Sylhet Today 24 PRINT

হাওরের কৃষক-হাওরের কৃষি: লুটপাট ও ধান্দা নিয়ে যৎকিঞ্চিত

শামস শামীম |  ১৪ এপ্রিল, ২০১৭

‘ঘরও বাইঅক্ত খানি নাই, কিলা যে খাইতাম-চলতাম বুঝরামনা’।
বুক এফোঁড়ওফোঁড় করা এই কথা ঘন-নিঃশ্বাস নিয়ে প্রমিলা বর্মণ যখন বলছিলেন তখন তার দৃষ্টি শনার হাওরের দিকে। পিছনে ডুবে যাওয়া খরচার হাওর বিস্তৃত জলের কান্তার। চোখের সামনে দুটি হাওরের ফসল ডুবে যাওয়া দেখে এই নারী এখন নির্বাক। ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে তার কাচা ধান। তার মতো হাজার হাজার মানুষেরও একই অবস্থা। আধিভাগা কিষাণির মনের এ কথাই এখন অকালে ফসল হারানো হাওর-ভাটির কয়েক লাখো কৃষকের মনেরই প্রতিধ্বনি। যার প্রতিধ্বনি হচ্ছে তাদের মনে।
একমাত্র ফসল হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। এক অনিশ্চিত জীবনের মুখোমুখি দাড়িয়ে আছেন। নিজের খাদ্যসংকটের সঙ্গে চাষবাস সচল রাখা গবাদি পশু বাঁচানো নিয়ে টেনশনে তারা।

হাওর। এই অঞ্চলকে এই বদ্বীপে অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। স্থলজ ও জলজ জীব-বৈচিত্র্যের সঙ্গে এখানকার মানুষের মনও অনিন্দ্য সুন্দর। প্রকৃতি আপন বৈশিষ্ট্যে উদারতা দিয়ে তৈরি করেছে মানুষের মনোজগৎ। ভূমির বহুবর্ণিল গঠনের সঙ্গে মানুষের মনোজগতেও রঙে ঢঙে দোলাচল দেয়। তাই নিকট অতীতে এতো বাউল মরমি মহাজনদের প্রোজ্জ্বল উপস্থিতি দেখা যায়। যাদের এক একজন মানবতার মহান অবতার হয়ে আছেন। তারা প্রকৃতির ছবির সঙ্গে রক্তমাংসের মানুষের ছবিও এঁকেছেন। উপস্থাপন করেছেন প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী কৃষককে। যারা রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সভ্যতার চাকা সচল রেখে চলেছে। কিন্তু সেই চাকায় হাওয়া লাগিয়ে যারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেই প্রতিজন, বিশেষ করে রাষ্ট্রকাঠামোর পরিচালকগণ বরাবরই তাদের ঠকিয়ে চলছে। তাদের ব্যবহার করে নিজের আখের গোছাচ্ছে। এটা যেন কৃষকের বঞ্চনার এক চিরন্তন ভাগ্যলিপি।

