Sylhet Today 24 PRINT

‘প্রকল্পের স্বার্থে’ মনাই নদী হয়ে গেছে মনাই খাল

সজল সরকার |  ১৯ মার্চ, ২০২১

সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর থানাধীন চামরদানী ইউনিয়নের অন্তর্গত মনাই একটি ঐতিহ্যবাহী নদী। যা ভাটির মনাই নামে খ্যাত। মনাই নদীর সুনই ফিসারি মাছের জন্য অন্যতম। এ নদীটি বংশীকুন্ডা, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা জেলার আদি নদী। বর্তমানে নদীটির পলি জমে থাকার কারণে শুকনা মৌসুমে শুকিয়ে যায়।

জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাওবো) মাধ্যমে এ নদীটিকে 'খাল হিসেবে' খনন করা হচ্ছে। ভাটির গৌরবময় নদী আজ প্রকল্পের স্বার্থে নাম বদলে খাল হয়েছে! তারপরও এলাকাবাসী আশা করছে নদীটি সঠিকভাবে খনন হলে ফিরে পাবে তার হারানো রূপ। পাশাপাশি একই সময়ে নদীর মূল অংশে মাছের অভয়াশ্রম তৈরির জন্য আরেকটি প্রকল্পের নামে মনাই নদীর গহিন অংশ বাঁধ দিয়ে সেচ দেওয়ার কাজও চলছে জোরেসোরে। নদীর এ অংশটিকে ডোয়ার বলা হয়। যা স্বাদুমাছের বীজ রক্ষার আধার।

সেচ কর্তৃপক্ষ বলছে, মাছ বৃদ্ধির লক্ষে নদী শুকিয়ে তাতে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করে পোনা ছাড়া হবে। উল্লেখ্য যে নদীটির বেশিরভাগ অংশ শুকিয়ে যাওয়ার ফলে উক্ত (পোনাছাড়া প্রকল্প) স্থানকে কেন্দ্র করেই মাছ ও প্রাণিকুলের একমাত্র বিচরণক্ষেত্র। হাওরে চৈত্রের এই খরা মৌসুমে আশেপাশেও নেই তেমন জলের উৎস। শুধু তাই নয় নদীটি সেচের ফলে নদীর তীরবর্তী নগদাপাড়া, সাভারিপাড়া, মদনপুর ও রামদীঘাবাসীর গৃহস্থালি কাজ, গবাদি পশু ধোয়াসহ জনগণের স্নান-সঙ্কট দেখা দেবে।

এলাকাবাসীর দাবি প্রকল্পের নামে শুধু মাছের পোনা ছাড়ার চিন্তা করলেও নদীটি তার অন্যান্য প্রাণবৈচিত্র্য হারাবে। যা পুনরায় ফিরে পাওয়া অসম্ভব। মনাই নদীর কাছিমের (কচ্ছপ) সুনাম হাওর ময়ালে এখনও প্রশংসিত। বিশেষ করে দীর্ঘদিন নদীরতলায় নরম মাটির খাদে বাস করা কাছিম ও হলুদ ঘাগট মাছ তার আবাসস্থল হারাবে। যা কালে কালে গড়ে উঠেছে। হলুদ ঘাগট মনাই নদীর বিখ্যাত মাছ। এলাকাবাসী আশা করেছিল সেচহীন নদী খননের ফলে দেশিমাছের আধার রূপে নদীটি আবার পূর্বের মত ফিরে আসবে। কিন্তু শুধু মাছ বৃদ্ধির প্রকল্পের নামে সেচ দিলে নদীটির দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা স্বাদু মাছ ছাড়াও জলজ প্রাণিকুল ধ্বংস হয়ে যাবে। পানকৌড়ি, বক ও গাঙ্গচিলসহ নদীকেন্দ্রিক পাখি অন্যত্র চলে যাবে।

এ নদীতে বিলুপ্ত প্রায় অসংখ্য প্রজাতির স্বাদু মাছ আছে যা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তাই প্রকল্পের নামে নির্দিষ্ট পোনা মাছ ছেড়ে তার ক্ষতি পোষানো সম্ভব নয়। বিষয়টি বিবেচনার জন্য এলাকাবাসী ইউএনও, এমপি ও ডিসি মহোদয়ের কাছে তাদের মৌখিক ও লিখিত মতামত তুলে ধরেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ইতিবাচক সাড়া পায়নি। গত দুদিন যাবত সেচের কাজ চলমান আছে। শীঘ্রই নদীটি পানিশূন্য হয়ে পড়বে।

এতে করে নদীপ্রকৃতির প্রাণবৈচিত্র্য বিলুপ্ত হবে। তাই বিষয়টি সুবিবেচনার জন্য এলাকাবাসী জোর দাবি জানাচ্ছে।
সজল সরকার: সংগঠক।

লেখায় প্রকাশিত তথ্য ও মন্তব্য লেখকের নিজস্ব।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.