Sylhet Today 24 PRINT

বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও একের পর এক ধর্ষণ

তপন কুমার দাস |  ১১ মে, ২০১৭

সুরক্ষিত এলাকায় খুন হওয়া সোহাগী জাহান তনুর কথা কি মনে আছে? উত্তরটা খুব সহজ। প্রতিনিয়ত ইস্যু সৃষ্টির এই দেশে চাপা পড়েছেন সোহাগী জাহান তনু। বিচার হয়নি এখনও। ভবিষ্যৎ অন্ধকারে।

তনু বিচার দাবিতে আন্দোলন- আলোচনাও থেমে গেছে। এখন বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষিতের ঘটনা নিয়ে। এই বীভৎসতার বিচার দাবি উঠেছে সর্বত্র। হয়ত কিছু দিনের মধ্যে নতুন কোন ইস্যুতে চাপা পড়বে ধর্ষণের শিকার বনানীর দুই শিক্ষার্থীর ফাইলও। লাল ফিতায় বন্দি হয়ে যাবে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত দুই শিক্ষার্থীর ধর্ষণের এ ঘটনা।

যেমনটি ইতিমধ্যে ঘটেছে ট্রেনের নিছে আত্মাহুতি দেওয়া হযরত আলী ও তাঁর কন্যার বেলায়। হয়েছে পুলিশের নারী কনস্টেবল হালিমা খাতুন, জুরাইনে বিদ্যালয়ে আটকে কিশোরীকে গণধর্ষণের বেলায়।

পুলিশের নারী কনস্টেবলের আত্মহনন চাপা পড়েছে হযরত আলীতে। হযরত আলী পড়েছেন বনানীর শিক্ষার্থীতে। বনানীর দুই শিক্ষার্থীর ঘটনা কোনটাতে চাপা পড়বে সময়ই বলে দেবে। ব্যস্ততার এ রাজ্যে আমরাও ভুলে যাব তাদের। কিন্তু এই ক্ষত কি করে ভুলবে নির্যাতিতার পরিবারগুলো। বিচার না পাওয়ার ব্যথা তাদের স্বজনরা বয়ে বেড়াবেন সারা জীবন।

তনু থেকে বনানীর দুই শিক্ষার্থীর মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে আমাদের সমাজে। যার সবটা গণমাধ্যমে আসে না। নারীর প্রতি সহিংসতা এবং একই সঙ্গে বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেন আমাদের দেশ ও সমাজের সাধারণ চিত্র। ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদের ঝড়ের পরও তনু হত্যার বিচার হয়নি এখনও। তাই বিচারহীনতার সংস্কৃতির এই রাজ্যে বিচার চাইতেও এখন লজ্জা পাই!

নারী নির্যাতন এদেশে এখন কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং তা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সম্ভবত পুরুষশাসিত এ সমাজব্যবস্থার শুরু থেকেই নারী নির্যাতনের সূচনা হয়েছিল এবং আজ অবধি তা অব্যাহত রয়েছে। আর নির্যাতনের শিকার বেশির ভাগ নারী জানাজানি হওয়াকে নিজের ব্যক্তিগত লজ্জা ও পরিবারের জন্য মর্যাদাহানিকর মনে করে বলে মুখ বুজে সব সয়ে যায়। ফলে নির্যাতনের অবাধ সুযোগ মেলে।

এর মধ্যে যারা লোক লজ্জা ছেড়ে নির্যাতিত হওয়ার কথা প্রকাশ করেন তারা ভদ্রবেশী শিক্ষিত ও প্রভাবশালীদের কারণে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন। বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো হয়রানির শিকার হন পদে পদে। অতীতের কয়েকটি ঘটনা আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে।

আমাদের দেশে বর্তমানে ভদ্রবেশী অপরাধের মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে। সমাজে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে এদের অবস্থান। এরা সমাজে শিক্ষিত ও বেশ প্রভাবশালী। সাধারণ অপরাধীর চেয়ে এরা আরো ভয়ঙ্কর, আরো ক্ষতিকর।

এ দেশে দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার চলছে প্রতিনিয়ত। দুর্বলরা মুখ বুজে সব সহ্য করছেন। সমাজের ক্ষমতার দাপটের এ মানুষগুলোর সামনে অধিকাংশ নির্যাতিত মানুষ অসহায় বোধ করেন।

নারীর প্রতি সহিংসতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। অব্যাহত নারী নির্যাতন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আমরা আইনের শাসন থেকে পিছিয়ে রয়েছি কতটা। আরও নির্দেশ করে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে। এটাই এখনও আমাদের সবচেয়ে বড় লজ্জার কথা। এই লজ্জা দূর করা এখন সময়ের দাবি।

  • লেখক : সাংবাদিক

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.