Sylhet Today 24 PRINT

ক্রিকেট কি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে বৈরি করে তুলছে?

দিব্যেন্দু দ্বীপ |  ০১ এপ্রিল, ২০১৬

সৃষ্টিলগ্ন থেকে কখনই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ভালো ছিল বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। তবে সম্পর্ক উত্তরোত্তর খারাপ হচ্ছে বলেই ধরে নেওয়া যায়। এবং এই অঞ্চলের সমস্যা যে হিন্দু-মুসলিম সমস্যা তাও বলার অপেক্ষা রাখে না। সমস্যাটা ঐতিহাসিক, সাম্প্রদায়িক এবং ধর্মীয়।

প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় সে সমস্যা বেড়েছে বৈ কমে নাই। অন্য সকল সমস্যার কারণ খোঁজা যায়, কারণ পাওয়াও যায়, তবে সাম্প্রদায়িক সমস্যায় কারণ লাগে না। এক্ষেত্রে ‘ভিন্ন’ মানেই খারাপ। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান বিষয়টি আসলে তাই। এর সাথে ভারতের আধিপত্যবাদ এবং বাংলাদেশের ‘ডোন্ট-কেয়ার’ ভাব অবশ্যই প্রধান ভূমিকা রাখছে।

তবে বর্তমানে এই সবকিছু একাকার হয়ে যেন ক্রিকেট হয়ে দেখা দিচ্ছে। বলা যায় যে, ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও ভারত আধিপত্য বজায় রাখতে চাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটে এককভাবে ভারতের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব, সেটাই বা কতখানি বিশ্বাসযোগ্য? আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না যে, অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের চেয়ে ভারত শক্তিশালী, যতই তাদের কোটি কোটি ক্রিকেট সমর্থক থাকুক। কিন্তু আমরা যখনই প্রতারিত বোধ করছি, বিষয়টির সামগ্রিকতা আমরা নষ্ট করছি, ফলে চিন্তাভাবনা হয়ে পড়ছে পুরোপুরি ভারতকেন্দ্রীক।

বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে সেই বিতর্কিত আম্পায়ারিং-এর খলনায়ক ছিল পাকিস্তানের আলিম দার, কিন্তু আলিমদার ইস্যু কখনো সামনেই আসেনি।

প্রশ্ন হচ্ছে, টি২০ বিশ্বকাপের মাঝপথে তাসকিন এবং সানির বোলিং নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়েছে কিনা? অবশ্যই ঠিক হয়নি? তবে এখানে একটা বিষয় স্মরণে নিতে হবে- সমস্যা শুধু বাংলাদেশের সাথে হচ্ছে এমন নয়। মুত্তিয়া মুরালীধরনের বোলিং একশন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল, এবং মুরালী এ ধরনের অভিযোগের সবচে’ বেশি শিকার হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে। সুনীল নারাইনের ক্যারিয়ারই তো শেষ হয়ে গেল। অর্থাৎ ছোট দেশগুলো এক্ষেত্রে একটা চাপে থাকে। আবার বোলিং একশনে যে সমস্যা হতেই পারে না তাও নয়। যেহেতু ছোট দেশগুলোর প্রযুক্তি এবং ঘরোয়া ক্রিকেট অতটা গোছানো নয়, তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কিছুটা ঘাটতি থাকাটা অসম্ভব নয়। তাই সবক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দাঁড়া করানো ঠিক নয়। তবে একথা অবশ্যই অনস্বীকার্য যে তাসকিন এবং সানির বোলিং একশন নিয়ে খেলার মাঝপথে প্রশ্নতোলা অবশ্যই ন্যায্য হয়নি, তাছাড়া তাসকিনের বিষয়টি যেভাবে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে তা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে তো তাসকিনকে একরকম ফোর্স করেই বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর পুরো দায় কি আমরা ভারত কে দেব? নাকি ক্রিকেট পরাশক্তিদের দায়ী করব। শুধু ভারতকে দায়ী করায় আমাদের লাভ না ক্ষতি? মনে রাখতে হবে ভারতে আমাদের ক্রিকেট অনুরাগী কিন্তু কম নয়। তাসকিনের সমর্থনে কলকাতার বিখ্যাত দৈনিক আনন্দ বাজারে কলাম লেখা হয়েছে। একথাও মনে রাখতে হবে যে, তৎকালীন আইসিসি’র সভাপতি ভারতের জগমোহন ডালমিয়ার কারণে আমরা দ্রুত টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিলাম। তবে এগুলো অবশ্যই ভারতের জড়িত না থাকার প্রমাণপত্র নয়। আবার একথাও নিঃসন্দেহ নয় যে শুধু ভারতই আমাদের দু’জন খেলোয়াড়কে ষড়যন্ত্র করে বসিয়ে দিয়েছে।

আরেকটা বিষয়ও কিন্তু এক্ষেত্রে দাঁড় করানো যায়- এ ধরনের ষড়যন্ত্র করার ক্ষমতা যদি ভারতের থাকত, তাহলে তো তা সবচেয়ে বেশি করত পাকিস্তানের সাথে।

কিছু তথ্য এক্ষেত্রে যোগ করা যেতে পারে। তাসকিন ও সানির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী আম্পায়ার রড টাকার, তিনি অস্ট্রেলিয়ার। তাসকিন সানির বোলিং একশন অবৈধ প্রমাণ করার অব্যবহিত পরে খেলা ছিলও অস্ট্রেলিয়ার সাথে। কিছুদিন আগে নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশে খেলতে আসেনি অস্ট্রেলিয়া। তাই তাসকিন-সানি নিষিদ্ধ হওয়ার প্রেক্ষিতে শুধু ভারতকে দায়ী করে বিষোদগার করলে ভারতের কাছে এমনই একটা বার্তা পৌঁছায় যা আখেরে আমাদের জন্য আরো ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

আমাদের উচিৎ হবে আরো দায়িত্বশীল আচরণ করা এবং নিজেদের সুরক্ষার পথ নিয়ে বেশি চিন্তা করা, শুধু কথায় অন্যকে আক্রমণ করলে তাতে ক্ষতিই হয়, তা যেমন ব্যক্তিজীবন এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও।

এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.