Sylhet Today 24 PRINT

মোবাইলের অফার বিড়ম্বনা!

মহি উদ্দিন |  ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মোবাইল ফোন ছাড়া যদি জীবন চিন্তা করি তাহলে কেমন হয়? অবশ্যই আমাদেরকে চলে যেতে হবে হবে পিছনে। মোবাইল ফোনের বিস্তার খুব বেশি দিন আগের নয়।একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেও মোবাইল ফোন এত সহজলভ্য ছিল না।আমাদের যাদের জন্ম বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে, তারাও মোবাইলবিহীন জীবন দেখেছি।যেমন- রাতে কেউ মৃত্যুবরণ করেছে, সকালে কাউকে পাঠিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের মৃত্যুর খবর জানাতে হয়েছে। অথবা মাইকিং করার পর পাড়া-প্রতিবেশি, আত্মীয়- স্বজনেরা খবর পেয়েছেন।এই হচ্ছে নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের জরুরী যোগাযোগ মাধ্যম।উচ্চবিত্ত কিংবা শহরে প্রতিষ্ঠিত মানুষের হিসাব ভিন্ন।

আনুমানিক ২০০০ সালের দিকে গ্রামে পল্লীফোনের যাত্রা শুরু হয়। তখন একটি পাড়ায় কিংবা পুরো গ্রামে একটি বেশি হলে দুইটি পল্লীফোন সেট ছিল। তাও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে। তাছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ের বাজারে থাকত একাধিক ব্যবসায়িক পল্লীফোন। সময়ের ব্যবধানে সবকিছু পাল্টে গেছে। পাল্টে গেছে ইতিহাস। এবং সে ইতিহাস সকলেরই জানা।

পূর্বে ইন্টারনেটের যে ধারণা ছিল, সে ধারণাও আজ পাল্টে গেছে।মানুষের ধারণা ছিল- ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার প্রয়োজন।এখন মোবাইলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। মোবাইলে পূর্বেকার সে তাঁর প্রযুক্তিরও দরকার হয় না। সিম কার্ডই যথেষ্ট। কল- মেসেজের পাশাপাশি সিম কার্ড দিয়ে ইন্টারনেটের সব কাজও সারা যায়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা বিল পরিশোধ করলেও, সিম কোম্পানিগুলোর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারি না।

তথাপি, সিম কোম্পানিগুলোর কিছু কার্যক্রমে গ্রাহকরা যে বিরক্ত সে ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিককথা লিখলে কৃতঘ্নতা হবে না মনে করছি। যেমনটা আমরা লক্ষ করি সিম কোম্পানি থেকে আসা প্রতিদিনের মেসেজে। মেসেজ অফার, মিনিট অফার, ডাটা অফার!
দুনিয়ার সব অফার!

এইসব অফারের মেসেজে গ্রাহকরা যে বিরক্ত তা-কি কোম্পানিগুলো বুঝতে পারে না নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে? আর মেসেজ কি একদিন- দুইদিন পাঠায়? দিনে পাঁচ- সাতটা মেসেজ না পাঠালে কোম্পানিগুলা যেন প্রাণে বাঁচে না। বিরক্ত হয়ে একবার এক কোম্পানির ফেইসবুক পাতায় “অপ্রয়োজনীয় মেসেজ” না পাঠাতে অনুরোধ করলাম। প্রতি উত্তরে হাবিজাবি কি কি ডায়াল করে অনুসরণ করতে নির্দেশনা পেলাম।

আবার প্রশ্ন করলাম, মেসেজগুলা কি আমি চালু করেছি? কোন সদুত্তর পেলাম না।

কোম্পানিগুলার কাছ থেকে মানুষ সিম কিনেছ, সে কথা সত্য। সিম কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় মেসেজ গ্রাহককে পাঠাবে, তাও প্রত্যাশিত। কিন্তু যখন তখন ওয়েলকাম টোনের জন্য ফোন, টেলি-মেডিসিনের প্রচারের জন্য মেসেজ গ্রাহকের কাছে নিশ্চয় বিরক্তির কারণ। প্রত্যেক মানুষের কিছু প্রাইভেসি আছে, তাই না? ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আইনও আছে। কিন্তু মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাছে সে আইন কতটুকু রক্ষা পাচ্ছে?

একথা সত্য- গ্রামনির্ভর বাংলাদেশের নব্বই শতাংশ মানুষ কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর ধূর্ততা বুঝে উঠতে পারে না। তাদেরকে ফোন দিয়ে যদি বলা হয় আপনি ‘দুই তারপর তিনটি শূন্য’ চাপুন, তারা ঠিক তাই করেন। অতঃপর সহজ- সরল মানুষগুলাকে বলতে দেখা যায়, ভাই, দেখেনতো আমার মোবাইল থেকে প্রতিদিন টাকা কেটে নেয় কেন?

সিম কোম্পানিগুলো যদি বলে এটা তাদের ব্যবসা, তাহলে বলতে হবে ‘বিজনেস এথিকস’ তো আছে। সেটা তারা কতটুকু গুরুত্বের সাথে দেখছেন? নাকি মুনাফাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য?

সময় এসেছে বিষয়টি ভেবে দেখার। সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখবেন কি?

  • মহি উদ্দিন: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.