Sylhet Today 24 PRINT

ফকিহ-মনীষীদের চোখে শবে বরাত

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান |  ০৬ মার্চ, ২০২৩

ইসলামি আইনশাস্ত্রবিদদের ‘ফকিহ’ বলা হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং অন্যান্য ফকিহ-মনীষীও শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে মূল্যবান মন্তব্য করেছেন।

ফিকহে হানাফির চোখে: আল্লামা শামি, ইবনে নুজাইম, আল্লামা শরমবুলালি, শায়খ আবদুল হক দেহলবি, মাওলানা আশরাফ আলী থানবি, মাওলানা আবদুল হক লখনবি, মুফতি মুহাম্মদ শফিসহ উলামায়ে হানাফিয়ার অভিমত হলো- শবে বরাতে শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী রাত জেগে একাকী ইবাদত করা মুস্তাহাব। তবে এর জন্য জামাতবদ্ধ হওয়া যাবে না। (আদ-দুররুল মুখতার: ২য় খণ্ড, ২৪-২৫ পৃষ্ঠা/ আল বাহরুর রায়েক: ২য় খণ্ড, ৫২ পৃষ্ঠা/ মারাকিল ফালাহ: ২১৯ পৃষ্ঠা)

ফিকহে শাফেয়ির চোখে: ইমাম শাফেয়ি (রহ.) এর মতে, শাবানের ১৫তম রাতে অধিক পরিমাণ দোয়া কবুল হয়ে থাকে। (কিতাবুল উম্ম: ১ম খণ্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা)

ফিকহে হাম্বলির চোখে: ইমাম ইবনে মুফলি হাম্বলি (রহ.), আল্লামা মনসুর আল বাহুতি, ইবনে রজর হাম্বলি প্রমুখ হাম্বলি উলামায়ে কেরামের মতে শবে বরাতে ইবাদত করা মুস্তাহাব। (আল মাবদা: ২য় খণ্ড, ২৭ পৃষ্ঠা/ কাশফুল কিনা: ১ম খণ্ড, ৪৪৫ পৃষ্ঠা)

ফিকহে মালেকির চোখে: ইবনে হাজ মালেকি (রহ.) বলেন, সালফে সালেহিনরা এ রাতকে যথেষ্ট সম্মান করতেন এবং এর জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। (আল মাদখাল: ১ম খণ্ড, ২৯২ পৃষ্ঠা)

ইমাম ইবনে তাইমিয়ার চোখে: আবদুল আব্বাস আহমাদ ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ১৫ শাবানের রাতের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক মারফু হাদিস এবং আসারে সাহাবা বর্ণিত রয়েছে। এগুলো দ্বারা এ রাতের ফজিলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। সালফে সালেহিনের কেউ কেউ এ রাতে নফল নামাজের ব্যাপারে যতœবান হতেন। আর শাবানের রোজার ব্যাপারে তো সহি হাদিসসমূহই রয়েছে। (ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম: ২য় খণ্ড, ৬৩১ পৃষ্ঠা)

মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) এর চোখে: হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) বলেন, হাদিসে শবে বরাতের তিনটি কাজ সুন্নাত অনুযায়ী করাকে সওয়াব ও বরকত লাভের উপায় বলা হয়েছে।

প্রথমত, ১৫ তারিখ রাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা। সঙ্গে সঙ্গে গরিব-মিসকিনদের কিছু দান করে সে দানের সওয়াবটুকু ওই মৃতদের নামে বখশে দিলে আরও ভালো হয়। সেই মুহূর্তে হাতে না থাকলে, অন্য সময় গোপনে কিছু দান করে দেওয়া উচিত।

দ্বিতীয়ত, রাত জেগে একা একা বা বিনা দাওয়াতে জড়ো হয়ে যাওয়া দু’চারজনের সঙ্গে ইবাদতে মশগুল থাকা।

তৃতীয়ত, শাবানের ১৫ তারিখ নফল রোজা রাখা।

মুফতি তাকি উসমানির চোখে: শায়খুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানি (দা.বা.) বলেন, ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, নফল ইবাদত এমনভাবে করবে যে, সেখানে কেবল তুমি আছ, আর আছেন আল্লাহ। তৃতীয় কেউ নেই। সুতরাং যে কোনো নফল ইবাদতের ক্ষেত্রেই শরিয়তের অন্যতম মূলনীতি হলো- এতে জামাত করা মাকরুহে তাহরিমি ও নিষিদ্ধ। (ইসলাহি খুতুবাত: ৪র্থ খণ্ড, ২৬৮ পৃষ্ঠা)

ইমাম নাসিরুদ্দিন আলবানির চোখে: আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দিন আলবানি (রহ.) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘আস-সিলসিলাতুস সহিহাহ আল মুজাল্লাদাতুল কামিলাহ’ গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডের ১১৪৪ নং অধ্যায়ের ২১৮ নম্বর পৃষ্ঠায় শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস এনে যে মত ব্যক্ত করেছেন তা হলোÑ হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, অর্ধ শাবানের রাতে (শবে বরাতে) আল্লাহ তায়ালা তাঁর সব মাখলুকের প্রতি মনোযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: হাদিস ৫৬৬৫, আল-মুজামুল আওসাত: হাদিস ৬৭৭৬, আল-মুজামুল কাবির: হাদিস ২১৫, সুনানে ইবনে মাজা: হাদিস ১৩৯০)

আলবানি (রহ.) তাঁর সিলসিলাতুস সহিহার তৃতীয় খণ্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন, ‘এই হাদিসটি সহি। এটি বিভিন্ন সূত্রে সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন, যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন মুয়াজ বিন জাবাল (রা.), আবু সালাবা (রা.), আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.), আবু মুসা আশয়ারি (রা.), আবু হুরায়রা (রা.), আবু বকর সিদ্দিক (রা.), আউফ বিন মালিক (রা.), আয়েশা (রা.) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম।

উপরে বর্ণিত সবক’জন বর্ণনাকারীর হাদিস আলবানি (রহ.) তাঁর কিতাবে আনার মাধ্যমে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি বলেন, ‘সারকথা হলো, নিশ্চয়ই এই হাদিসটি এসব সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর সহি হওয়া এর থেকে কমসংখ্যক বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়...। আর শায়েখ কাসেমি প্রণিত ‘সলাহুল মাসাজিদ’ গ্রন্থের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় ‘শাবানের অর্ধ মাসের রাতের ফজিলত সম্পর্কে কোনো হাদিস নেই’ মর্মে যা বর্ণিত হয়েছে, সেই বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যাবে না। যদি কেউ তা মেনে নেন সে হবে ঝাঁপিয়ে পড়া (একরোখা) স্বভাবের, আর তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও গবেষণা-উদ্ভাবনের কোনো যোগ্যতাই নেই!

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.