Sylhet Today 24 PRINT

নাগ প্রশ্নে নগর এবং তার রাষ্ট্র

গোঁসাই পাহ্‌লভী |  ২৪ জুলাই, ২০১৬

পাতালে নাগের অবস্থান। ভারতীয় চিন্তাবিজ্ঞানে হিমালয় মানে মাথার অংশ এবং পাতাল বলতে পায়ের অংশ এই বঙ্গ। এই যে নাগ, এই নাগ একটি ট্রাইব। একটি কৌম। নৃবিজ্ঞান দিয়ে যেমন এই নাগকে অনুধাবন করা যায়, ভারতের আধ্যাত্মিক এবং দার্শনিক বিভাগে নাগদের অবদান অত্যন্ত উঁচুতে।

সম্প্রদায়টির নাম কেন নাগ হলো এটা একটা প্রশ্ন।

বাঙালীর কাছে ‘নাগ’, ‘নাগিনী’, ‘নাগিনীর নিঃশ্বাস’ এগুলো খুব খারাপ অর্থ এবং সংকেত নিয়ে আছে। যে সমস্ত বাঙালীর কাছে এগুলো নেগেটিভ মানে হয়ে আছে, তারা বাঙালী নন, মানে তারা নাগ নন!

এই সম্প্রদায়টিকে নাগ বলার কারন, এরা নাগের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে, সাপ যেমন ছোবল দেবার সময় দেহটাকে কুণ্ডলী পাকিয়ে ফনা তুলে ছোবল মারতো, এই জনগোষ্ঠীর আক্রমন বা প্রতিহতের ধরনও ছিলো তদ্রুপ। এই নাগরাই নগর তৈরী করেছে, নগরের নাগর হয়েছে।

ভারতীয় আধ্যাত্ম বিজ্ঞানে বা অধিবিজ্ঞানে দেহস্থ মূলাধারে কুলকুণ্ডলিনী শক্তি রয়েছে অনেকটা সাপের মতো পেচিয়ে। নাগরা নিজেদের শক্তিকে আবিষ্কার করেছে এবং মূলাধার থেকে সেই শক্তি সাপের মতো পেচিয়ে উঠে ফনা ধরে বিকশিত করেছে।

আধ্যাত্ম দর্শনের এই দিকটি কেবল প্রাচ্য নয়, পাশ্চাত্যের অধিমনোবিজ্ঞানেও বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে। ‘ঐতিহাসিকরা বলেন,বৌদ্ধধর্মের সংকটকালে নাগবিদর্ভ জনপদের নাগবংশীয় দার্শনিক নাগার্জুন বৌদ্ধধর্ম মতের এক নতুন ব্যাখ্যা দেন। নালন্দায় অধ্যাপনারত এই দার্শনিকের নতুন ব্যাখ্যা অনুযায়ী মহাযান মতবাদের উদ্ভব হয়।

এই মহাযান মতবাদের মধ্যে দিয়ে নাগদের সূক্ষ্ম কায়াসাধন যা কিনা কুণ্ডলিনী সাধনার নামান্তর নতুন বৌদ্ধতন্ত্র নামে পরিচিতি লাভ করে। সাঁচীর বিখ্যাত স্তুপে সর্প সাধনার নিদর্শন পাওয়া যায়। সেখানে দেখা গেছে সাতটি ফণাযুক্ত শিরভূষণা কয়েকজন নারী তাঁকে ঘিরে রয়েছেন। অমরাবতীর স্তুপে বুদ্ধদেবের মস্তকে এবং রাজাদের মস্তকে সর্প বিরাজ করছে’।

সেই সর্পেও বিষ থাকবে না এমনটা কি আপনারা চান?

নাগদেরকে আপনারা নিজেদের মতো থাকতে দেননি। ব্রাহ্মণ্যবাদ থেকে শুরু করে আজকের রাষ্ট্র ব্যবস্থা পর্যন্ত সকলেই নাগদেরকে গিলে খেয়েছে, গিলে খাওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে, সাপের মাংস হজম হলেও তার বিষকে হজম করতে পারেনি বাঙালীর নামে চলা এই দখলদারবাহিনী।

ফলে লড়াইটা নির্ভর করবে দমনের কলকব্জার উপর।

মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের আজকের রাজনৈতিক সংকটের চেহারা যা ই থাকুক না কেন এর মূল উৎস হচ্ছে রাষ্ট্রের ভেতর পরিবার তন্ত্রের মাস্তানি। পরিবারতন্ত্রের প্রতিক্রিয়ার খই ফোটা শুরু হয়েছে, অনাগত রয়েছে কৌমতন্ত্রের কুণ্ডলিনী, নাগ কিংবা রাক্ষসের জেগে ওঠা।

রাষ্ট্র তোমার ইতিহাস এসবের কাছে নস্যি!

 

গোঁসাই পাহ্‌লভী, ভাস্কর, লেখক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.