Sylhet Today 24 PRINT

বাপ ‘বনাম’ উস্তাদ

আতিকুর রহমান নগরী |  ১৪ আগস্ট, ২০২৫

‘বাপে বানায় ভূত, উস্তাদে বানায় পুত’ এই প্রবাদটির সাথে আমাদের পরিচয় অনেক আগের। তাই নতুন করে তারিফ, গরজ-মাওজু টেনে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। সকল মা-বাবারাই সন্তানদের নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। আদর-সোহাগ দিয়ে আগলে রাখেন। সন্তানের আকাশ ছোঁয়া চাওয়া-পাওয়াও মেটানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকেন। পড়ালেখার ব্যাপারেও অনেক সময় মা-বাবারা সন্তানের প্রতি আদর সুলভ খামখেয়ালি ভাব প্রদর্শন করেন। অতি আদর আর আহ্লাদ পেয়ে অনেক সন্তানরা ‘ননীর পুতুল’’ হয়ে ‘সো পিস’ সেজে ডিসপ্লে হয়ে থাকে। আমাদের মা-বাবা সহ বড়দের মুখ থেকেও এই প্রবাদটি শুনা যায়। কেন? কী কারণে জন্মদাতা বাবার বেলায় এমন প্রবাদের আবিস্কার? বেশক এর পেছনে যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে নতুবা এমনটা হওয়ার তো কথা নয়? অতি আদর আর লাগামহীন প্রশ্রয়ের ফলে সন্তানেরা পড়ালেখার প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়বে। সভ্য সমাজ রঙিন চশমা লাগিয়ে তার দিকে নযর দিবে। তার চলাফেরা হবে অভদ্র-বখাটেদের মত। তার ব্যবহার হবে পশুসুলভ। প্রেতাত্মা তাকে ঘিরে রাখবে। এতে সে ভূতই হয়। অতএব উস্তাদের উপর নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ জীবন।

মা-বাবা সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য উস্তাদের হাতে সপে দেন তাদের আদরের সন্তানকে। ব্যাস! এতেই তাদের দায়িত্ব শেষ নয়। বরং তার পড়ালেখার খোঁজ-খবর রাখা, তার পেছনে নজরদারিকে শক্তিশালী করাও তাদের দায়িত্বের আওতাভুক্ত। যাই হোক, হাটি হাটি পা পা করে সন্তান কেরাআত আর কিতাবাত এর ময়দানে এগুচ্ছে। কামিয়াবি আর নাকামের দরমিয়ানি হালে তার ‘ছাত্র জীবন’ পার হচ্ছে। উস্তাদও তাকে ভাল, যি আখলাক তথা আদর্শবান ছাত্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে মেহনতি মিশন আখেরাতের কথা ভেবে, সদকায়ে জারিয়া মনে করে, নিঃস্বার্থ ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন।

কচি-কাচাদের হরেক রকমের দোষ থাকে, আর থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই সকল দোষের প্রতি নযর না দিয়ে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে উস্তাদ এগুলো দেখেও না দেখার ভান করেন। তবে অমার্জনীয় আর কুরুচিপূর্ণ স্বভাবের ইযহার হলে শাসনের লাঠি দিয়ে তা সুদরে সামনে চলার সাজেশন দেন উস্তাদ মহোদয়।

মাদারিসে কাওমিয়ার আসাতিযায়ে কেরামরাই এই প্রবাদের বেশি হকদার। জানি কোন ধরণের এশকাল আর উযর-আপত্তি ছাড়া আমার সাথে আপনারা সহমত পোষণ করবেন। আর করাটাই বাঞ্ছনীয়। তবে অন্ধ ভক্ত হয়ে এগুলোর প্রতি আক্বিদা রাখা ঠিক হবে না। এতটা অন্ধ মুরিদ হওয়া ঠিক না। হাল জামানার উস্তাদরা কি আসলেই এর হকদার নাকি এ নিয়ে কিছু চুলচেরা বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। যদি থাকে তবে করা হচ্ছে না কেন? কীসের ভয়ে? বদ দুআ আর নফরতের ভয়ে?

আমরা কি এতটাই দুর্বল হয়ে গেলাম। সত্য বলার, আর সত্য লেখার সাহসটুকু হারিয়ে ফেললাম। আমাদের কি অভিভাবক নেই? নেই কি কোন মুরব্বি? তদারকির মত কেউই নেই কি আমাদের? আছে তবে আর শঙ্কা কীসের? তাদরে কাছে বলবো মনের সব বেদনা।

কালামুল্লাহ শারীফের একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,‘‘লা তারফাউ আসওয়াতাকুম ফাওক্বা সাওুতিন নাবিয়্যি’’ প্রিয়নবী সা. তো মায়ার উম্মতকে ছেড়ে চলে গিয়ে রেখে গেছেন ‘ওরাসাতুল আস্বিয়া’ তথা উলামায়ে কেরামদের। অতএব; মুহতারাম উস্তাদের সামনে উচ্চস্বরে বাচন ভঙ্গি থেকে শাগরেদকে বেচে থাকা ওয়াজিবের দরজায়। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে নবীয়ে করীম সা. বলেন, ‘আকরিমু আসহাবী’ আমার সাহাবায়ে কেরামকে তোমরা সম্মান করো। আসহাবে রাসুলকে সম্মানের পাশাপাশি নবীর ওয়ারিসদের ও সম্মান করা জরুরী।

