Sylhet Today 24 PRINT

আলো-আঁধারের পরীমণি!

রহিম আব্দুর রহিম |  ১৪ আগস্ট, ২০২১

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত

বয়স সবেমাত্র ৩ বছর, মা সালমা বেগম অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। বাবা মনিরুল ইসলাম শিশু সন্তান পরীমণিকে নিয়ে মহাবিপদে পড়েন। চাকুরিজীবী বাবা মনিরুল পরীমণির মঙ্গল কামনায় নানা সামসুল হক গাজীর কাছে রেখে আসেন। এখানেই লালিত-পালিত হন মা হারা পরীমণি। যার আসল নাম সামসুন্নাহার স্মৃতি।

১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের শিংখালি গ্রামে যার জন্ম। মা মারা যাওয়ার ২০ বছর পর পরীমণি বাবাকে হারান। সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরীমণির মা আগুনে পুড়ে মারা যান এবং বাবা ব্যবসায়িক কারণে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন। নিহত বাবা একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন। শৈশব-কৈশোর থেকেই পরীমণি বাবা-মার আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হন। সে নানার বাড়ি দক্ষিণ সিংহখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে। ওই বিদ্যালয়ে তার নানী মরহুম ফাতেমা বেগম প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

ওই স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ‘ছোট থেকেই পরীমণি ভাল ছাত্রী ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। পরীমণির পর এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তি পায়নি। মা হারা এতিম শিশুটিকে এলাকার সবাই আদর করত।’ পাড়া-প্রতিবেশীর আদরের পরীমণি বেড়ে ওঠে সহজ-সরলভাবে। সে যে অপরাধ জগতের মানুষ নয়, তার প্রমাণ মিলেছে গত ১৩ আগস্ট ৪ টা ১২ মিনিটে। আদালত থেকে তাকে যখন প্রিজন ভ্যানে করে জেলখানাতে নেওয়া হচ্ছিল, ওই মুহূর্তে পরীমণি প্রিজন ভ্যান দেখে বলেছিল, ‘নাইস গাড়ি।’ সে যে সবকিছুই সুন্দর দৃষ্টিতে দেখত, এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তা বলার যোগ্যতা আমার নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, ‘কেন তার বাসায় মদ?’

পরীমণি একজন নায়িকা হওয়ায় বিভিন্ন ক্লাব, পার্টিতে তার ডাক পড়ত। যেখানে সে নেচে-গেয়ে অর্থ উপার্জন করেছে সম্ভবত। যে যুবতি জেলাখানার গাড়ি দেখে ‘নাইস’ বলতে পারে, সে যে অন্ধকারের মানুষ নয় তা কারো বুঝতে বাকি থাকে না। পরীমণি তার উপার্জিত অর্থে মদ, নেশায় মেতে ছিলেন কি না তার প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। তবে বাসা থেকে র‌্যাব মদের বোতল উদ্ধার করেছে।

এই নায়িকা তার উপার্জিত অর্থে অসহায় মানুষদের সেবা করেছে এমনটি জানা গেছে তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে। পরীমণি কাহিনী দেশ-বিদেশে বর্তমানে ‘হটকেক’। বাসায় তল্লাশি করেছে দেশের স্বনামধন্য দক্ষ বাহিনী র‌্যাব, মামলা ডিবি হয়ে সিআইডিতে। কেউ নেই তার পাশে। দেশের ১৭ জন বুদ্ধিজীবী তার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছেন। এই মুহূর্তে ২৮ বছর বয়স্ক ‘নাইস মনে’র কুৎসিত অঙ্গনে ভাইরাল হওয়া পরীমণির একমাত্র ভরসা আইন-আদালত এবং ন্যায়বিচার।

পরীমণি অপরাধী হলে বিচার হোক। বিচারের আগেই যেন অবিচার তাকে জর্জরিত না করে, তা নিশ্চিত হোক।

রহিম আব্দুর রহিম: শিক্ষক ও নাট্যকার।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.