Sylhet Today 24 PRINT

সিধুরা কখনো সাধু হয় না, সাধুর ভেক ধরে স্বার্থসিদ্ধি করে

রাশেদ রনী |  ২২ মার্চ, ২০১৫

সিলেটটুডে২৪ অনলাইন পত্রিকার বদৌলতে ভারতীয় টিভি চ্যানেল- “জি-নিউজের” ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচউত্তর বিশ্লেষণে নবজ্যোত সিং সিধুর ধারণকৃত বক্তব্য শুনলাম।

ভারতের ইনিংসের ৪০ তম ওভারে রুবেলের করা ৪র্থ বলটি নো-বল ছিলো না, রোহিত শর্মা ঐ বলে আউট হয়েছে, টিভি অ্যাম্পায়ারের সাহায্য না নিয়ে মাঠের অ্যাম্পায়ারদ্বয় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে রহিতকে আউট না দেয়ায় বাংলাদেশ ভারতকে ২৬০ রানে আটকে দিতে ব্যর্থ হয়েছে, বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অধিকার আছে আইসিসিকে প্রশ্ন করার যে- কেন বাংলাদেশকে এমন বাজে আম্পায়ারিং শিকার হতে হলো।

বাংলাদেশে অ্যাম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে যে ক্ষুব্ধ বাক্যগুলো জনে জনে উচ্চারিত হচ্ছে, সেই একই বাক্য সিধুর মুখ বের হচ্ছে শুনে অনেকেই খুশিতে ‘বাহ বাহ সিধু’ বলে উঠলেও আমি বলতে পারছি না’। এই সিধুই তো কিছুদিন আগে আমাদের কাঙ্গাল বলে আখ্যায়িত করেছে, হঠাৎ করে সেই চাড়াল লোক পরিবর্তন হয়ে যাবে- তা বিশ্বাস করা সম্ভব না।

ঐ নো-বলটি নিয়ে সিধু যা বলেছে, তা নতুন কিছু নয়, প্রতিটি বাক্য সকলের কাছে সত্য, পুরো ক্রিকেট বিশ্ব জানে ঐ বলটি ‘নো’ ছিলো না, যারা মুখ খুলেনি তারাও মনে মনে জানে রহিত ঐ বলে আউট হয়েছিলো।

অ্যাম্প্যায়ারদের স্বেচ্ছাচারিতা ১০১ বলে ৯০ রানে থাকা যে রহিত আউট হতে পারতো, তাকে সুযোগ করে দেয়া হয় পরবর্তী ২৫ বলে আরো ৪৭ রান করার, ঐ অবস্থায় ভারতের ২৬০-২৭০ ইনিংসটি সুযোগ পেয়ে হয়ে যায় ৩০২ রানের।

ঐ অবান্তর নো-বল নিয়ে তো অনেকেই মুখ খুলেনি, কিন্তু সবসময় বাংলাদেশকে কটাক্ষ করা সিধু কেন আগবাড়িয়ে মুখ খুলতে যাবেন ? হঠাৎ করে সিধু কেন সাধু হয়ে গেলেন? – এই প্রশ্নটা সত্যিই ভাবনার। তবে বেশিক্ষণ ভাবতে হয়নি – এই অনষ্ঠানে সিধুর বক্তব্যই সিধুর উদ্দেশ্য খোলাসা করেছে– রুবেলের ঐ বলকে ‘নো’ ডাকায় অ্যাম্প্যারদের সমালোচনা করতে গিয়ে সিধু খুব বিচক্ষনতার সাথে ঐ সিদ্ধান্তের তুলনাস্বরূপ আরো একটি সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিকভাবে সামনে এনেছে। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে ক্রিস জর্ডানের রান আউটটি টিভি অ্যাম্পারের ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো, যার কারণে ইংল্যান্ড ম্যাচের ভাগ্য বাংলাদেশের পক্ষে গেছে- এই অবান্তর বিষয়টি সুকৌশলে তুলে আনাই ছিলো সিধুর উদ্দেশ্য।

সঞ্চালক গৌরব কাপুরও সিধুর উদ্দেশ্যে ঘি ঢালতে সাহায্য করেছে, রোহিত আর জর্ডানের আউটের প্রসঙ্গ নিয়ে গৌরব কাপুর এখানে যা যোগ করেন (তার বাংলা তরজমা করলে যা দাড়ায়)- সেদিন বাংলাদেশের জন্যে ঐ আউট লাকি ছিলো, আজ ভারতের জন্য তা লাকি হয়ে গেল (রহিতকে না আউট দেয়া), ওপরওয়ালা লেবেল করে দিয়েছে...l

