Sylhet Today 24 PRINT

জ্যাকলিন মিথিলা : যে হত্যার দাগ আমার হাতেও!

রাসেল মোস্তাফিজ |  ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বিজেয়লাক্সমি নামের ১৮ বছরের ছোট মেয়েটা ছিল মুভির টাচ আপ আর্টিস্ট। হঠাৎ করেই ১৯৭৯ সালে “ইনায়ে থেড়ি” নামের এক মালায়ালাম মুভিতে একটা ছোট সিনের অফার হয়ে যায়। সিন কি সেটা ছিল লোলুভ পুরুষ জাতির জন্য কমার্শিয়াল এলিমেন্টস।

তখনকার যুগে তার পর্দায় আলটিমেট বোল্ড হয়ে আসাটা মার্কেটে প্রভাব পরেছিল প্রচুর। মুভির এক সিনেই বাজিমাত। রাতারাতি নির্মাতাদের হট কেকে পরিণত হলো মেয়েটা। কিছুদিনের মধ্যেই আসলো বার ডান্সার হিসেবে নিজের দ্বিতীয় মুভি “বান্দিচাক্কারাম”। এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল সেখানে যে নিজের নামটাই পরিবর্তন করে মুভির চরিত্রের সাথে মিলিয়ে সিল্ক স্মিতা হয়ে গেল।

সিল্ক মুভিতে থাকা মানেই ছিল মুভি হিট। কারণ শুধু মাত্র তার শরীরটাকে চোখে ধর্ষণ করতেই যে হল গুলো থাকতো হাউসফুল। দারিদ্রের সাথে লড়াই করতে করতেই বড় হওয়া সিল্কের কোন ধারনাই ছিল না পুঁজিবাদী বা পুরুষতান্ত্রিক দুনিয়ার। যে যেভাবে নাচিয়েছে সেভাবেই শরীরটাকে দেখিয়ে নেচে গেছে।

প্রডিউসারের ব্যাঙ্কে মোটা অঙ্ক জমেছে, নিজের শরীরে লেগেছে “সফট পর্ণ এক্ট্রেস” টাইটেল। কিন্তু কেউ ভাবে নি মেয়েটা অভিনয় করতে এসেছিল শরীর দেখাতে নয়। তাইতো যেসব ফ্যামিলি মুভি করেছিল ব্যবসা সফল আর মুভি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করলেও বারবার তাকে সেক্স অবজেক্টিফাই রোলই করতে হয়েছে। কথায় বলে না সাফল্য যখন আসে তখন নাকি একবার পিছনে ফিরে নিজের পিছনে ফেলে আসা জীবনটা দেখতে হয়। নিজেকে নিজের সমালোচনা করতে হয়। কিন্তু সেই পিছনে দেখার টাইম ছিল না কারণ বাজারে তখন সিল্ককে দেখে দেখে আর নতুন সিল্ক আসছিল। আর সস্তা জনপ্রিয়তার দিকে যাচ্ছিল। তাই অন্ধ হয়েই নিজের বানানো পথে ছুটতে হচ্ছিল।

শেষে নিজেকে একদিন সত্যি সত্যি প্রপার পর্ণ মুভির সেটে আবিষ্কার করে। ভুলটা মনে হয় সেদিনই বুঝতে পেরেছিল। চিনেছিল পুরুষ নামক একপ্রকার দাঁতাল জীবকে। নিজের পিছনে ফিরে শুধু ভালবাসাহীন হাহাকারের এক জীবনই খুঁজে পেয়েছিল। আর তার পর একদিন তুমুল জনপ্রিয় সিল্ক স্মিতাকে খুঁজে পাওয়া যায় নিজের বেডরুমে মৃত অবস্থায়।

সিল্কের কাহিনীটা সার সংক্ষেপে বলার কারণ নিজের শরীর এই লাস্টযুক্ত পার্ভাট পুরুষতান্ত্রিক সমাজে দেখিয়ে যে সকলের রাতের স্বপ্নে আসা যায় এটা বোধহয় এই উপমহাদেশে দেখিয়ে গেছে সিল্ক স্মিতাই। আর তার সবচেয়ে নতুন উদাহরণ আজকের জ্যাকলিন মিথিলা। শুনেছি তিনদিন আগে নাকি আত্মহত্যা করেছে।