এই অঞ্চলের মানুষ ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি দাড়িয়েও নিকট অতীতে অনেক লড়াই করেছে। ঔপনিবেশিক শাসক রবার্ট লিন্ডসের ‘সিলেটে আমার ১০ বছর’ গ্রন্থে তার ছিটেফোঁটা দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বপর্যটক হিউয়েংসাংয়ের রচনায়ও হাওর-ভাটির মানুষ তথা কৃষকের বয়-বাতাস পাওয়া যায়। তারা বিস্মিত হয়েছেন সংগ্রামী মানুষের জীবন-যাপন দেখে। দূর থেকে সামান্য সময়ের জন্য দেখে বিস্মিত হলেও এই অঞ্চলের মানুষের অফুরান জীবনী সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিলনা। প্রকৃতি বশে আনতে না পারলেও কৃষকরা আবহমানকাল থেকে সংগ্রাম করে বৈরি প্রকৃতির সঙ্গে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে তার ছাপ যুগে যুগে ইতিহাসের পাতায় রেখে গেছেন। সেই সংগ্রামের প্রোজ্জ্বল উত্তরাধিকারিত্ব নিয়ে এখনো লড়াই করে যাচ্ছেন ঠকা খাওয়া কৃষক। আজকের এই হাইটেক যুগে এসেও তারা লড়াই অব্যাহত রেখেছে। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে অনেক সময় জয়ী হলেও লোভী মানুষের কাছে তারা প্রতারিত হচ্ছে। বিশেষ করে বোরো মওসুমে হাওরের ফসলরক্ষায় প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে এখানকার মানুষকে। বহুমুখি সংকটে তারা হাবুডুবু খাচ্ছে। প্রণোদনা পাচ্ছেনা।
মাটিমূল ও পানিমূল মানুষের প্রতিনিধি কৃষক। রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সভ্যতার চাকা সচল রেখে চলছে সেই আবহমান কাল থেকেই। অসংগঠিত এই কৃষকদের নিয়ে রাজনীতি করে চালবাজ বুর্জেয়া। অধিকার আদায় নয়, বলা যায়Ñতারা কৃষকদের পক্ষে মুখে কথা বলে; কিন্তু তার পুরো ফায়দা লুটে এবং নগদ মালকড়ি ঢুকায় পকেটে। প্রকৃতপ্রস্তাবে কৃষক তেমন লাভবান হয়না। সরকার প্রধান বা কোন নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গেও কখনো এই চাষামালকোচাদের দেখা হয়না। বরং সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কৃষক বানিয়ে বিভিন্ন দিবসে যাদের পুরস্কৃত করে তারা প্রকৃত কৃষক নয়, দালাল বা মধ্যস্বত্তভোগী। কৃষি বিভাগের সঙ্গে দহরম মহরম আছে এমন লোককেই বাছাই করা হয় পুরস্কারের জন্য। প্রকৃত কৃষক আড়ালেই থাকে। এমনও রেকর্ড আছে এদেশের জন্মবিরোধী দালালের সন্তান কৃষক না হয়েও দেশের জন্মদাতা ‘বঙ্গবন্ধুর’ নামে পুরস্কার বাগিয়ে আনে! আরো কথা আছে, কৃষিব্যাংক থেকে যারা ঋণ নেয় তাদের অনেকই প্রকৃত কৃষক নয়, জমির মালিক বটে...চাষবাসের সঙ্গে অনেকটাই সম্পর্কহীন।
এই বঙ্গদেশের প্রকৃতির কারণে যতটা পিছিয়ে তার চেয়ে আরো বেশি পিছিয়ে মানুষের কারণে। এই কারণে যুগ যুগ ধরে আমাদের হাওর-ভাটির লাখো কৃষকের অবস্থা করুণ। হাওরের কৃষকদের ফসলরক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড ফসলরক্ষার বদলে লোভে পড়ে ফসলের বিনাশ করছে। তদের লাগামহীন দুর্নীতির কারণে প্রতি বছর চোখের সামনে ফসল ডুবে। তারা আহাজারি করেন; বুক চাপড়ান, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

সর্বহারা কৃষক সব হারিয়ে ভাসমান জীবন বেছে নেবে। অনিশ্চিত হয়ে পড়বে জীবন। সন্তানের লেখা-পড়া লাটে উঠবে। এভাবে ফসল হারিয়ে, মহাজনের সুদের তাড়া ও সরকারি-বেসরকারি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কত কৃষক প্রতি বছর বাস্তুভিটাচ্যুত হয়, ভাসমান জীবন বেছে নেয় তার কোন পরিসংখ্যান নেই। বিদেশি দাতারা রাষ্ট্র ও সরকারকে ব্যাটাগিরি দেখায়, নানা শ্রেণির মানুষের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ নেয় কিন্তু কৃষকদের পাশে তাদেরকে দাড়াতে দেখা যায়না। বরং কিছু ধান্দাবাজ এই কৃষকদের ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে মুনাফা লুটতে দেখা যায়। এভাবে কৃষক ঠকানো নানা ফন্দিবাজদের হর হামেশাই আমরা দেখছি। কৃষকদের কথা মাথায় রেখে যেসব উদ্যোগ প্রকল্প টেবিলে বসে নেওয়া হয় তা হয় কৃষিবিনাশী। আশির্বাদের জলকপাট লোভের কারণে পরিণত হয় অভিশাপে।

কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষতিপূরণ পায়না। সরকার তাদেরকে যেসব উপকরণ দেয় তাও ঢুকে মধ্যস্বত্তভোগীদের ঘরে। গত দুই বছর ধরে সরকার থোক বরাদ্দ দিয়ে বিনা লাভে কৃষকদের ট্রাক্টর দিচ্ছে। সেটা কোন কৃষক পাচ্ছেনা, পাচ্ছে ব্যবসায়ী। একনেকে গত দুই বছর আগে ‘শস্যের নিবিড়তাকরণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্পে কৃষকদের নানামুখি সহায়তা ও সচেতনতার উদ্যোগ নিয়ে সরকার প্রায় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর হাওয়াই বাস্তবায়নও চলছে! কিন্তু শস্যের কি নিবিড়তা হচ্ছে তা জানেনা কৃষক। ওই প্রকল্প সম্পর্কেও তারা ওয়াকিবহাল নন। তাহলে এই কোটি কোটি টাকা ঢুকছে কার পকেটে!

