Sylhet Today 24 PRINT

যাহা নহে সাত-সতের, তারে সাতে-পাঁচে কেমনে সয়?

শামীম সাঈদ |  ০২ জুলাই, ২০১৬

যাহা নহে সাত-সতের, তারে সাতে-পাঁচে কেমনে সয়?
নয়ে কিংবা ছয়ে হয় না তার গোত্র পরিচয়!

আমি আমার একটি প্রবন্ধে (শওকত আলীর ত্রয়ী উপন্যাস-বাস্তবতা মূল্যায়নে) বলেছি যে-- ১৯৭১ এর স্বাধীনতা জন্য যুদ্ধ মূলত ছিলো পাকিস্তানের ইসলামী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। যদিও ছয় দফার অন্যতম ছিলো অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্ত হবার কথা। তা গুরুত্বপূর্ণ বটে। কিন্তু ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণ ছিলো পাকিস্তানের ইসলামী সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে দাঁড়িয়েই।

বিশ্বজুড়ে সাম্প্রদায়িক সঙ্কটটির সমাধান হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এই সময়ে সমগ্র বিশ্বজুড়েই সাধারণ মানুষের ও বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষের বিশ্বাস, যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রবণতাটি হলো মধ্যযুগীয় সমাজচৈতন্যের প্রবণতা। এই প্রবণতার নব উৎসারণটি পুঁজিবাদী অর্থনীতিভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিকাশের সাথে ওতপ্রোত।

মধ্যযুগীয় সমাজ মানসের প্রবণতাটি ছিলো এমন যে, ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বিকাশে যেমন যুক্তিবাদী ও কার্যকারণ সমন্বিত চিন্তার ছাপ এবং সেইসাথে অতিলৌকিক বা অলৌকিক সত্তার কর্তৃত্বের উপর আস্থা রাখার প্রবণতা। কিন্তু শিল্প ও পুঁজিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে এর বিকাশের প্রশ্নেই রাষ্ট্র প্রশাসন থেকে ধর্মকে দূরে রাখার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিলো, আর ‘আধুনিক’ অভিধার এক সমাজমানস সম্বলিত জনমানস তৈরির প্রয়োজন হয়েছিলো। ফলত মধ্যযুগ পেরিয়ে সেই আধুনিকতাকে চিহ্নিত করা গিয়েছিলো।

Economic Determinism-কে ফালতু বলার সুযোগ নেই। বর্তমানের এই মধ্যযুগীয় সমাজমানসের পুনঃউপস্থিতি, সেও এক প্রয়োজনেরই খেলা। রাষ্ট্রব্যবস্থা তা জানে। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রব্যবস্থার জীবনসঞ্জীবনীও সেখান থেকে সিঞ্চিত হয়।

সুতরাং, বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে ৭১এর চেতনা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বপ্ন ও প্রকল্পনা এখন ফালতু ব্যাপার! এটা এখন মুখে বলা যেতে পারে কিন্তু বিশ্বাসে ও চেতনায় স্থান পেতে পারে না এবং সেই প্রকল্পনা প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশাও বাতুলতা। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সরকার এখন এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে।

রাষ্ট্র মানে কেবল ভূমি নয়, কেবল ভূমি দিয়ে কোথাও রাষ্ট্র গঠন হয়েছে এমন নজির সভ্যতার ইতিহাসে নেই। বাংলাদেশকে দাঁড়াতে হবে জনগণের রাষ্ট্র হিসেবে। আর এটা সম্ভব কেবল সাম্প্রদায়িকতার সাথে লড়ায়ে বিজয়ী হতে পারলেই। সুতরাং ৭২ এর সংবিধানের চার মূলনীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা অনিবার্য বাংলাদেশ সংবিধানে। যেকোনো দেশের জন্যই ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ফালতু ব্যাপার।

‘ফালতু’ শব্দটি যথার্থ ঘৃণা প্রকাশে ব্যর্থ হলে অন্যকোনো শব্দ এখানে প্রতিস্থাপিত হোক! জয় বাংলা!! জয় বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক মানুষ!!!

বি.দ্রঃ নিশ্চয়ই ‘সম্প্রদায়’ ও ‘সাম্প্রদায়িকতা’ এই কালে ভিন্ন অর্থারোপে বিশেষায়িত শব্দ যা সমাজতাত্ত্বিক ‘Comunity’ ও ‘Comunalism’ বৃহদার্থে ধরা সম্ভব নয়। বাংলার সম্প্রদায় ও সাম্প্রদায়িকতা খু্বই সংকীর্ণ অর্থদ্যোতনা দেয় যা দিয়ে সমাজতাত্ত্বিকের চলে না। সমাজতাত্ত্বিকের চোখে সম্প্রদায় ও সাম্প্রাদিয়কতা খুবই নির্দোষ ব্যাপার বলে গণ্য হতে পারে।

শামীম সাঈদ : কবি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.