ কার্যকলাপ যেমন বন উজাড় করা, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল দখল, আগ্রাসী কৃষিকাজ ইত্যাদি প্রকৃতির সীমাকে (bio-capacity) অতিক্রম করেছে। প্রকৃতি তৈরি করে মানুষের এমন বার্ষিক চাহিদা পূরণ করতে ১.৬ গুণ পৃথিবী প্রয়োজন। আমরা যদি এই পথে চলতে থাকি, জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতিতে খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ধস সহ মানবতার জন্য মারাত্মক প্রভাব পড়বে। করোনা ভাইরাসের আবির্ভাবে এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংস করা মানে মানবজাতির বেঁচে থাকার ভিত্তিকেই ধ্বংস করা।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রায় ৭৫ ভাগ সংক্রামক রোগ হলো জুনোটিক অর্থাৎ প্রাণি থেকে মানুষে সংক্রামিত হয়েছে। এ থেকে প্রকৃতির বার্তা আমরা অনুধাবন করতে পারি। প্রাণিবাহিত সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে বাহক প্রজাতির উচ্চ ঘনত্বের কারণে উক্ত রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। কিন্তু যদি আমরা এসব রোগের বাহকদের ধ্বংস করে তাদের সংখ্যাকে কমিয়ে শুধু অবৈজ্ঞানিকভাবে নির্বাচিত প্রাণির একক পালন করি, তখনই তারা সংক্রামক রোগের উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখে। তাই ভবিষ্যৎ মহামারি থেকে বাঁচার প্রধান উপায় হলো প্রকৃতিকে অক্ষুণ্ণ রাখা, জীব-বৈচিত্র্যকে অক্ষুণ্ণ রাখা।

প্রকৃতি আমাদের একটি পরিষ্কার বার্তা প্রেরণ করেছে। আমাদের নিজেদের ক্ষতির জন্য আমরা প্রকৃতিকে নির্বিচারে বিনাশ করছি। জলবায়ু বিপর্যয় আরও ভয়াবহ হচ্ছে। তাই প্রকৃতি তথা ‘জীব-বৈচিত্র্য’ রক্ষার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করা উচিত। এজন্যই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে আমাদের বছরব্যাপী শুধু এই দিবসটি পালন নয়, ধারণ করা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: ইউএনইপি

মো. সামিউল আহসান তালুকদার: কৃষিবিদ; সহযোগী অধ্যাপক, কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.