পাউবো কৃষকদের ফসলরক্ষার কথা বলে বছরের পর বছর দ্বিগুণ বরাদ্দ আনছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছর থেকে এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সরকার প্রায় ২৫০ কোটি টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছে; এক পরিসংখ্যান জানিয়েছে। উল্লেখিত সময়ে তিনবার সম্পূর্ণ ফসল হারিয়েছে কৃষক, অর্ধেক ফসল হারিয়েছে আরো তিনবার। পুরো ফসল কখনোই গোলায় তোলতে পারেনি। ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রতিশ্রুতি আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও পানি নিষ্কাশন প্রকল্পে প্রায় ৭০২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর এই কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কাজ শুরু না করেই পাউবো প্রায় ২৫-৩০ ভাগ কাজ দেখিয়ে সমপরিমাণ বিল তুলে নিয়ে গেছে। এখন সময় বাড়ানোর আবেদন করে বাকি বরাদ্দ লোপাটেরও ধান্দা করছে। জলের তলের কাজ-দেখার সুযোগই নেই। এই হাওর, এই জল তাদের ধান্দা ও দুর্নীতির জন্যই আশির্বাদই বলা যায়। শুধু এই মতলববাজ কর্মকর্তারাই নয় কৃষকের এই অসহায় সময়ে অমানুষের চরিত্র নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে স্থানীয় মুনাফাখোর ব্যবসায়ী। সাম্প্রতিক কৃষকের দুর্দশার সুযোগ নিয়ে তারা চাল, আটাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে দেড়গুণ। সবাই কৃষকের রক্ত চুষবে এটাই যেন নিয়তি, এটাই যেন নিয়ম!

পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৬০ সনে সুনামগঞ্জে কার্যক্রম শুরু করে। কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই এই লুটপাট চলছে। গত দেড় যুগ ধরে লুটপাট মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বড় দুটি দলের ঠিকাদার ও ক্ষমতাসীন জনপ্রতিনিধিরা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে প্রকল্প। যেখানে বাঁধ ও জলকপাট দেওয়ার কথা না, সেখানে প্রকৃতি বিনাশ করে সেটাই বাস্তবায়িত হচ্ছে। হাওরের ফসলরক্ষা বাধের দুর্নীতি এখন মচ্ছবে পরিণত হয়েছে। লুটেরারা যেন বৈরি প্রকৃতিকে সর্বক্ষণ আহ্বানই করেন। আসো আসো আমাদের লুটপাটকে বৈধতা দিয়ে যাও!

১৯৭৭ সনে চৈত্রের শুরুতে এবারের বিপর্যয়ের মতো ভয়াবহ বিপর্যয়ের দেখা পেয়েছিল এই অঞ্চলের কৃষক। সেবার কিছু ফসল গোলায় তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন তারা। কারণ তখনো ধানে থোর আসেনি, তাই কিছু ফসল বেচে গিয়েছিল। চল্লিশ বছর পরে আবার সেই দুর্যোগের মুখে কৃষক। এবার একদম নিঃস্ব। থোর আসার সময়ে অবহেলা, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং প্রকৃতির খেয়ালিপনায় সব ফসল তলিয়ে গেছে। শনির হাওর নামের একটি হাওর যুদ্ধ করে এখন পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছেন কৃষক। শেষতক তারা জয়ী হতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তারা। তবে প্রকৃতির সঙ্গে বরাবরের মতো এবারও কঠিন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন তারা। গেলবার কঠিন লড়াই করেও অর্ধেক ফসল বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন জেলার কৃষক। যদিও প্রশাসনের লুটপাট করেও পেট ভরেনি। তাই তারা কৃষকের অর্ধেক ফসলকেও ঈর্ষা করে ক্ষতির পরিমাণ আরো কমিয়ে দেখিয়েছিল। কেউ ১৫, কেউ ২০, কেউ ২৫ ভাগ ক্ষতি উল্লেখ করেছিল। অথচ প্রকৃত বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬০ ভাগের কাছাকাছি।