সুইসাইড নোটে নাকি কারণ হিসেবে বলা ছিল ভালবাসার অভাব। আমি মিথিলাকে খুব ভাল চিনতাম না। তবে একেবারেই যে চিনতাম না বললে সেটা মিথ্যা হবে। হাজার হউক লিঙ্গের হিসেবে যে আমিও পুরুষ। যেদিন পত্রিকায় দেখেছিলাম নিজেকে বাংলার সানি লিয়নি বলেছে সেদিনই খুঁজে বের করেছিলাম তাকে। তখন যদি জানতাম মিথিলার হত্যাকারী আমিই তাহলে সে কাজটা আমি কখনোই করতাম না।

মিথিলাকে শুধু তার স্বামীর ভালবাসার অভাব হত্যা করেনি। করেছি আপনি আমি সহ সেই সকল পুরুষেরা যারা মিথিলাকে এই রূপালি জগতে জনপ্রিয়তা দিয়েছি। যারা তাকে তার প্রতিটি লাইভ ভিডিওতে শরীর দেখাতে উৎসাহ দিয়েছি। আমরা সকলেই খুনি যারা মিথিলাকে আমাদের রাতের স্বপ্নে এনেছি। কারণ যখন ভার্চুয়ালি পাওয়া আমার আপনার ভালবাসায় সিক্ত মিথিলা তার ফোনের সুইচ অফ করতো, আর তারপর নিজের বাস্তব জীবনে ফিরে যেত সেখানে ছিল বিস্তর ফারাক। ডিপ্রেশনটা তার সেখান থেকেই শুরু। আর যার পরিণতি মিথিলাকে আমরা খুঁজে পেয়েছি তার বেডরুমে ওড়নায় ঝুলে থাকা অবস্থায়।

নিজেকে সবার স্বপ্নের মানুষ ভাবা কি অপরাধ? অথবা জনপ্রিয় হতে কে না চায়। জনপ্রিয় হতে চেয়েছিল মিথিলা। কিন্তু তাকে এই রাস্তাটা দেখিয়েছিল কারা? আমরা পুরুষরাই। মিথিলা নিজেকে সানি লিয়নির ফ্যান ভাবতো। কানাডিয়ান পর্ণ স্টার সানি লিয়নি। সেও পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে সুস্থ মুভিতে এসেছে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন কি হয়েছে। সানিকে প্রতিটা মুভির প্রতিটা শটে অবজেক্টিফাই করা হয়েছে, শরীরের প্রতিটা অংশকে জুম করা হয়েছে। আর বিনিময়ে মুভির কাহিনী থাকুক আর না থাকুক তাকে দিয়েছি আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। মিথিলার সাথে কি আমরা তাই করি নি? তাই তো বললাম মিথিলার স্বামী যদি ভাল না বেসে মিথিলাকে হত্যা করে সেই খুনের দাগ কিছুটা আপনার আমার হাতেও আসে শুধুমাত্র মিথিলাকে মিথ্যে ভরা ভুল রূপালি জগত এর চাকচিক্য দেখিয়ে উৎসাহ দিয়ে.....

সিল্ক স্মিতাকে নিয়ে বানানো মুভিতে সিল্কের চরিত্রে অভিনয় করা মেয়েটির একটা ডায়লগ ছিল " ফিল্ম শুধু তিনটা জিনিসে বিক্রি হয়। এন্টারটেইনমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট, আর এন্টারটেইনমেন্ট।" তারপর নিজের শরীরের এস্যেটগুলো দেখিয়ে বলেছিল "আর আমিই এন্টারটেইনমেন্ট "। এটা দেখে কার কি মনে হয়েছে জানি না পুরুষ বলে আমার মাথাটা নিচু হয়েছিল। আর মুভির শেষে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল।

শেষটা শাহরুখ খানের একটা মুভির ডায়লগ দিয়াই করি। কিছুদিন আগে শাহরুখ খানের একটা মুভি দেখলাম সেখানে শাহরুখ খান একটা মেয়েকে বলে " মাঝে মাঝে আমরা কঠিন রাস্তা চুজ না করে সহজ রাস্তাও চুজ করতে পারি, কারণ সহজ রাস্তা সহজ হয়" কিন্তু আমি বলি "আমাদের জন্য সবসময় ইজি অপশনটা বেটার অপশন হয় না, সহজ রাস্তা মাঝে মাঝে আমাদের ভুল ডিরেকশনে নিয়ে যায়"।

  • এবিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.