Sylhet Today 24 PRINT

পাকিস্তান পরিস্থিতি: সব শেয়ালের এক রা!

স্কুলে তালেবান হামলা

আমিনুল ইসলাম  |  ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

পাকিস্তানে কিছু দিন আগে তালেবান জঙ্গিরা একটি স্কুলে ঢুকে স্কুলের শিশুদের হত্যা করে যে ঘটনার জন্ম দিয়েছে সেটি সাম্প্রতিককালের পুরো পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলোর একটি। স্কুলের শিশুদের ওপর এ রকম নির্বিচারে হামলা হয়তো অনেক বড় বড় যুদ্ধেও সংঘটিত হয়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পাকিস্তানে কি এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা? আসলে পাকিস্তানে এ ধরনের হামলা সাম্প্রতিক সময়ে অনেকবার হয়েছে। এবার হয়তো স্কুলের শিশুদের ওপর হামলা ও অনেক শিশুর মৃত্যুর ফলে পুরো পৃথিবীর সংবাদমাধ্যমগুলোতে এটি অনেক বড় সংবাদ হয়েছে। তবে পাকিস্তানজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দেখা যায় তালেবান জঙ্গিরা হয় বোমা হামলা করছে কিংবা আত্মঘাতী হামলায় জড়িয়ে পড়ছে। পাকিস্তানে এই যে জঙ্গি তৎপরতা এটি তাহলে বন্ধ হচ্ছে না কেন! কিংবা এর উৎসই-বা কোথায়!
 

৯/১১তে আমেরিকায় টুইন টাওয়ারে হামলার পর আমেরিকার ভেতর সবাই নিজেদের রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে ঐকমত্যে পৌঁছায়, সন্ত্রাস ও জঙ্গিদের একসঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। মুম্বাইয়ে বোমা হামলার পর ভারতের ভেতরও সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে জঙ্গি দমনে সম্মত হয়। তবে পাকিস্তানের বিষয়টা ভিন্ন। পাকিস্তানে একেক রাজনৈতিক দল একেক তালেবানকে সাপোর্ট করছে, সেনাবাহিনীও সাপোর্ট দিচ্ছে যে যার মতো করে। ওদের কাছে কিছু জঙ্গি ভালো আবার কিছু জঙ্গি খারাপ। প্রতিবেশী ভারতের কথা চিন্তা করেও দেখা গেছে, পাকিস্তানিরা জঙ্গিদের মদদ দিয়ে থাকে। অর্থাৎ সেখানে একেক জঙ্গিকে একেকভাবে দেখা হয়ে থাকে। আর এ কারণেই পাকিস্তান পরিণত হয়েছে ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের একটা অভয়ারণ্যে। 


সেনাবাহিনীর স্কুলে হামলার পর সেনাবাহিনীপ্রধান সে দেশের সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় ধরে দিয়ে ঘোষণা করেছেন, তিন হাজার তালেবান জঙ্গিকে হত্যা করতে হবে, নইলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এর সমুচিত জবাব দেবে। এরই মাঝে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তালেবান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে তাদের অপারেশন শুরু করেছে এবং অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, সেখানকার কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষা বা তোয়াক্কা না করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিজ উদ্যোগেই এ কাজ শুরু করেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অবস্থান কোথায়। পাকিস্তানে একটা কথা প্রচলিত আছে-  প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি থামিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধানকে আগে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হয়। অর্থাৎ পাকিস্তানের রাজনীতিতে আসলে সেনাবাহিনীই শেষ কথা। এখন এই সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা গোয়েন্দা সংস্থাও কিন্তু তালেবানকে সাপোর্ট দিয়ে এসেছে অনেক দিন ধরে। এবার যখন নিজেদের স্কুলেই হামলা চালিয়ে বসল তালেবান, তখন সবার টনক নড়েছে। আর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চাপে হোক কিংবা সাধারণ মানুষের চাপেই হোক, সেখানে প্রায় সব রাজনৈতিক দল এখন তালেবানের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই একজোট হওয়ার মাঝেও যেটি উলেল্গখযোগ্য সেটি হচ্ছে পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী তালেবানকে সমর্থন দিয়েছে। অর্থাৎ পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী সে দেশের অন্য দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছায়নি এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে এখনও তালেবানকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে খুব ভালো করেই প্রতীয়মান হয়, পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে পুঁজি করে জঙ্গিবাদের মদদ দিচ্ছে। 


পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর যে একটা যোগাযোগ আছে, এটি কার না জানা! অনেকের অভিমত হচ্ছে, বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী আসলে প্রকারান্তরে পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর একটি শাখা। এটি আরও ভালোভাবে বোঝা গেছে, কাদের মোল্লার ফাঁসির সময় পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী সে দেশে এটির শুধু প্রতিবাদই করেনি, পাকিস্তানের সংসদে কাদের মোল্লার জন্য রীতিমতো শোক প্রস্তাবও পেশ করে, যেটি পরে সে দেশের সংসদে গৃহীতও হয়। এ থেকেই বোঝা যায়, পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর আসলে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এখন পাকিস্তানের জামায়াতের সঙ্গে যে তালেবানের যোগাযোগ আছে এবং তারা যে ধর্মকে ব্যবহার করে জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছে, সেটি একদম সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে পরিষ্কার।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পাকিস্তানের সব দল ও সেনাবাহিনী মিলে যদি তালেবানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে, তাহলে সে দেশের তালেবান জঙ্গিরা পালিয়ে কোথায় যাবে! তারা নিশ্চয়ই আশপাশের দেশগুলোতেই আশ্রয় নেবে। আপাতদৃষ্টিতে একেক দেশের তালেবানকে একেক রকম মনে হলেও দেখা যাবে আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গে যেমন পাকিস্তান তালেবানের নেটওয়ার্ক রয়েছে, তেমনি অন্যান্য দেশের সঙ্গেও রয়েছে। পাকিস্তানে যদি এখন বড়সড় অভিযান হয় তালেবানের বিরুদ্ধে, তাহলে সেখানকার জামায়াতের সঙ্গে বাংলাদেশে জামায়াতের সখ্য ও সহায়তায় যে এসব তালেবান বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়ে জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হবে না, সেটি বলা মুশকিল। 


তাই বাংলাদেশকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এসব জঙ্গিকে সবাই মিলে মোকাবেলা করার। ভুলে গেলে চলবে না, যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মামলার রায়ের পর কেবল চাঁদে সাঈদীর দেখাকে কেন্দ্র করে এ দেশে কী ঘটনা ঘটেছিল। কিছু দিন আগেই খবরে এসেছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ড্রোন বানাচ্ছে। বহুতল ভবন ধ্বংস করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। এছাড়া এ দেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও রয়েছে। রোহিঙ্গাদের জঙ্গি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার খবরও নতুন কিছু নয়। সরকার এবং অন্য দলগুলোকে এখনই একসঙ্গে বসে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে জামায়াতে ইসলামীসহ সব জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে। জিরো টলারেন্সই হোক এসব জঙ্গির বিরুদ্ধে আমাদের একমাত্র পন্থা।



আমিনুল ইসলাম: কলাম লেখক, গবেষক

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.