Sylhet Today 24 PRINT

লজ্জা হতাশায় ডুবতে বসেছে মান সম্মান

তপু সৌমেন |  ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

চারপাশে দারুণ সব খবর, পত্রিকা ওয়ালাদের দারুণ ব্যস্ততা, টকশোতে ধুন্ধুমার বাক যুদ্ধ, চলছে চলবে। আবার হতাশা আবার লজ্জা, আবার ডুবতে বসেছে মান সম্মান। এবার লজ্জায় ডুবতে বসেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। লজ্জা এই জন্য, কতগুলো অযোগ্য লোকের হাতে জীবনটা সঁপে রেখেছেন। যাদের কোন লজ্জা নেই আর লজ্জা নেই বলেই নিজের মাকেও এরা মেরে ফেলতে চাইতে দ্বিধা করেনা।

গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী যখন হাঙ্গেরি যাচ্ছিলেন আর মাঝপথে তাঁকে তুর্কমেনিস্তানে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য জরুরি অবতরণ করতে হলো তখন একবারের জন্য হলেও তিনি লজ্জা পেয়েছেন। সারা বিশ্বের মিডিয়াতে প্রচার হলো, ফলোআপ হচ্ছে এবং হবে। একজন প্রধানমন্ত্রী যে উড়ানে চড়েন তা হয় মূলত একটি দেশের সবচেয়ে ভালো মানের উড়ান। আর সবচেয়ে ভালো মানের উড়ানের যদি জ্বালানির নাট বল্টু থাকে নড়বড়ে, তবে ভাবতেই ভয়ঙ্কর লাগছে দেশের বাকি উড়ানগুলোর কি অবস্থা? আমার খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে আমাদের বিমান মন্ত্রী কি এখন লজ্জা পাচ্ছেন? নাকি এখনো নির্লজ্জের মত এর ওর ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন।

এই ঘটনাটি ছোট করে দেখার কোন অবকাশ নেই এবং অবশ্যই আর দশটা যান্ত্রিক ত্রুটির মত করে দেখলে হবে না। এর পেছনের কোন গভীর ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা খুব গুরুত্বের সাথে খুঁজে বের করতে হবে। এই ঘটনা এতোই ভয়াবহ যে এতে করে স্পষ্টত উঠে আসে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং এর সার্বিক চিত্র। একজন প্রধানমন্ত্রী যে উড়ানে চড়ে যাবেন তার রক্ষণাবেক্ষণ ও যাচাই বাছাইয়ে যদি এতো বড় দুর্বলতা থাকে তাহলে সাধারণ যে ফ্লাইটগুলো রোজ ছেড়ে যাচ্ছে তার হাল কি তা সহজেই অনুমেয়।

লজ্জার এখানেই শেষ নয়, গত রবিবার ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় পুলিশের পিটুনিতে নিহত হয়েছেন একজন শিক্ষক। আমি একজন ছাত্র হিসাবে লজ্জিত। কি করে একজন ছাত্র হয়ে শিক্ষকের উপর হাত তোলা যায়? এই হাত তুলাটাই তো ভয়ঙ্কর গর্হিত কাজ, ধরে নিলাম বাংলাদেশে গর্হিত কাজ বলে কিছু নেই কারণ এর চেয়েও হাজারটা গর্হিত ঘটনা রোজ বাসি হচ্ছে। কিন্তু ভয়ঙ্কর বলেও তো কিছু আছে নাকি? একজন শিক্ষককে মেরে ফেলা হলো পিটিয়ে সাথে আরেকজন পথচারীও মারা গেলেন, ঠিক ব্যাপারটা মানতেই পারছিনা। যদিও পুলিশ জানিয়েছে শিক্ষক আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। ঠিক আছে মেনে নিলাম ঝড়ে বাজ পরে না হয় শিক্ষক মারাই গেলো। কিন্তু বাকি ২৫জন আহত ব্যক্তির মধ্যে যদি ১ জন হলেও শিক্ষক থেকে থাকে সেই একজনকেই বা কি করে পুলিশে পেটায়? সেই পুলিশটি যে নির্ভুল ভাবে লাঠির আঘাতটি করেছে একজন শিক্ষকের শরীরে সে কি একবারও ভাবে নি কাকে মারছি? এতই কি মানবতা উবে গেলো আমাদের? বাংলাদেশ পুলিশ এখন যথেষ্ট শক্তিশালী সন্দেহ নেই। আমার মনে হয়না যদি পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের তরফ থেকে দিক নির্দেশনা থাকতো তাহলে কারোই এতো সাহস হতোনা সেখানে সহিংস আন্দোলন করার। অন্তত বর্তমান পুলিশের ক্ষমতার প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় তাই আমার ধারনা। তাইলে লাঠি পেটা, গুলি চালানোর আগে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দিলেই তো হতো? তাতে করে অন্তত দুইটা মানুষ মরতো না, আহত হতো না এতোগুলো মানুষ। লজ্জিত হতো না জাতি। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এই প্রকারের যাবতীয় কথা বার্তা বর্তমানে প্রবাদ প্রবচনেই বেশি মানায়।