এবার ক্ষতির পরিমাণ রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চোখের সামনে একের পর এক তলিয়ে গেছে ফসল। জেলা প্রশাসন পুরো ফসলহানীর ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও হাবভাবে পুরো ক্ষতির ইঙ্গিতই দিচ্ছে। কিন্তু কৃষক নিয়ে যাদের কায়-কারবার সেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরাবরের মতো এবারও কৃষকের প্রকৃত ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। তাদের চোখের সামনে অথৈ জলের হাওর দেখা গেলেও তাদের টেবিলে বসা তৈরি হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ এখনো অর্ধেক! পুরো দেখার হাওরে এক ছটাক ধান ডুবতে বাকি নেই, বাড়ির আঙ্গিনার ক্ষেতটুকু জলে ভরোভরো। কিন্তু কৃষি বিভাগ এই অথৈ জলের কান্তারে অলৌকিক হিসেবে বাঁচিয়ে দিয়েছে এই হাওরে অর্ধেক ফসল! এভাবে নলুয়া, মইয়া, কানলা, মাটিয়ান, মহালিয়া, বরাম, চাপতি, সোনামোড়ল, চন্দ্রসোনারতাল, শনার হাওরসহ প্রায় সবকটি হাওরেরই অর্ধেক ফসল কৃষি বিভাগের মতে বেচে গেছে!

জনপ্রতিনিধি, কৃষক ও সাধারণ মানুষের চোখে ভাসছে পানি-থৈথৈ হাওর। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা দেখছেন অর্ধেক ক্ষতি। আমরা তাহলে আন্ধা! তারাই ফুলচোখে দেখেন! এভাবে কৃষক ঠকিয়ে উপর মহলে আস্থায় এসে প্রমোশন ভাগাচ্ছে মঙ্গা এলাকায় জন্ম নেওয়া আমলারা। অথচ তারা নিজ এলাকার মঙ্গাকে নিয়ে  সোচ্চার! কিভাবে জাতীয় মিসকিন করা যায় তার প্রচেষ্টাই করে যাচ্ছে।

ঠকতে ঠকতে ঠেকতে ঠকতে খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে সুনামগঞ্জের তিন লাখ ৩৩ হাজার কৃষক পরিবার। গত ১০ এপ্রিল মাত্র একমাসের জন্য ৫ কেজির বিশেষ ওএমএস সুবিধা চালু করলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। যারা কখনো লাইনে দাঁড়ায়নি ‘বাইঅক্ত খানি’ না থাকায় লজ্জার মাথা খেয়ে এখন তারাও লাইনে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু মুখ লুকানো এসব মানুষ চাল আটা না পেয়েই খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছে। কে তার পাশে দাঁড়াবে মমতাসিক্ত হাতে!

হাওরের দিকে নির্বাক থাকিয়ে থাকা প্রমিলার চোখে আমি কোন আলো দেখিনা। দেখি এক নিকষ কালো অন্ধকার। ধেয়ে আসছে তাঁর মতো আধিভাগা লাখো কৃষকের দিকে। নিজের ক্ষুধা যন্ত্রণা ভুলে গোখাদ্য নিয়ে চিন্তিত রগুণাথের পাণ্ডুর মুখের দেখি থাকাতে পারিনা। উত্তাল উত্তুরে হাওয়া বইলে বুকে কাঁপন ধরে চেয়ারম্যান কামরুলের। এই বুঝি ভেঙ্গে যাচ্ছে আহাম্মকখালি, লালুরগোয়ালা বাঁধ। শনির হাওরে গত ১৫ দিন ধরে ফসলরক্ষার কাজে অক্লান্ত যোদ্ধা ‘মনেসা’র রোদজ্বলা মুখের দিকে থাকিয়ে আমি ভরসা পাই। হারতে হারতে, ঠকতে ঠকতে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির কৃষক তাহলে মনেসার মতো বুকে বল নিয়ে ওঠে দাঁড়াবে। মেরুদণ্ডভাঙ্গা কৃষক ধনুক ছিলার মতো দাঁড়াবেই!

ভবিষ্যতে সিনা টান টান করে দাঁড়ানো সেই কৃষককে আগাম স্যালুট।

  • লেখক: কবি ও সাংবাদিক; সংগঠক ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.