Sylhet Today 24 PRINT

সহপাঠীর লাথিতে সজিবের মৃত্যু : প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন

কৃষ্ণ ভৌমিক |  ৩১ অক্টোবর, ২০১৬

পেশার কারণে নিত্যদিন বিচিত্র সংবাদের মুখোমুখি হতে হয়। কোনো কোন সংবাদে ভালোলাগার পরশ থাকে, আবার কোনটি ভাবিয়ে তোলে। ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার এমনি এক দুঃসংবাদের মুখোমুখি হই।

এক সংবাদকর্মী বন্ধু জানালেন, দোগাছি স্কুল এন্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সজিব হোসেনের সাথে একই ক্লাসের ছাত্র খায়রুল ইসলামের কোনো বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ খায়রুল ইসলামের লাথিতে ক্লাস কক্ষেই সজিব হোসেনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ভয়ঙ্কর এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী ঘাতক ওই কিশোর ছাত্রকে পুলিশে দেয়। পাবনা সদর থানায় এ ঘটনার হত্যা মামলা দায়েরও হয়।

এ সংবাদটি পরিবেশন করতে গিয়ে নিজের মনেই নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়। বারবার প্রশ্ন জাগে শিশুদের মনে এতো হিংস্র ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ কেন? তাহলে আমরা কি শিশুদের পঠন-পাঠনে নীতি নৈতিকতা তথা মানবিক শিক্ষা দিতে পারছি না। যদিও এ বিষয়টি সমাজ বিজ্ঞানীরাই ভালো বলতে পারবেন।

আমার মনে হয়, সবচেয়ে বড় শিক্ষক হচ্ছে মা-বাবা। আর নিজ বাড়িই হচ্ছে বড় শিক্ষালয়। শিশু বয়স থেকেই যদি তাদের মনে নীতি নৈতিকতার বীজ বপন করতে পারতাম তাহলে আমাদের সমাজের চরিত্রটাই না পাল্টে যেত। মর্মান্তিক এ ঘটনাটিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ কি জবাব দিবেন? হয়তো ভাবছেন এটি নিছক দুর্ঘটনা। একবারও কি তারা ভাবছেন তাদের দায়িত্ব জ্ঞানহীনতাই এ ঘটনার জন্য দায়ী নয় কি? সজিবের পরিবারের হাহাকার কি তারা কোন দিন থামাতে পারবেন? এ বিষয়টি বিশ্লেষণের দাবিদার।

আমরা জানি স্কুলে একের পর এক বিরতিহীন ক্লাস হয়ে থাকে। ওই ঘটনার সময় নিশ্চয় টিফিন ছিলো না? তাহলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে ক্লাসকক্ষে দু’ছাত্রের মধ্যে কেমন করে তর্কাতর্কির জেরে এ হত্যার ঘটনা ঘটলো। স্বভাবতই বলা যায় ওই সময়ে ক্লাসে শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন না। শিক্ষকের উপস্থিতে ক্লাসকক্ষে এ রকম ঘটনা কখনোই ঘটতে পারে না। তাই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এ দায়-দায়িত্ব কোনভাবেই এড়াতে পারেন না।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনেরও কি কোনো করণীয় ছিলো না? জেলা প্রশাসন যদি এ মৃত্যুর খবর জানার পর ঘটনাস্থলে ছুটে যেতেন এবং কর্তৃপক্ষের কোনো দায়িত্বহীনতায় এ ঘটনা ঘটেছে কি না তার জন্যে তদন্ত করতেন তাহলে কি ভালো হতো না? জেলা প্রশাসনের তদন্তে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তারা সুপারিশও পাঠাতে পারতেন। যদি প্রশাসন তাই করতো তাহলে মিডিয়ার মাধ্যমে এ ঘটনা সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক পজিটিভ ম্যাসেজ পৌঁছে দিত। এ ম্যাসেজে হয়তো বা আগামী দিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ রকম দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা কমে যেত।

জেলা প্রশাসন এ ক্ষেত্রে নীরব থাকলেন। তারা হয়তো বা ভাবছেন এটা তো পুলিশ কেস এ নিয়ে আর কি করার আছে।

আসলে আমাদের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রুটিন ওয়ার্কের বাইরে আসতে চান না। নির্দেশনা ছাড়া কেউ যেন চলতে চান না। এটাই বড় সমস্যা। এ ঘটনায় জেলা শিক্ষা অফিসারের কি কোন করণীয় ছিল না? তিনি কি এ ঘটনার জানার পর স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন? নিহত সজিব হোসেনের শোক সন্তপ্ত মা-বাবার সাথে কি তার দেখা করার দরকার ছিল না? এ প্রশ্নের উত্তরে জেলা শিক্ষা অফিসার কি বলবেন?

আমরা যে অবস্থানে থাকি না কেন তারা যদি বিবেককে জাগ্রত করে নিজের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হই তাহলে সমাজের এ রকম ঘটনা দেখতে হতো না। সব শেষে তাই বলতে চাই- সজিব হোসেন আমাদের এ অক্ষমতা, উদাসীনতাকে ক্ষমা করো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.