যদি ভাবেন লজ্জার কাহন শেষ হয়ে গেছে তবে আপনি ভুল করছেন। মনে আছে এইতো গত ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘর ও মন্দিরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিল এক রসরাজ দাস যে কিনা কাবার ছবির উপরে শিবের মূর্তি বসিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে ভয়ঙ্কর আঘাত হেনেছিল। তার পরের ঘটনা কারো অজানা থাকার কথা না এই রসরাজের ফাঁসি চেয়ে, তাঁকে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে মারা, মালাউন বলে হিন্দুদেরকে ট্যাগায়িত করা ইত্যাদি অনেক কিছুই হয়ে গেছে। কিন্তু তদন্তের পর জানা গেলো এই ঘটনার জন্য দায়ী সাইবার ক্যাফের মালিক জাহাঙ্গীর আলম তখন কি আমাদের একটুও লজ্জা হয়? যারা নিরপরাধ দিনমজুর রসরাজের ফাঁসি চেয়েছেন, পুড়িয়ে মারতে চেয়েছেন তারা কি এখন জাহাঙ্গীর আলম সাহেবের ফাঁসি চাইবেন না কি জ্যান্ত কবর দিতে চাইবেন? নিরপরাধ সংখ্যা লঘূদের উপর অমানুষিক অত্যাচার, নির্যাতনের জন্য আমাদের সত্যি লজ্জা হওয়া উচিৎ। আমাদের না হলেও লজ্জা কিন্তু ঠিকই হয়েছে সেই রসরাজের আর তাই নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাকে লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে।

খুব বেশি অবাক হলাম, লজ্জিত হলাম সাব্বির রুম্মান আর আল আমিন হোসেনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের খবর শুনতে পেয়ে। এরা বাংলাদেশ দলের দুজন প্রগতিশীল খেলোয়াড়, যাদের যাত্রা কেবলই শুরু সামনে কতটা পথের যাত্রা তাদের তার আগেই পা পিছলে যেতে বসেছে। টাকার আনাগোনা যেখানে বেশি সেখানে অসৎ কাজের সম্ভাবনাও অনেক বেশি, তাই সময় থাকতে বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং ক্রিকেটীয় ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে, আরো কঠোর হতে হবে নিয়ম-শৃঙ্খলা নিয়ে, ক্রিকেটে টাকার খেলা নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। যাদের দেখে লাখো তরুণ স্বপ্ন দেখে তারাই যদি পা পিছলে যায় তবে আরো বেশি বেশি লজ্জিত হতে হবে আমাদেরকে সামনের দিনগুলিতে।

আমাদের ঠিক পাশেই নির্মমভাবে রোহিঙ্গাদের নির্যাতিত হবার খবর পাচ্ছি, নৌকায় করে নিরুদ্দেশ ভেসে বেড়ানোর ছবি পাচ্ছি রোজ। রোহিঙ্গাদের কষ্ট দুর্দশা আজকে হাস্যকর করে ফেলেছি এই আমরাই। আমরাতো জানিই ওদের উপর অত্যাচার হচ্ছে আমাদের উচিৎ বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ভাবে, প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রতিবাদ জানানো কিন্তু তা না করে আমরা গুজব ছড়াচ্ছি মিথ্যা ছবি দিয়ে, তথ্য দিয়ে এইসব করে পক্ষান্তরে এই মানুষগুলোকে নিয়ে পরিহাসই করছি আমরা, তাই লজ্জা পাচ্ছি।

দিন দিন আমাদের লজ্জার পাল্লা এতো ভারি হচ্ছে যে নির্লজ্জ জাতিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছি আমরা। বিবেক, মনুষ্যত্ব, মানবতা জাগ্রত হওয়া দরকার খুব শীঘ্রই না হয় অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যেতে হবে।

এতো এতো লজ্জার মাঝেও টুকটাক আশার আলো দেখা যায়, অন্ধকারে তলিয়ে যেতে যেতে হঠাত আলোর দেখা পেলে যেমন সুখ হয় তেমনই মাঝে মাঝে কিছু সংবাদ আমাদের সকল দুঃখ ভুলিয়ে দেয়, বাঁচিয়ে দেয় লজ্জা থেকে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে বাংলা নববর্ষ বরণে বাঙালির প্রাণের উৎসবের বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ বার্তা সুখের বার্তা, সারা বিশ্বে সমাদৃত হলো আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের দেশের নাম আরো একবার আর গর্বিত হলাম আমরা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.