Sylhet Today 24 PRINT

একটি মৃতদেহের শেষ অবস্থা!

রিপন চন্দ্র পাল |  ২১ নভেম্বর, ২০২০

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ধর্ষণের সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ এখন অতিষ্ঠ। তাই দেখা যায় এসব সইতে না পেরে লোকজন রাস্তায় নেমে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তাদের আন্দোলন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড বিধান রেখে আইন করা হয়েছে।

এমতাবস্থায় ভুক্তভোগী হয়ত জীবিত ছিল বা করো কারো মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে বিগত এক বছরে আসা পাঁচটি আত্মহত্যাকারী ১৪–১৭ বছর বয়সী মেয়েদের মৃতদেহের সাথে যৌন সংসর্গ করা মুন্না নামে এক ব্যক্তি ধরা পড়ে।

সাধারণ মানুষ যারা আছেন তারা মৃতদেহ দেখলে তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। কিন্তু ওই ব্যক্তি কোনো প্রকার সংকোচ ছাড়াই মৃতদেহের সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। যেহেতু সে মৃতদেহ রক্ষণাবেক্ষণ করত সেহেতু তার মধ্যে কোনো প্রকার সংকোচ কাজ করেনি।

একটা মহল থেকে কথা আসছে যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডোম হলে এসব হয়তো করতো না। কিন্তু আমরা সবাই জানি সেই ব্রিটিশ আমল থেকে মর্গের রক্ষণাবেক্ষণটা একটা বংশপ্রথা হয়ে আসছে। যারা আগে এসব করতেন শুধু তারাই এসব করে যাচ্ছেন।

ওই হাসপাতালের সরকারি বেতনভুক্ত ডোম একজনই। তার সহকারী হিসাবে মুন্না কাজ করত। মুন্নার কাছে মর্গের চাবি থাকত তাই সে অপকর্মগুলা করতে পেরেছিল।

এমতাবস্থায় সরকার যদি আগে থেকেই সেই বংশপ্রথা ভেঙে একটা উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়ে লোকজন নিযুক্ত করতেন তাহলে হয়তো আজ এমন ঘটনা দেখতে হতো না। আর তাতে এই পেশাটা সবার মাঝে ছড়িয়ে যেত এবং কিছু বেকারত্বও ঘুচত। তাছাড়াও যারা এসব পেশায় কাজ করেন তাদেরকে সরকার চাইলে একটা মানসিক প্রশিক্ষণ দিতে পারতেন না? অবশ্যই পারতেন। কিন্তু হয়তো উনারা আদৌও আমলে নেননি বা অবজ্ঞা করে এসেছিলেন।

একটা মানুষ মারা যাবার পর তার পরিবার ঐ মৃতদেহ নিয়ে ধর্মীয় ভাবাবেগের মাধ্যমে শেষকৃত্য করে থাকেন। তবে যখন মর্গে পাঠানো লাশ ফেরত নেয়ার সময় স্বজনরা জানবেন যে লাশের সাথে কী কী হয়েছিল তখন তাদের কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছেন?
মর্গে গিয়েও যদি লাশটা ভালো না থাকে তাহলে ক্রমান্বয়ে লোকজন মর্গে লাশ পাঠানোতে অনীহা প্রকাশ করবে। এতে যেমন অপরাধীকে ধরা কঠিন হবে তেমনি ওই আসামি সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে। বিনিময়ে আর মানুষের ক্ষতি হবে।

বলা বাহুল্য ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে কিন্তু এটাতো কোনো ঘটনার পরবর্তী অবস্থামাত্র। তাই আমাদের উচিত কেউ যাতে এসব নিয়ে ভাবতেই না পারে এমন একটা সামাজিক কাঠামো গড়ে তোলা। সামাজিক মাধ্যমসহ নানা প্রচার মাধ্যমে এসবের ভয়াবহতা প্রচার করা। তাতেই হয়তো সবার মনে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে। একই সাথে আমাদের সমাজ ব্যবস্থার আমূল একটা পরিবর্তন চাই যে সমাজে কাউকে অপরাধ করতে প্ররোচনা নয় প্রত্যাখ্যান করবে। সামাজিকতাই পারে মানুষের মনের ওপর প্রভাব ফেলতে। তাই এদিকটায় সবার মনোযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করি।

শুধু তাই না মুন্না যে অপরাধ করেছে তাতে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় যাতে পরবর্তীতে কেউ এমন অপরাধ করার আগে তার মধ্যে একটা ভীতি কাজ করে। আবার আমাদের দেশে যেসব আইন আছে সেসবের যদি যথাযথ প্রয়োগ হয় তাহলেই হয়তো এসব অপরাধের মূল উৎপাটন করা সম্ভব হবে।

এতেই হয়তো বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা সবাই দেখতে পাবেন যেথায় কোনো অপরাধ নেই। সবাই যার যার স্বাধীন মতো চলতে পারবেন। কোথাও কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যথাযথ বিচারকার্য হবে। এভাবে দেশ ও জাতি উভয়েই স্বস্তিতে ফিরবে। ফলে পরবর্তীতে আর কোনো স্বজন উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করবে না। বিশ্বে বাংলাদেশ হবে এক অনন্য দেশ।

রিপন চন্দ্র পাল: ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.