Sylhet Today 24 PRINT

‘নারী দিবস’ নয়, হবে ‘নারীর সম-অধিকার দিবস’

আশিক শাওন |  ০৮ মার্চ, ২০১৭

‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’টি মূলত কর্মক্ষেত্রে নারীদের সম-অধিকার আদায়ের দীর্ঘ লড়াইয়ের মাইলফলক হিসাবে পালিত স্মারক দিবস।

আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, ইউক্রেন, ইরিত্রিয়া, উগান্ডা, উজবেকিস্তান, কম্বোডিয়া, কাজাখস্তান, কিউবা, কিরগিজিস্তান, গিনি-বিসাউ, জর্জিয়া, জাম্বিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, ভিয়েতনাম, মলদোভা, মন্টেনিগ্রো, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া এবং লাওস - বিশ্বের এই ২৪টি দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবসটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে পালন করা হয়।

এছাড়াও চীন, নেপাল, মাদাগাস্কার এবং মেসিডোনিয়ায় শুধুমাত্র নারীরা সরকারি ছুটির দিন হিসেবে এই দিনটিতে ছুটি ভোগ করেন।

আধুনিক যুগে নারী-পুরুষ কর্মক্ষেত্রের সর্বস্তরে সমান অধিকার ভোগ করলেও নারীদের এই সমান অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে নারী শ্রমিকের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে।

১৮৫৭ সালে পুরুষ শ্রমিকদের সাথে মজুরির বৈষম্য, অনিয়মিত ও অনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, দৈনিক ১২ ঘণ্টা শ্রম এবং কারখানার নোংরা, বিপজ্জনক ও অসহ্যকর কর্ম-পরিবেশের প্রতিবাদে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে সুতা তৈরির কারখানার নারী শ্রমিকরা মিছিল-সমাবেশ করলে সরকার ও মালিকপক্ষ তাতে বাধা ও দমন-পীড়ন চালানোর পাশাপাশি অনেককে আটক করে জেল-জরিমানা করে। এর ধারাবাহিকতায় ১৮৬০ সালে নারী শ্রমিকদের জন্য আলাদা ইউনিয়ন গঠনের প্রচেষ্টা চালানো হলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নারী শ্রমিক সম্মেলন, ১৯০৭ সালে স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত সম্মেলন ও ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট উইম্যান ইউনিয়ন’এর প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দাবী উঠে কর্মক্ষেত্রে সম-অধিকারের এবং পালিত হয় ধর্মঘট; যার প্রেক্ষিতে পরের বছর ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ প্রথমবারের মতো নিউইয়র্কে “কর্মজীবী নারী দিবস” পালন করা হয়।

পরবর্তীকালে, ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে, যাতে বিশ্বের ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন, প্রতিবছর ‘আন্তর্জাতিক নারী সম-অধিকার দিবস’ পালনের প্রস্তাব দেন সভাপতি ক্লারা জেটকিন এবং সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৯১১ সাল থেকে নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে সম-অধিকার দিবস হিসেবে একটি দিন পালিত হবে।

এর ফলে ১৯১১ সালে সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, অষ্ট্রিয়া ও জার্মানিতে নারীরা মিছিল ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো উদযাপন করে আন্তর্জাতিক নারী সম-অধিকার দিবস, যদিও সেদিনটি ছিলো মার্চ মাসের ১৯ তারিখ!

এরপর, ১৯১৪ সালে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে ৮ মার্চ তারিখটি ‘রবিবার’ হওয়ায় এই দিনটিতেই নারীর সম-অধিকার দিবস পালিত হওয়ার প্রেক্ষিতে পরের বছর হতে এই দিনটিতে দিবসটি স্থায়ী হয়ে যায়।

নারী সংগঠনগুলোর অব্যাহত দাবীর মুখে ১৯৪৫ সালে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সানফ্রানসিসকোর ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি’ চুক্তিটিতে নারী অধিকারের যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনায় নেয়া হয়। এবং অবশেষে জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে এই দিবসটি পালনে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়ে ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদে ‘৮ মার্চ - আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ পালনের লক্ষ্যে উত্থাপিত বিল অনুমোদন করে, যেটি ১৯৮৪ সালে বিশ্বব্যাপী “আন্তর্জাতিক নারী দিবস” ঘোষণার মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে স্বীকৃতি লাভ করে!

অর্থাৎ, প্রথমদিকে আন্তর্জাতিক নারীর সম-অধিকার দিবসটি পুঁজিবাদী ও পুরুষতান্ত্রিক কূট-কৌশলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পরিগণিত হলো!

  • এবিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.