Sylhet Today 24 PRINT

ওবামার হিরোশিমা সফর এবং বানিয়াচঙ্গের ধর্ষিতা গৃহবধুর কান্না

শিতাংশু গুহ |  ০৬ জুন, ২০১৬

ওবামা হিরোশিমা গেছেন। এরআগে কোন সিটিং মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিরোশিমা যাননি, একারণে যে তাহলে সেটাকে 'ক্ষমা চাওয়া' হিসাবে দেখা হতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা হিরোশিমায় এটম বোমা ফেলেছিলো। তাতে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ মারা যায়। আমেরিকানরা মনে করে যুদ্ধ বন্ধে ও মার্কিন সেনাদের জীবন বাঁচাতে ঐ বোমার প্রয়োজন ছিলো, যদিও কাজটি 'গর্হিত'। এযাত্রায় ওবামা ভিয়েতনামও গেছেন। কিউবা সফর বা হাভানার সাথে সু-সম্পর্ক এখন পুরানো ঘটনা। একদা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিউবা বা ভিয়েতনামের সম্পর্ক কেমন ছিলো তা সবার জানা, এসময়ে ওবামা 'ছোট হয়ে আসছে' পৃথিবীতে চিড় ধরা সেই সম্পর্কটায় প্রলেপ দেয়ার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ক'দিন আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেত্তানেহু এসেছিলেন ওয়াশিংটনে। ওবামা তারসাথে বসতে চেয়েছিলেন, নেত্তানেহু বসেননি। বিদায়ী প্রেসিডেন্টের সাথে কে-ই বা বসতে চায়? জাপানে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিশ্বনেতৃবৃন্দের ছবি ও সংবাদ উত্সাহব্যঞ্জক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রিয়াদ সফর এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে প্রকাশ্য সমর্থন আদায় করা সু-সংবাদ। ৮ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ওয়াশিংটনে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এ সুযোগ সবার হয় না, এবং কোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্যেও এটা প্রথম। ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক এখন যেকোন সময়ের চেয়ে ভালো। ভারত কি ন্যাটোয় যোগ দিচ্ছে? সোনিয়া গান্ধী সদ্য মোদিকে 'শাহেনশাহ' বলে কটুক্তি করেছেন। ক্ষমতা গ্রহনের দুই বছরের মাথায় মোদী ব্যাটে-বলে ভালোই খেলছেন বলে মনে হয়, তাই হয়তো ওই 'উপাধি'।  

রঙ্গমঞ্চে পুটিন-মোদী তো আছেনই, এরপর ট্রাম্প এলে ষোলকলা পূর্ণ হবে। ট্রাম্প-পুটিন-মোদী একজোট হলে পৃথিবীটা কেমন হবে? ট্রাম্প কি জিতবেন? সম্ভবনা ষোলআনা। এদিকে চীনের সাথে ভারতের একটু বিতন্ডা চলছে। ভারত-পাকিস্তান পারমানবিক বোমা নিয়ে একটু কথাবার্তার পর ভারতীয় ধমকে সবকিছু এখন চুপচাপ। বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তান ও তুরস্কের সম্পর্কের হয়তো আরো অবনতি ঘটবে। বাংলাদেশ ১৯৫জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করতেও পারে। বাংলাদেশ সৌদী জোটের পক্ষে আগেই ছিলো, এখন সৈন্য দেয়ার কথা আসছে। আমেরিকা-ভারত যেদিকে বাংলাদেশকে সেদিকেই থাকতেই হবে। চীনের ভরসায় থাকার কোন যুক্তি নাই। চীন যে আসলেই বাঘ না কাগুজে বাঘ এর গ্যারান্টি কোথায়? পাকিস্তানের বনধু চীন একাত্তরে কি পাকিস্তানের পক্ষে এগিয়ে এসেছিলো? কট্টর কম্যুনিস্ট ও ইসলামিস্টরা কি কারো বনধু হয়?    

নওয়াজ শরীফের ওপেন হার্ট সার্জারী হয়েছে, শেখ হাসিনা তার আরোগ্য কামনায় একটুও দেরী করেননি এবং বেগম জিয়াকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন। আবার যেই মমতা তিস্তা আটকে দিয়েছেন, তিনিই বিশ কেজি ইলিশ পেয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে কোলকাতা আসতেই হবে! তবে জামায়েতে হিন্দের সিদ্দিকউল্লাহ যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বা জামাতের পক্ষে বিশাল মিছিল করেছেন, তারা মমতার চারপাশে থাকলে শেখ হাসিনা যান কি করে? কিন্তু মমতা ঈশ্বর ও আল্লাহ'র নামে শপথ নিয়ে যে নজির সৃষ্টি করেছেন তা কি বাংলাদেশে সম্ভব? অথবা মমতা যেভাবে তার রাজ্যের সংখ্যালঘুদের আগলে রাখেন, শেখ হাসিনা কি তা করেন বা করতে পারেন? তবে দু'জনার মধ্যে একটা মিল আছে, 'দু'জনেই একরত্তি মেয়ে তসলিমাকে তাদের সীমানায় ঢুকতে দিতে নারাজ।  

