Sylhet Today 24 PRINT

লাউয়াছড়া, সুন্দরবন এবং ময়মনসিংহ

জাবেদ ভূঁইয়া |  ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বনে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার জন্য চমকপ্রদ কোন ভাল খবর নেই আমাদের কাছে, তবে বিধ্বংসী দেশি-বিদেশি চক্রান্ত দৃশ্যমান হচ্ছে প্রতিদিন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীও তাঁর অবস্থান ঘোষণা করেছেন, সাথে 'গণমাধ্যম' ও তার 'বিশেষ' সাংবাদিকরাও রয়েছেন।

দুই.
গত ১৭ জুন দৈনিক প্রথম আলো সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগ রেল চলাচল 'নির্বিঘ্ন' করার নামে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেল পথের দুই পাশের লাউয়াছড়া বনের ভেতরের প্রায় ৭কি.মি. বনভূমি 'পরিষ্কার' করতে চায় এবং করবে। বন বিভাগ বলেছে, তাতে করে বনের ভিতরের ২৫ হাজার গাছ কাটা পড়বে!

আর আমরা বলেছিলাম এর সাথে কাটা পড়বে প্রকৃতির জটিল ব্যাকরণও। সাথে ধ্বংস হবে মহামূল্যবান উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য। আমরা প্রতিবাদ করি ২২ জুন, রেলমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের মধ্য দিয়ে। পরে গড়ে তুলি- লাউয়াছড়া  বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন।

গত ১৭ আগস্ট প্রথম আলো জানায়, রেলপথের দুইপাশের বনভূমি কৃষি লিজ দিয়েছে রেল বিভাগ। চাষাবাদের অনুমতি পেয়ে প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে পান ও লেবু চাষ শুরু করা হয় সেখানে। প্রতিবাদে ধারাবাহিক কর্মসূচি জারি রাখি আমরা।

তিন.
গত ১৮ আগস্ট বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসতে শুরু করে যে, ২৫ হাজার গাছ কাটা হবে না। এটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সভার সিদ্ধান্ত। বাতিল করা হয় কৃষি লিজও। ভবিষ্যতে কৃষি লিজ হবে না বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্থানীয় ডিসি, ইউএনও, বন ও রেল বিভাগের প্রতিনিধি রেখে একটি কমিটি করারও নির্দেশ আসে। তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, রেল লাইনের দুই পাশের অধিক বয়োবৃদ্ধ ঝুঁকিপূর্ণ গাছ চিহ্নিত করার। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, কমিটিতে আন্দোলনের প্রতিনিধি রাখা হয়নি!

চার.
সম্প্রতি মন্ত্রীসভার বৈঠকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বনের গাছ কাটা যাবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নবায়ন করা হয়। একই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আমলাদের কাছে নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগে 'জলাশয়' রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।

একনেকের বৈঠকে ময়মনসিংহ বিভাগকে পরিকল্পিত 'মহানগর' হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়। ভবিষ্যতে যাতে ময়মনসিংহ মহানগরে জায়গা সংকট না হয়, সেজন্য ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে বিস্তৃত হবে বিভাগটি। নদের উপর আরো দু'টি ব্রিজ  নির্মাণ করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। এর পাশাপাশি সুন্দরবনের দিকে যদি তাকাই, তবে বলতে বাধ্য হই- আমাদের শক্ত প্রধানমন্ত্রী 'ভারতভীতিতে' ভুগছেন। আর এ রোগের কারণ আমাদের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি।

আধিপত্যবাদি ভারত প্রতিবেশী নেপালে টাকার বিনিময়ে দালাল পয়দা করে, সেখানে গোলযোগ সৃষ্টি করে, তাকে ঢাল বানিয়ে আমদানি বন্ধ করেও নেপালকে দমাতে পারেনি।

ভারত নানাভাবেই আমাদের 'দাবায়ে' রাখার যে অপচেষ্টা করছে, তা প্রতিরোধ করাই এখন মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতা। সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। আর জনগণের উচিত হবে ঐক্যবদ্ধ শক্তি গড়ে তোলা।

পাঁচ.
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশে ৯ ঘণ্টা অবস্থান কালে এক টুইট বার্তায় বলেছেন- "জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে দেড়কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে!" কিন্তু রাষ্ট্র এই বার্তাকে পাত্তা দেয় নাই অথবা পাত্তা দিলেও জোরালো অবস্থান নেয় নাই। অবস্থান নিলেও ধনি রাষ্ট্রের সাথে দরকষাকষি করে নাই!

এই না করার মধ্যেই যে 'রহস্য' লুকিয়ে আছে, তা খোলাসা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করবেন না নিশ্চিত। তবে আমরা এ ব্যাপারে একটা কথা ভেবে নিতে পারি- দেড়কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুত হবার ঝুঁকি রাষ্ট্রের মেনে নেয়া সহজ, তবুও ভারত প্রশ্নে বিরাগ হওয়া চলবে না!

বৈশ্বিক জলবায়ু প্রশ্নে আমরা ক্ষতিপূরণ পাই না। আর এখন আমরা সুন্দরবনের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাবো? না, হতে দেয়া যায় না। দেশ বা বিশ্ববাসীর স্বার্থে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

জাবেদ ভূঁইয়া : যুগ্ম আহ্বায়ক, লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন।

  • এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.