Sylhet Today 24 PRINT

শ্রদ্ধা ও স্মরণ: নমিতা গোস্বামী

মিহিরকান্তি চৌধুরী |  ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১

সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা, সংগীতশিল্পী, অমায়িক চরিত্রের অধিকারী সর্বজনশ্রদ্ধেয় নমিতা গোস্বামী নিউমোনিয়া রোগে কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর বুধবার ভোরবেলা লোকান্তরিত হয়েছেন। গতপরশু (বুধবার) সকালে ফেসবুক খুলে এই দুঃসংবাদ জেনে মনে হলো প্রচণ্ড একটা ঝড় বয়ে গেল। এত ঘনিষ্ঠ, নিকটজনের মৃত্যু মেনে নিতে সমস্যা হয়। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতার পাশাপাশি সংগীতচর্চার সাথেও যুক্ত ছিলেন। পাকিস্তান আমল থেকেই তিনি বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। তাঁর দক্ষতার কেন্দ্রে ছিল নজরুলগীতি ও উচ্চাঙ্গসংগীত।

নমিতা গোস্বামীর ব্যাপক পরিচিতি ছিল নমিতাদি হিসেবে। ছাত্রী মহলে তাঁর জনপ্রিয়তা ভাবনারও অতীত। যেকোনও জনকে খুব সহজে আপন করে নিতে পারতেন। তাঁর সাধারণ কথা বলাতেও সুরের সন্ধান ছিল, সংগীতের সন্ধান ছিল। আমার সাথে তাঁর পরিচয় পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর আগে। তাঁর মেয়ে মধুছন্দা আমার ছাত্রী ছিল। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী, গুণি মেয়ে। মেয়ের জামাতা দেবদাস ভট্টাচার্য পুলিশ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ডিআইজি অব পুলিশ হিসেবে কর্মরত। অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। ২০০১ সালে আমার একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের তৎকালীন মান্যবর স্পিকার জনাব হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর দায়িত্বঘনিষ্ঠ হিসেবে তাঁর কর্তব্যপালনকালে আমার সাথে ঘনিষ্ঠতা হয়। দেবদাস ভট্টাচার্যের সাথে আরেকটি পরিচয়সূত্র বের হয়। তাঁর বাবা প্রয়াত দুর্গেশচন্দ্র ভট্টাচার্য আমাদের বড়লেখা গার্লস হাইস্কুলের খ্যাতিমান পণ্ডিত ছিলেন।
   
নমিতাদির স্বামী বনবিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। সৎ ব্যক্তি হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। অত্যন্ত সহজ, সরল জীবনযাপন করতেন। অত্যন্ত সদাশয় ব্যক্তি ছিলেন। মেয়ের বিয়েতে নিজে এসে নিমন্ত্রণ করেছেন। পরম্পরাগত মূল্যবোধে বিশ্বাস করতেন। তাঁদের ছোটো ছেলে গৌতমের বিয়েতেও নিমন্ত্রণ করেছেন। আমরা তাঁদের হার্দিক সম্ভাষনে গৌরবান্বিত বোধ করেছিলাম। বড়ো ছেলে শুনেছি কানাডায় থাকেন। তাঁর সাথে আমার পরিচয় হয়নি। আমার ছোটো ভাইয়ের বিয়েতেও নমিতাদি এসেছিলেন। ব্যক্তির বাইরে দুই পরিবারের মধ্যেও যোগাযোগ ছিল। তিনি ছিলেন আমার বড়ো বোনের মতো। আমার এক সহোদরার নামও নমিতা। সেই নামের সাথে ছোটোবেলা থেকেই আমার পরিচিতি।  

শুনেছি নমিতাদির শশুড়বাড়ির আদিনিবাস ময়মনসিংহের মোহনগঞ্জ এলাকায়। ময়মনসিংহের সাথে আমাদের জীবননৈকট্য ভাবনার দিক থেকে তাঁকে আরও নিকটজন ভাবাত। তিনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড ছিলেন। আমার লেখাগুলো নিয়মিত পড়তেন। মাঝেমধ্যে ফোনও দিতেন। অনেক লেখার প্রত্যক্ষ প্রশংসা করতেন। আমার বাচ্চাদের সআশীর্বাদ খোঁজখবর নিতেন। তাঁর মতো পিশির স্নেহে আমার বাচ্চারা ধন্য হত।

নমিতাদির লোকান্তর সমাজ ও সংস্কৃতির এক ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। কীভাবে? তিনি একদিকে যেমন সংসারী ছিলেন তেমনি অন্যদিকে ছিলেন শিক্ষক, সংগীত শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী। আজকাল অনেক গুণি সংগীত শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী থাকলেও এ ধারায় সংসারীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, বাড়ছে কর্পোরেট শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীর সংখ্যা। সেটাও ভালো তবে আগেরটাও যে ভালো নয় তা নয়।

নমিতাদির মতো একজন বহুমাত্রিক প্রতিভা ও ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে আমি, আমার স্ত্রী পুত্রকন্যা সকলেই শোকাহত। আমরা কী আঘাত পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। শুধু প্রার্থনাই করতে পারব।

নমিতাদি, আপনার মৃত্যু হয়নি। শুধুই লোকান্তরিত হয়েছেন, প্রস্থান করেছেন। থাকবেন আমাদের ও অগণিত শিক্ষার্থী এবং ভক্ত ও সংস্কৃতিকর্মীর হৃদয়ে। নতুন ভুবনে ভালো থাকুন। সর্বশক্তিমান আপনার সেই স্থানটি নিশ্চিত করবেন নিশ্চয়ই।

মিহিরকান্তি চৌধুরী : লেখক, অনুবাদক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.