Sylhet Today 24 PRINT

তারচেয়ে বরং ঘরেই থাকুন, উপভোগ করুন ধর্ষিতার আর্তনাদ!

সৈকত আমীন |  ১১ মে, ২০১৭

গত এপ্রিলের ২ তারিখের কথা। নিজের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে গৌরীপুর থানার ব্যারাকে আত্মাহুতি দেন কনস্টেবল হালিমা বেগম। টুকটাক ডায়রি লিখতেন হালিমা। ডায়রি পাতা থেকে জানা যায় তারই সহকর্মী সাব-ইন্সপেক্টর 'মিজানুল ইসলাম' দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিলেন তিনি, নিয়মমাফিক থানার বড়কর্তা 'দেলোয়ার আহমেদের' কাছে অভিযোগ ও করেছিলেন, কর্তাবাবু তা আমলে নেননি। হয়তো ধর্ষিত হওয়া ও ধর্ষিতা হওয়া অনেক বড় অপরাধ ছিল তাই। অবশেষে বড্ড অপমান, বিচারহীনতা, পাশবিকতা, ডায়রির পাতায় চাপা-কষ্ট আর একঝাঁক ঘৃণা নিয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানালেন একজন আইনরক্ষা কর্মী, ধর্ষিতা পুলিশ সদস্য!

অথবা মনে করে দেখুন সেই ৮ বছরের কন্যা আয়শার পিতার কথা। গত ২৯ এপ্রিল ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ধাবমান তিস্তা এক্সপ্রেসের সামনে মেয়ে কে নিয়ে বুক পেতে দেওয়া ছাড়া আর কীইবা করার ছিল হযরত আলীর? একজন পুলিশ সদস্যই যেখানে বিচার পায় না! আর সে তো গরীব মানুষ।

বাংলাদেশের গরীবরা খুব বেশিই গরীব, নারীবাদ নিয়ে তাদের খুব একটা বোঝাপড়া নেই, তবে আত্মসম্মানবোধটুকু তাদের আছে, তাদের কাছে মেয়ে মানেই আত্মসম্মানের সম্মানের প্রশ্ন।

মেয়ে যখন ধর্ষিত প্রায় এবং বিচার-শালিসে গরীবের মাথা নত করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না সেখানে তিস্তা এক্সপ্রেসই একমাত্র বিচার মনে হয় হযরত আলীদের, বুক ভরা কথা নিয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানায় তারাও, হয়তো ইলিয়াসের কোনো গোপন উপন্যাসে কোনো একদিন আমরা খুঁজে পাবো সেইসব কথা।

আরেকটু পিছনের দিকে যাই চলুন। ২৬ আগস্ট, ২০০৩ এর কথা, পার্বত্য শান্তিচুক্তি তার অনেক আগেই সম্পাদিত হয়ে গেছে, এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে হঠাৎ জানা যায় দশজন পাহাড়ি আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, এছাড়াও, দাদির কাছ থেকে মাত্র নয়মাসের শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে ধর্ষণ করেছেন আমাদের গর্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ধর্ষিতাদের নাম জানা গিয়েছিল, নয় মাসের ধর্ষিত মৃত শিশুরও নাম ছিল, ধর্ষকদের বোধহয় কোনো নাম ছিল না, এ যাবৎকালে তাদের কারো নাম জানা হলো না, একই প্রক্রিয়ায় পার পেয়ে গেল নাম না জানা কত শত ধর্ষক তার হিসাব আমাদের অজানা, তবে কোনো আদিবাসী নারীই ধর্ষণের বিচার পেল না।

এ মহাকালের আরেক উপাখ্যান সোহাগি জাহান তনু।

কত গলা ফাটিয়ে স্লোগান দিয়েছি তাইনা? ঢাকা টু কুমিল্লা রোড মার্চ, ছাত্র জোটের অর্ধদিবস হরতাল, হরতালের সমর্থনে রাস্তায় নেমে তলপেটে পুলিশের বুটের লাথি খাওয়া স্কুলছাত্রী নাজিয়া, আরো কত স্মৃতি ঢেউ দিয়ে যায় তনুর নামটা শুনলেই!

অথচ ভেবে দেখেছেন! সেনাসদস্য কর্তৃক ধর্ষণের পর তার মায়ের হাতে ২০ হাজার টাকা ধরিয়ে তনু দ্বিতীয়বার ধর্ষণ এবং কিছু জমি দানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৃতীয় বার রাষ্ট্রকর্তৃক তাকে যে গণধর্ষণ করা হলো?

এক বছর পেরিয়েছে, তনুও বিচার পায়নি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রিপোর্ট অনুসারে প্রতিদিন এই দেশে তিনটা করে ধর্ষণ হয়, শুধু গত এপ্রিল মাসে ৮৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৪ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪ জনকে, এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২ জনকে।

আপনারা বরং চুপটি করে ঘরে ঘাপটি মেরে থাকুন। আমাদের পিতা মাতার মতো আপনারাও ঘরে তুলে রাখুন ধর্ষিতাদের লাশের ইতিহাস। অথচ আপনার হাতে অজস্রবার ইতিহাস বদলাবার সুযোগ এসেছে, হয়তো আজ সংঘবদ্ধ রাজপথে নেমেই আপনারা বদলে দিতে পারেন আপনাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের ইতিহাস।

বাদ দিন! তার চেয়ে আপনি বরং ঘরেই থাকুন, উপভোগ করুন মা, মেয়ে, প্রেমিকা অথবা ধর্ষিতা বোনের বাসাতে ভেসে বেড়ানো করুণ আর্তনাদ এবং পারলে ঘরের ছেলেগুলোকে জানাজার নামাজ পড়ানো শেখান। এতো লাশ, এতো ধর্ষিতার লাশ! জানাজা পড়িয়ে কবর দেবেন না?

  • সৈকত আমীন: এক্টিভিস্ট।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.