Sylhet Today 24 PRINT

শাবিপ্রবি : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সূতিকাগার

আব্দুল্লাহ আল নোমান |  ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ঋতুরাজ বসন্ত শীতের হিমেল হাওয়াকে সরিয়ে প্রকৃতিতে নিজের অবস্থান ঘোষণার প্রাক্কালে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) পা রাখলো ২৫ বছরে।

প্রতিষ্ঠাতা-উপাচার্য খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর হাত ধরে বাংলা ১৩৯৭ সনের ১ ফাল্গুন (১৯৯০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি) পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং অর্থনীতি বিভাগ নিয়ে একাডেমিক যাত্রা শুরু করা বর্তমানে রয়েছে ২৬টি বিভাগ। ‘অন্তরাত্মা’কে নীতিবাক্য ধারণ করা দেশের অন্যতম সরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়টি সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও দুটি পাতা-একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট শহর হতে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কুমারগাঁওয়ে অবস্থিত।

বাংলাদেশের অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সমন্বিত সম্মান কোর্স বা সেকেন্ড মেজর কোর্স (যার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী দুটি বিভাগ হতে সনদ নিতে পারে) চালু করার পাশাপাশি ১৯৯৬-৯৭ সেশন থেকে স্নাতক কোর্সে আমেরিকান সেমিস্টার পদ্ধতির প্রবর্তন করে। বাংলাদেশের একমাত্র সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান যা ২০১৩ সাল থেকে চালু হয়ে এ পর্যন্ত সফলভাবে তথ্য সেবা প্রদান করছে। এছাড়া ওয়েবমেট্রিক্স র্যাং্কিংয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বে খুব ভাল অবস্থান দখল করে আছে।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একাডেমিক সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিজ, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি, ফেডারেশন অব দ্য ইউনিভার্সিটিস অব দ্য ইসলামিক ওয়ার্ল্ডের সাথে অন্তর্ভুক্তি এ প্রতিষ্ঠানটিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এসএমএসভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে তা উদ্বোধন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রমসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে যা বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক। এ উদ্ভাবনের জন্য, বিশ্ববিদ্যালয় ২০১০ সালে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিযোগিতায় ‘এম-বিলিয়ন্থ পুরস্কার’, ই-কন্টেন্টে ‘জাতীয় পুরস্কার’ এবং ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড- ২০১০’ লাভ করেছে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার শাবিপ্রবিতে ‘ড. ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবন’ নির্মাণ করেছে, যা সম্প্রতি উদ্বোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য যে, প্রতিষ্ঠানটি দেশের সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পুরো ক্যাম্পাসে ওয়াই-ফাই চালু করে।

রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ‘এসিএম আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিংয়ে’র চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশ থেকে শাবিপ্রবির টিমের গত কয়েক বছর টানা অংশগ্রহণ; ওয়েবোমেট্রিকস র্যাং কিংয়ে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া; দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলা ভাষার প্রথম সফটওয়্যার ‘মঙ্গল দ্বীপ’ উদ্ভাবন; বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ও কোর্স ফি জমা দেবার সুযোগ; বাংলাদেশের প্রথম ভার্সিটির বাসের অবস্থান জিপিএস প্রযুক্তির নিজেদের মোবাইল থেকেই জানতে পারা; নাসা, মাইক্রোসফট, গুগলের মতো বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে শাবিপ্রবি গ্রাজুয়েটদের চাকরিপ্রাপ্তি; মানবহীন বিমান (ড্রোন) আবিষ্কার; রোবট আবিষ্কার ও বিভিন্ন রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় শাবিপ্রবি টিমের বাজিমাত করা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানটির বড় অর্জন।

একাডেমিক কার্যক্রম বছরে ২টি সেমিস্টারে ক্রেডিট পদ্ধতিতে সম্পন্ন হওয়া এ প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীরা আন্ডারগ্রাজুয়েট, গ্রাজুয়েট এবং পোস্টগ্রাজুয়েট পর্যায়ে শিক্ষালাভ করতে পারে। শাবিপ্রবি বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ম্যাথ অলিম্পিয়াড/ ইনফরমেট্রিক্স অলিম্পিয়াডে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরস্কৃত মেধাবীদের ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত পরীক্ষা ব্যতীত ভর্তির সুযোগ পায়।

বাংলাদেশের অন্যতম গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন শাস্ত্রে গবেষণার পাশাপাশি রয়েছে কয়েকটি প্রসিদ্ধ ইন্সটিটিউট। পিজিডি আইটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট, ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সেন্টার প্রভৃতি এই প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করেছে। সম্প্রতি ‘আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট’ স্থাপনের অনুমতি পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। শাবিপ্রবিতে অর্ধশতাধিক সংগঠন বিদ্যমান। গান-কবিতা-নাটক-সাহিত্য সবই আছে এখানে।

স্বল্প সময়ের ব্যবধানে শাবিপ্রবির এতদূর এগোলেও কিছু সমস্যা দূর করতে পারলে এ গতি আরো ত্বরান্বিত হবে নিঃসন্দেহে। প্রায় বারো হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বর্তমানে মাত্র পাঁচটি ছাত্রাবাস (ছাত্র হল ৩টি ও ছাত্রী হল ২টি) রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শিক্ষকদের জন্য ডরমিটরি এবং আবাসিক সুবিধার অপ্রতুলতা শিক্ষা কার্যক্রমের গতি কিছুটা মন্থর করে দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠার ২৫বছরে পা রাখলেও তৈরি করা হয়নি সীমানাপ্রাচীর। ফলে অনেকটা অরক্ষিত রয়ে গেছে ৩২০ একরের এ ক্যাম্পাস।

এসব সমস্যা সমাধান করতে পারলে কাজে আসবে আরো গতি, পাশাপাশি প্রযুক্তি শিক্ষার সূতিকাগার পৌঁছুবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। উন্নয়ন ঘটবে দেশের সার্বিক শিক্ষা পরিস্থিতির।

আব্দুল্লাহ আল নোমান : শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.