ক্রিস জর্ডানকে ইংল্যান্ড ঐ একটি ম্যাচেই নামিয়েছিলো, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে রান আউট হওয়া জর্ডানের এই বিশ্বকাপে ব্যাটিং অর্জন কেবল ১ বলে ০ রান, সে নাকি সেদিন ইংল্যান্ডের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতো, যে ক্রিস জর্ডান ওডিআই-তে ২২ ম্যাচ ১৬ ইনিংস ব্যাট করে এখন পর্যন্ত মোট সংগ্রহ ১৩২ রান, যার ব্যাটিং গড় ১২.০০ রান, সে নাকি সেদিন আউট না হলে বাংলাদেশের কপালে দূর্ভাগ্য আসতো, সিধু-গৌরবরা কতটা হাস্যকর তুলনা করলেন এইখানে ... বিশ্বকাপে ৪৯.৩৩ গড়ে ৭ ম্যাচে ২৯৬ করা রোহিত শর্মার আউট না হওয়ার ভুল সিদ্ধান্তের সাথে যখন ক্রিস জর্ডানের নায্য আউটের তুলনা করা হয়, তখনই খুব পরিস্কারভাবে ফুটে ভারতীয়দের দীনতা।

ভারতের পাকি জামাই শোয়েব মালিককে সাথে নিয়ে সিধু আর গৌরব আসলে ঐ নো-বল নিয়ে অ্যাম্পারদের সমালোচনা করছিলো না, তারা জর্ডানের নায্য আউটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে চাইছিলো যে- বাংলাদেশ একদিন অ্যাম্পায়ার সুবিধা পেয়ে আরেকদিন তা খুয়িয়েছে।

ইংল্যান্ড-ব্যাংলাদেশ ম্যাচে ক্রিস জর্ডানের ঐ রান আউটটি নিয়ে স্বয়ং ইংল্যান্ডও কোন প্রশ্ন তুলেনি, টিভিতে ধারাভাষ্যরত কেউই সেদিন বলেনি- জর্ডান আউট হয়নি, এমনকি ঐ রান আউটের সিদ্ধান্ত নিতে টিভি অ্যাম্পায়ার যতটা সময় ক্ষেপন সেদিন করেছে, এই বিশ্বকাপের টিভি অ্যাম্পায়ার থেকে আসা কোন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে হয়তো এতোটা সময় নেয়া হয়নি। জর্ডানের ঐ রান আউটটি প্রত্যেকটি ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল বিশ্লেষণ করেই সেদিন নেয়া হয়েছিলো। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করে যথেষ্ঠের উপর সময় ব্যয় করে রান আউট দেয়া হয়েছিলো। সিধু-গৌরব গং – সেই আউটটিকেই খুব কৌশলে রহিতের আউট না হওয়ার স্বপক্ষে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে এই অনুষ্ঠানে।

বাংলাদেশের পক্ষে সিধুর অপ্রত্যাশিত বচনের পেছনে সিধুর আরো একটি উদ্দেশ্য এখানে সুস্পষ্ট হয়– সমালোচনার অংশে সিধু বার বার ‘আইসিসি আইসিসি’ করাটাও যৌক্তিক। কারণ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়ে আইসিসি ও ভারতের যোগসাজস উন্মোচিত হওয়ার পর আইসিসি ও ভারত উভয়ের দিকেই প্রশ্নের তীর তাক করা হয়েছে, সিধু তার বক্তব্যে চাচ্ছিলো তীরের লক্ষ্যে একক ভাবে আইসিসি-কে দাঁড় করানো।

আইসিসির সভাপতি পদে থেকেও কোন কিছু তোয়াক্কা না করে জনাব মোস্তফা কামাল যখন আইসিসি-কে “ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল” বলে অ্যাখায়িত করে, তখন সেই তীরের তীক্ষ্নতা এতটাই বেশি হয়ে যায় যে- আইসিসির চেয়ারম্যান নারায়ন্যস্বৌয়ামি শ্রীনিবাসনের পশ্চাৎদেশ মারাত্মকভাবে হুমকির সন্মুখিন হয়। সিধু কামাল সাহেবের ছোড়া তীর থেকে শ্রীনিবাসনের পশ্চাৎদেশ বাঁচাতেই খুব জোড়ালো ভাবে আইসিসি আইসিসি আওড়াচ্ছিলো।

তো সিধুকে সাধু ভাবার আগে খুব সাবধান হইতে হইবে...

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.