তুষার গায়েন | ০৬ ডিসেম্বর, ২০২০
মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অবিসংবাদিত নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দ্বিতীয়বারের জন্য আঘাত হেনেছে স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী ঘাতকের দল। ১৯৭৫ সালে এই ঘাতকেরা তাঁর মনুষ্যদেহে আঘাত হেনে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল আর ২০২০ সালে তাঁর নির্মিতব্য ভাস্কর্যে আঘাত হেনে পুনর্বার হত্যা করার উল্লাসে মত্ত হয়েছে এরা। প্রথমবার কোনো ঘোষণা ছাড়া তাঁকে শারীরিকভাবে হত্যা করেছিল, আর এবার ঘাতকের দল ভাস্কর্য ভাঙার আগাম হুমকি দিয়ে তা করার দুঃসাহস প্রদর্শন করেছে যখন দেশে পালিত হচ্ছে মুজিব শতবর্ষ এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত!
দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, যখন বিমানবন্দরে মৌলবাদীরা বাউল শিরোমণি লালন সাঁইয়ের ভাস্কর্য ভেঙেছিল তখন আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ করেনি, হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির গলা টিপে হত্যা করার জন্য বয়াতি ও পালাকারদের ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে জেলে বন্দি করতে হাত কাঁপেনি আওয়ামী লীগের; হিন্দুদের মন্দির প্রতিমা, কাদিয়ানী মুসলিমদের মসজিদ ভাঙা অথবা বাউলদের ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনাতে ততটা বিচলিত নয় আওয়ামী লীগ; মৌলবাদী হেফাজতের নির্দেশে স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে রবীন্দ্রনাথসহ বাংলাভাষা ও সাহিত্যের দিকপালদের বাদ দিতে যাদের হাত কাঁপে না এবং মুক্তচিন্তার তরুণদের একের পর এক হত্যা করলেও যাদের হৃদয়ে রেখাপাত করে না, তাদের শাসনামলেই যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ঔদ্ধত্য মৌলবাদীরা দেখাবে, এতে বিস্মিত হবার কিছু নাই।
বঙ্গবন্ধু কোনো বিচ্ছিন্ন সত্তা নন- তিনি এই আউল-বাউল, লালন-রবীন্দ্রনাথ, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রাণধারা থেকে উঠে আসা, বাংলার রৌদ্র-জল-প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ভিতর থেকে মূর্ত হওয়া একজন বাঙালি নেতা; তাকে রক্ষা করতে হলে শুধু একটি উগ্র ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর ধর্মানুভূতি রক্ষা করলে চলবে না, সমস্ত জনগোষ্ঠীর অনুভূতি ও আকাঙ্ক্ষাকে রক্ষা করতে হবে।
ধর্মীয় বিধি-বিধান মানুষের ব্যক্তিজীবন এবং বিশ্বাসের স্থানে থাকবার বিষয়, তাকে রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে সম্পর্কিত করার অবিমৃষ্যকারিতা এবং ভয়াবহতা সমকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দৃশ্যমান। রাজনীতি, রাষ্ট্রপরিচালনা এবং ক্ষমতা ভোগের হ্রস্ব কোনো রাস্তা নেই! আওয়ামী লীগ এই বাস্তবতাকে যতো দ্রুত অনুধাবন করবে এবং আপোষকামিতার পথে না হেঁটে সিধা রাস্তায় দেশের মানুষকে নিয়ে অগ্রসর হবে, ততই মঙ্গল। না হলে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং বাঙালি জাতিকে বহুকালের দুর্ভোগ পোহাবার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
তুষার গায়েন: কবি।