Sylhet Today 24 PRINT

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কবি হেলাল হাফিজের এক চোখে আলো দিন

আলীম হায়দার |  ১৮ অক্টোবর, ২০১৬

কদিন আগে দেখা করতে গিয়েছিলাম কবি হেলাল হাফিজের সঙ্গে। যদিও তিনি ব্যক্তিত্ব দেখিয়েছেন, তবুও ভিতরে ভিতরে যে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছেন তা বুঝতে পেরেছি। এরপর সময় গড়িয়েছে কয়েকদিন।

ভুলেই যেতে বসেছিলাম, হঠাত বাসায় বসে একটি অনলাইন নিউজপোর্টালে একটা প্রতিবেদন দেখলাম, অন্ধ হতে চলেছেন ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনের আগুন স্লোগানের কবি, “নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়” কবিতার কবি, কবি হেলাল হাফিজ। কিন্তু থেমে নেই প্রটোকলের হুমড়ি-দুমড়ি। কিন্তু বৃদ্ধ কবি কী অতো দৌড়ানোর সাধ্য রাখেন? আর ইতিহাস-সম্পৃক্ত একজন কবির সম্মান রাষ্ট্রের সম্মানও নয় কী!

কথা হলো, সাহায্য চেয়ে, করুণা ভিক্ষা চেয়ে দরখাস্ত লিখতে হবে কেন? রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দাপট কী শুধু করুণাই দিতে চায়, ভালোবাসা নয়? অথবা দায়িত্ব বলে কী কিছুই নেই, সব কী রাষ্ট্রের ঝুলি থেকে ফুরিয়ে গেছে? কী স্পর্ধারে বাবা! কিন্তু এই অহংকার তো সাময়িক মাত্র, ক্ষমতার উত্তাপে হয়তো রাজনীতিবিদদের মানবিক সত্ত্বাও হারিয়ে যায়।

তবু আশা নিয়ে বসে আছি, সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান নিশ্চয়ই শুধু করুণাই দিতে চাইবেন না, তারা নিশ্চয়ই শুধু দাপট দেখাতে চান না, তাদের ভিতর নাগরিকদের জন্য শুধু ভোটের তাড়না নয় বরং কিছু ভালোবাসাও আছে- সেটা আজও বিশ্বাস করি বলেই সুনাগরিক হতে চাই। না হলে তো রাস্তাঘাটে পাণ্ডামি করেই একটা জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়! রাষ্ট্র ও সরকার সম্মানযোগ্য ব্যক্তিদের প্রাপ্য সম্মান দেবে, ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা দেবে, এটাই তো প্রত্যাশা করি।

৬৯-এর গণআন্দোলনের আগুন স্লোগানের পথিকৃৎ কষ্টের কবি হেলাল হাফিজ করুণা নয় বরং রাষ্ট্রের ভালোবাসা পাবেন বলেই আশা করি। তাকিয়ে আছি রাষ্ট্রের দিকে। তাকিয়ে আছি জনগণের সরকারের দিকে।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সর্বাধিক মুদ্রিত কাব্য 'যে জ্বলে আগুন জ্বলে' (২৩ সংস্করণ) এর কবির জন্য এগিয়ে আসুক রাষ্ট্র। এতে সরকারের মাহাত্ম্য বাড়বে বৈকি, কমবে না!

'এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়' স্লোগানটি মনে পড়ে? ৬৯-এর গণআন্দোলনের কথা মনে পড়ে? মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বলে তুমুল কোলাহলে ডুবে গেছেন সবাই, অথচ এই কবিকে ভুলে গেলেন কি করে? যার দেয়া শ্লোগানে রাজপথের মিছিলে আগুন ঝরত, তাকে ভুলে গিয়ে শুধু শ্লোগানটা নিয়ে সবাই সবার নিজের মতো কাজে লাগালেন?

তাতে কীইবা আসে যায়! কবি তো বেঁচে থাকবেন স্বাধীনতার চেতনায়। কিন্তু দায়িত্বহীনতার ভার নিয়ে চলতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে। কে নেবে সেই দায়?

বহুমুখী দূরত্বের কারণে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত অনেক ভুগেছেন, কষ্টের ক্রমাগত অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়েই তিনি আধুনিক বাংলাদেশকে সফল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলছেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট, জাতির জনক, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা, নিশ্চয়ই আপনি সরকারপ্রধান হিসেবে ইতিহাস-সম্পৃক্ত এই বর্ষীয়ান ও নিভৃতচারী কবির ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করবেন। প্রিয় নেত্রী, শেষ ভরসা আপনিই, আপনার দিকেই চেয়ে আছি, কারণ আপনি মমতাময়ী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমরা আপনাকে “হাসু আপা” বলে ডাকি। আপনার হাসি অনেক সুন্দর, ঠিক আমাদের মায়েদের মুখের মতো লাস্যময়ী, ইতিহাস বলে আপনার হৃদয়টাও তেমনি। কবি হেলাল হাফিজ আপনার অনুজপ্রতীম। আপনি নিজেও জানেন, কখনো কাব্য প্রতিভা বিক্রি করে মানুষের কাছে হাত পেতে পেতে কাউকে বিরক্ত করেন নি তিনি। চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে করতে তার এক চোখ গ্লুকোমায় অন্ধ হয়ে গেছে। তিনি কাউকে বলেনও নি। সেটি আর কোন দিনও ঠিক হবে না। আরেক চোখও এখন অন্ধকারের পথে।

প্রিয় নেত্রী, আপনি কবির এক চোখে অন্তত আলো এনে দিন। নতুন প্রজন্মকে ব্যক্তিত্ববাদ চর্চার প্রেরণা দিন। আমাদের মাথা উঁচু করে চলার সাহস দিন।

আলীম হায়দার : কবি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.