বাজেটে হিন্দুদের জন্যে ২শ' কোটি টাকা থোক বরাদ্দে ওলামা লীগ ক্ষেপেছে। আওয়ামী ওলামা লীগ বলেছে,'বাজেটে হিন্দুদের নগ্নভাবে তোষামোদ করা হয়েছে'। পক্ষান্তরে ঐক্য পরিষদ পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছে, ১৯৯১ সালে ধর্মমন্ত্রনালের বাজেট ছিলো সাড়ে ষোল কোটি টাকার একটু বেশি, ওরমধ্যে সংখ্যালঘুর ভাগ্যে জোটে আড়াই লক্ষ, অথচ নও মুসলিমদের জন্যে ছিলো ১০লক্ষ। গত চার দশকের হিসাবটা এক্ষেত্রে প্রায় একই। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নামে ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিলো ৪৮৮কোটির একটু বেশি, এরমধ্যে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট পেয়েছে ২কোটির একটু ওপরে। বৌদ্ধ ও ক্রিস্টানদের কথা নাইবা তুললাম। তাই ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দকে বকেয়া পাওনা বলে ধরা যেতে পারে বৈকি! তাছাড়া একবার ভাবুন তো শুধুমাত্র শত্রু সম্পত্তির নামে কত হাজার হাজার কোটি টাকা হিন্দুর থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে, দৈনন্দিন বাড়ীঘর-ব্যবসাপাতি দখলের কথা নাহয় ভুলেই থাকলাম।  

এদিকে ভারতের একটি প্রভাবশালী পত্রিকা বলেছে, বাংলাদেশের ৯০% মানুষ ভারতের বিপক্ষে। সদ্য বাংলদেশ সফর করে যাওয়া বিজেপি'র এক নেতা বলেছেন, অত্যাচারে অতিষ্ট হিন্দুরা আর বাংলাদেশে থাকতে চায়না। এই দুইটি কথার মধ্যে কি কোন যোগসূত্র আছে? তবে এইচটি ইমাম বিবিসিকে বলেছেন, সরকার সংখ্যালঘু'র নিরাপত্তা বিধানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি বলেছেন, দলীয়ভাবে আমরা যেমনি ধর্মনিরপেক্ষ, সরকার বা চাকুরী-বাকুরিতেও তেমনি সংখ্যালঘুর উপস্থিতি তুলনামুলুক্ভাবে বেশি। বাংলাদেশে অনেকেই 'চমত্কার' সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে 'তৃপ্তির ঢেকুর' তুলেন, তাদের বলা যায়, এ বিষয়ে মমতা বা তার সরকারের সাথে একটু তুলনা করে দেখুন না?  

শনিবার এক কনফারেন্স কলে লন্ডনের পুস্পিতা গুপ্ত জানালেন যে, সেদিনই তিনি হবিগঞ্জ থেকে দু'টি কল পেয়েছেন। প্রথম কলে ধর্ষিতা এক গৃহবধু বলেন, "দিদি, ও ছাড়া পেয়ে গিয়েছে"। একথা বলে মেয়েটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। দ্বিতীয় কলটিতে এক লোক বলে, "মালাউনের বাচ্চা, পারলি আমার ভাইকে আটকে রাখতে"? ঘটনাটি এই রকম: হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গে এক গৃহবধু ধর্ষিতা হন ১৪ জানুয়ারী ২০১৬, গ্রাম্য সালিশে ধর্ষক দোষ স্বীকার করে। এতে ধর্ষক অপমানিত বোধ করেন বা তার অনুভুতিতে(!) আঘাত লাগে, এবং তিনি রাগান্বিত হয়ে ২/৩ সাকরেদসহ আবার ওই মহিলাকে ধর্ষণ করেন। দু'বারই স্বামী-সন্তানের সামনেই এ ঘটনা। মামলা হয়। মাস চারেক তিনি জেলে বন্দী থাকেন। গত সপ্তাহে জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসেন। ধর্ষিতার চিন্তা তিনি কি আবার ধর্ষণের স্বীকার হবেন? পুস্পিতার এরমধ্যে অন্তর্ভুক্তির কারণ হলো, তিনি কিছুদিন আগে দেশে গিয়েছিলেন এবং এই মহিলাকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে এসেছিলেন, স্থানীয় অনেককে মহিলার পাশে দাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিলেন। পাঠক, এটা কি শুধুই ধর্ষণ, নাকি সাথে রয়েছে ক্ষমতার দাপট? এ চিত্রটি কি আমাদের সমাজের দেউলিয়াত্ব নয়?  

শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.