Sylhet Today 24 PRINT

লোকসংগীত ও বিতর্কিত দাবি

বশির আহমদ জুয়েল |  ০৪ মে, ২০২১

রামকানাই দাশ লোকসংগীতের এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সুরকার হিসেবেও তিনি অমর। একুশে পদকপ্রাপ্ত সম্মানীয় এই শিল্পীর নামের সাথে বিতর্ক-সমালোচনা কখনই কাম্য নয়। তারপরও তার নামের সাথে সমালোচনা-বিতর্ক লেগেই থাকে। যা আগামী প্রজন্মের জন্য সত্যিই হতাশা ও লজ্জার।

বিভিন্ন সময় অন্যের গান নিজের বলে দাবি করার অভিযোগ ওঠেছে প্রয়াত লোকসংগীত শিল্পী রামকানাই দাশ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। `স্বজনী গুয়া গাছো ট্যাক্স লাগিলনি’, 'সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী' এবং 'বিনোদিনী গো বৃন্দাবন কারে দিয়ে যাবি' জনপ্রিয় এসব গানের পর এবার ‘নয়া দামান’ গান নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

সেই সাথে ‘একখান পান চাইলাম পান দিলি না’- হাল আমলে জনপ্রিয় হওয়া গানের গীতিকার নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এই গানের গীতিকারের তালিকায় রামকানাই দাশের থাকলেও নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন এটি লোকগান। তাদের দাবি, বিভিন্ন লোকগান রামকানাই দাশ গেয়ে গেয়ে জনপ্রিয় করেছেন। আবার কিছু লোকগান তিনি নিজের বলে দাবি করেছেন। ‘একখান পান চাইলাম পান দিলি না’ গানটির ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে।

এসব নিয়ে কদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। 'নয়া দামান' নিজের মা দিব্যময়ী দাশের লেখা বলে দাবি করেছিলেন রামকানাই দাশ। এনিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। রামকানাই দাশ ও তার পরিবারের দাবির পক্ষে জোরালো ভূমিকা নিয়েছেন এক স্থপতি। এই স্থপতি এর আগেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচিত হয়েছেন। তার বর্তমান ভূমিকা নিয়েও চলছে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা। এরআগে বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমকে তথ্যচিত্র নির্মাণ ও তা বাণিজ্যিক উদ্দেশে ব্যবহার নিয়েও এই স্থপতি সমালোচনায় পড়েছিলেন।

২০০৫/২০০৬ সালের দিকে রামকানাই দাশ 'নয়া দামান' গানটির নিজের মায়ের বলে দাবি করতে শুরু করেন। তবে এই দাবির সপক্ষে এখনও কোনো তথ্য-প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ফলে তার দাবি নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।

২০০৫ সালের আগে সিলেটের অনেক গুণী শিল্পী গানটি বিটিভিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেয়েছেন। যেখানে উপস্থিত থাকতেন রামকানাই। তিনিও সেসময় কোনো দাবি করেননি যে, ‘তোমরা যে গানটি গাইছো এটার গীতিকার তো আমার মা, সংগৃহীত বলছো কেনো?’ ঘটনা সত্যি হলে উনার চোখের সামনেই মায়ের লেখা গানের বিভিন্ন শব্দের পরিবর্তন দেখে অন্তত প্রতিবাদও তো করতেন, তাই না?

রামকানাই দাশের মৃত্যুর পর তার পুত্র তবলাবাদক পিনুসেন দাস গ্রামের বাড়িতে পিতার স্মরণে একটি সমাধিসৌধ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। দেশের বিভিন্নজনের স্বাক্ষর নিয়ে অনুদানের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে সমাধিসৌধ তৈরিতে গেলে নিজের গোষ্ঠির লোকজন রামকানাই দাশের স্বজনদেরকে কুপিয়ে আহত করে বলে শুনেছি। এরপর আর কোনোদিন পিনুসেন আর গ্রামের বাড়ি যাননি। তৈরিও হয়নি সমাধিসৌধ।

এ নিয়ে আমার প্রশ্ন, কী কারণে গ্রামের লোকজন এমনকি নিজের আত্মীয় স্বজন রামকানাই দাশকে অপছন্দ করেন? রামকানাই দাশ হয়তো গ্রামে থাকেননি। কিন্তু তার পিতা গ্রামেই থেকেছেন। কৃষিকাজ করেছেন গ্রামেই। রামকানাই দাশের দাবি অনুযায়ী, ‘তার পিতা মাতা দুজনে গানের খেলা খেলতেন’, ‘বিনোদীনি’ গান রচনা করেছেন। আর এ রকম বড় শিল্পীর খ্যাতিমান পুত্র রামকানাই দাশের সমাধি তৈরিতে রক্ত ঝরবে কেনো? এটা তো আমাদের সকলের জন্য লজ্জার।

ভবিষ্যতে সিলেটের আরও জনপ্রিয় লোকগান রামকানাই দাশের পরিবার থেকে তাদের দাবি করা হবে কি না এই প্রশ্নও এখন অমূলক নয়।

বাঙালির প্রাচীন লোকগান গান নিয়ে এই চোর-পুলিশ খেলাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া আবশ্যক বলে আমি মনে করছি।

বশির আহমদ জুয়েল: সম্পাদক-ছন্দালাপ (ছড়াসাহিত্যের ছোটকাগজ)।
(কলাম বিভাগে প্রকাশিত লেখার মতামত লেখকের নিজস্ব।)

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.