Sylhet Today 24 PRINT

শেখ হাসিনা ফিরেছিলেন বলেই বাংলাদেশ এগিয়েছে

ড. কাজী এরতেজা হাসান |  ১৭ মে, ২০২২

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নরঘাতকরা ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। এ সময় বিদেশে থাকায় আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে ঘাতকগোষ্ঠী। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমনই ক্রান্তিলগ্নে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করা হয় জাতির জনকের কন্যার হাতে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বকে ভয় পায় ঘাতকগোষ্ঠী। খুনি সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করতে না দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন শেষে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। দেশে ফিরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

১৯৮১ সালের ১৭ মে ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরে বাংলা নগরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেলসহ সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’

ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ন্যায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তখন এদেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণে বাস্তবায়ন করেছেন বহুমাত্রিক উদ্যোগ। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতি অগাধ প্রেম এবং অক্ষয় ভালোবাসাই হলো তার রাজনৈতিক শক্তি।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটের এই ক্রান্তিলগ্নেও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জনগণের জীবন-জীবিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিঃস্বার্থভাবে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে জাতির অভিভাবক হিসেবে ৩১-দফা নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। জনগণের জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ। করোনা সংকটের সময় কেউ যেন না খেয়ে থাকে সেজন্য ব্যাপক খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করেছেন। ৫০ লাখ পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

আজ থেকে ৪০ বছর আগে উদারনৈতিক প্রগতিশীলতার রাজনীতির পরিবেশ ফিরিয়ে, দেশ ও জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য, জননী শেখ হাসিনা ত্যাগ করেছিলেন সন্তানদের মায়া পর্যন্ত! মাতৃসঙ্গ বঞ্চিত তাঁর দুই সন্তান তখন বিদেশে ছোট বোন রেহানার কাছে। গণতন্ত্র আর সুবিচার নিশ্চিত করার যুদ্ধে তখন বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রতিকূল রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন। বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের সংকল্পে শেখ হাসিনার স্বদেশে ফেরার দিনটি ইতিহাসের এক বড় সূচনাক্ষণ নতুন অধ্যায়ের। পরতে পরতে সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু কন্যার রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা ফেরে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের হাতে। দলীয় প্রধান হিসেবে ইতিহাস তার কাঁধে সমর্পণ করেছিলো জাতির কাণ্ডারি হবার দায়ভার। সেই থেকে দারিদ্র্যক্লিষ্ট এই জাতিকে মুক্তি দিতে বিরতিহীন যাত্রা একজন শেখ হাসিনার। দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে সবার বাসোপযোগী করা প্রগতির স্বপ্ন বাস্তবায়নের সেই যাত্রা রাজনৈতিক-পারিপার্শ্বিক আর প্রাকৃতিক শত প্রতিকূলতাতেও হার মানাতে পারেনি দৃঢ়চেতা এই নেত্রীকে। প্রত্যাবর্তনের চার দশকে ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে বরাবরই দেখা গেছে কল্যাণমুখী মানসিকতায় যেকোনো দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সব সামলে নেওয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভূমিকায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য সুকৌশলে তিনি যুদ্ধ করে চলেছেন প্রাকৃতিক আর মনুষ্যসৃষ্ট সব বাধা-বিপত্তির বিপরীতে। পিতৃহারা শেখ হাসিনা যখন ঢাকায় ফিরেছিলেন সে সময়টাতেও প্রকৃতি ছিলো এক রুদ্র মূর্তির বার্তাবরণে। কালবৈশাখীর ঝড় সামলে চলার শুরু হয়তো সেই থেকেই। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা চতুর্থ বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজও মুখোমুখি এক অদৃশ্য ঝড়ের। নানান সূচকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল সত্যিকারের সোনার বাংলা হয়ে উঠতে, ঠিক তখনই বৈশ্বিক মহামারির বাধা এসে হাজির। সংক্রমণ প্রবণ এক জীবাণুর (করোনাভাইরাস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন পুরো জাতি। এর মধ্যেও থেমে নেই এর করাল গ্রাস থেকে উত্তরণের চেষ্টা; যার নেতৃত্বও দিচ্ছেন সেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যখন দেশে ক্রমে বেড়েই চলেছে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ঠিক এর শুরু থেকেই এ যুদ্ধের জন্য দেশবাসীকে প্রস্তুত করেছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। সংক্রমণ রোধে অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে আসবে জেনেও, দীর্ঘ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মানুষকে নিরাপদ করার প্রয়াসে নির্দেশ দেন ‘ঘরে থাকার’। অর্থনীতি থেকে শুরু করে পরিবর্তিত সামাজিক বাস্তবতায় সবকিছু থমকে দেওয়ার বৈশ্বিক এই দুর্যোগেও বিরতিহীন যিনি শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। অচেনা এই দুর্যোগের ধাক্কা সামাল দিতে সমাজের সব শ্রেণির জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রতিনিয়তই ‘কিছু না কিছু’ বন্দোবস্ত করে চলেছেন তিনি। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে যার নেতৃত্বে, তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের এই দিনে তিনি ফিরে এসেছিলেন প্রিয় পিতৃভূমিতে বলেই তিনি আজ অসহায় মানুষের ত্রাতা। তিনিই দিক-নির্দেশক, অর্থনৈতিক মুক্তির অগ্রযাত্রায় বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ভয়কে জয় করে সেদিন তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ এই করোনা সংকটেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের অগ্রনায়ক তিনি। তাঁকে ঘিরেই সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। আমাদের অভিবাদন গ্রহণ করুন প্রিয় নেত্রী। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

ড. কাজী এরতেজা হাসান: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.