আগে বলেছিলাম আমাদের আছেন মুরব্বি। যারা শুধু আমাদের নয় বরং গোটা জাতির মুরব্বি। তবে আর বলতে বাধা কিসের? যদি আমাদের কথা ভুল হয়, কথার মধ্যে যদি বেআদবির আলামত পাওয়া যায়। এতে যদি গোস্তাখির ইযহার হয় তবে আমাদের অভিভাবকরা যে শাস্তি দিবেন আমরা তা মাথা পেতে নিবো। তারা যদি কান ধরে উঠবস করতে বসেন তাও করতে রাজি, যদি আমাদের কথার মধ্যে পান কোনো ফাঁকিবাজি। তারাই তো আমাদের গুরুজন। আমাদের ভুল শুধরে তো তারাই দিবেন।

তবে শুনুন, আমাদের প্রত্যেকের উস্তাদ আমাদের জন্য ‘ছরে তাজ’ তথা মাথার মুকুট সমতুল্য। আমাদের তরে তার যে নিঃস্বার্থ মেহনত আছে তার নাশুকরী করলে খোদ আল্লাহ তাআলা নারাজ হয়ে যাবেন। অতএব; উস্তাদের উপস্থিতি-অনুপস্থিতিতে, উস্তাদের সামনে-পিছনে মোটকথা হর হালতে তা কৃতজ্ঞ বান্দার মতো বলবো তিনি আমার সেই উস্তাদ যিনি তার জীবনের সর্বস্ব কুরবানি দিয়ে আমার জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে আপ্রাণ চেষ্টা-সাধনা করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পরিবেশ আর পরিস্থিতি, ইয়ামিনী আর শিমালীর প্রবল হাওয়ায় তার চেহারা-সুরত পাল্টে গেছে। দুনিয়ার রঙ্গ-বেরঙ্গের নম্বর ছাড়া আবালদের আবুল তাবুল বকবকানিতে তার বিবেক নামের বিচারপতি প্রায় অসুস্থ হয়ে বিছানায় শীতল পানির তালাশে ব্যকুল হয়ে আছে। তিনি এখন যা করছেন বাহ্যিক দৃষ্টিতে যদিও তা অনেক লাবণ্যময়ীতায় রূপ নিয়েছে। হাক্বিক্বতে হাল ঠিক তার বিপরীত।

শাগরেদ বড় হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাকে কিছুটা হলেও হাল জামানার হাল-যুলহাল সবগুলো আঁচ করার মতো বিবেক দিয়েছেন। তবুও উস্তাদ তো উস্তাদই। মুহতারাম উস্তাদের চেয়ে বেশি বুঝার তো প্রশ্নই উঠে না। অনেক সময় শুধু হা-করে তার মুবারক চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখে যায় তার আ’মাল আর আফআল সমূহ। আদবের সুরে কিছু বলতে গেলে মাঝে মধ্যে বকাঝকাও পড়ে তার উপর। এর মধ্যে আবার ‘‘বাঁশ থেকে কঞ্চি’’ বড় হয়ে যাওয়ার ভয়ে সুকুতি ইখতিয়ার করে চলে অনেকক্ষণ।

আপনারা হয়ত ভাবছেন আমাকে আবার কোন ভাইরাসে আক্রমণ করেছে যে, হঠাৎ করে ফিলিস্তিন বিজয়ের সংবাদ শুনে কোথায় হামদে বারি তাআলা পাঠ করবে, তা না, সে কিনা এখন উস্তাদদের নিয়ে সমালোচনা করতে শুরু করেছে। তা অবশ্যই ঠিক, ফাতহে ফিলিস্তিনের খবরে আমি হরফান কালিমাতুশ শুকুর আদায় না করে লফযান করেছি। হে আল্লাহ! আপনি তাদের এ বিজয়কে চিরস্থায়ী করে দিন।

তালিবুল ইলিম থাকাবস্থায় উস্তাদ কত স্বপ্নে বুনলেন আমাদের নিয়ে। আমরাও সেই স্বপ্নকে বাস্তবতার তুলি দিয়ে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সে অনুযায়ী মেহনত করে আশাতীত একটা নতিজা করেছি আখের ইমতেহানে। আপনারা হয়ত: পেরেশান হাল অতিক্রম করছেন আমার লেখা পড়ে। যে, তিনি হয়ত: এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন তাই এমন হৃদয় বিদারক কলম চালনা। তবে তিনি কেন এখানে ‘আমরা’ ‘‘জমা’’র সিগাহ ব্যবহার করলেন।

বহুবচন এজন্য ব্যবহার করলাম যে শুধু আমি নয়, আমার মত আরও অনেক আছেন যারা এমন পরিস্থিতির স্বীকার। তাই সবার কথা ভেবে বহুবচন ব্যবহার করে নিজের ব্যথা হালকা করলাম। উস্তাদ মহোদয়ের কাছে আবারো করজোড়ে ক্ষমা চাই সব ভুলের তরে।

  • আতিকুর রহমান নগরী: আলেম, সাংবাদিক, কলামিস্ট

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
✉ sylhettoday24@gmail.com ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.