Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটের ‘হক সাব’

মো. আব্দুল হাছিব |  ০৩ জুলাই, ২০২১

এম এ হক

সিলেট বিভাগের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে যারা নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মোহাম্মদ আব্দুল হক (এমএ হক)। তিনি সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘হক সাব’ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন।

এমএ হক ২০২০ সালের ৩ জুলাই সকাল সাড়ে নয়টার সময় সিলেট নগরীর নর্থইষ্ট হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ওইদিন বাদ আসর হযরত মানিকপির রোডে প্রথম জানাজা ও ২য় জানাজা গ্রামের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার কলুমা গ্রামে বাদ মাগরিব অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে দুই দফা জানাজা শেষে কলুমা গ্রামে রাস্তার পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

এমএ হক রাজনৈতিক জীবনে সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে অর্থাৎ ২০০০ সালে সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নামকরণবিরোধী আন্দোলনে সফলভাবে নেতৃত্ব দেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের সিলেটে সফলভাবে সম্মুখ থেকে সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছেন যার কারণে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হন। কোর্ট পয়েন্টে মিছিলে পুলিশের হামলায় এমএ হকের মাথা ও কান ফেটে যায়; তিনি গুরুতর আহত হন। কোর্ট পয়েন্টে একটি জনসভা পণ্ড করে পুলিশ গুলি করার জন্য এমএ হকের দিকে বন্দুক তাক করে, যা স্থানীয় ও জাতীয় সব পত্রিকায় ছাপা হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, সাবেক ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনেদ আহমদ ও ইলিয়াস আলীর ড্রাইভার আনসার আলী ‘গুম’ হওয়ার প্রতিবাদে সিলেটে সকল আন্দোলন সংগ্রামে এমএ হক নেতৃত্ব দেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রতিবাদে তখনকার সময়ের আন্দোলনে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে বিজিবি, পুলিশ ও র‍্যাবের অতর্কিত গুলি চালালে তিনি সেখানে ছিলেন। পরের দিন ওই জায়গায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলসহ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।

এমএ হক হার্টের বাইপাস সার্জারি করাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এরপরও তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সকল কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতেন।

এমএ হক সফলভাবে সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক ও পরবর্তীতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ও পরে এমএ হক দুইবার সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দুঃখজনকভাবে একবারও তিনি জয়লাভ করতে পারেননি। তিনি ভোটের রাজনীতিতে জয়ী হয়ে জনপ্রতিনিধি হতে না পারলেও সিলেট বিভাগের বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে বিশেষ সম্মানের। যার কারণে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ তাকে ‘হক সাব’ বলে অভিহিত করতেন। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

এমএ হক সিলেটের বিএনপি পরিবারকে বটবৃক্ষের ন্যায় আগলে রেখেছিলেন। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা, মামলা, বিপদেআপদে সর্বদা ভরসাস্থল ছিলেন। তিনি বিএনপির জাতীয় ও স্থানীয় সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক সার্পোটসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকতেন। প্রচলিত কথা ছিল, সিলেটের ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপার্সন যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এমএ হকের মতামত নিতেন।

সিলেট নগরীর উপশহরের পাম্পের অফিস ও যতরপুরের বাসা অঘোষিতভাবে দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এমএ হক রাজনীতির পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী, দানশীল ও পরহেজগার মানুষ ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। ছেলে রিয়াসাদ আজিম হক আদনান ইংল্যান্ডের বিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে পারিবারিক ব্যবসা দেখাশুনা করছেন। পাশাপাশি রাজনীতিতে সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

এমএ হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি এবং মহান আল্লাহপাক তাকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আমিন!

মো. আব্দুল হাছিব: সহ সভাপতি, সিলেট মহানগর ছাত্রদল।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.