Sylhet Today 24 PRINT

জাফর ইকবালকে নিয়ে কটূক্তি ও একজন প্রাক্তন ছাত্রের প্রতিক্রিয়া

সুশান্ত দাস গুপ্ত |  ১০ মে, ২০১৫

মুখে জয় বাংলা আর শরীরে মুজিব কোট এই দুইটা জিনিস থাকলেই আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করা যায়না। আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু অনেক বড় বিষয়।

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। কাছে থেকেই দেখেছি অনেক কিছু। দেখেছি সারাজীবন বিএনপি জামায়াতের রাজনীতি করা যুবকটি কীভাবে আস্তে করে আওয়ামী লীগের সাথে মিশে যায়, দেখেছি উঠতে বসতে 'মালাউন' গালি দেয়া সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিটি কীভাবে 'জয় বাংলা' স্লোগান দেয়া শিখে যায়।

একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই মুখোশ পরা মানুষগুলো খুব বেশিদিন নিজেদেরকে মুখোশের আড়ালে রাখতে পারেনা। অসতর্ক মুহূর্তে কীভাবে কীভাবে যেনো এদের মুখোশটি খসে পড়ে, বেরিয়ে আসে আড়ালের জান্তব চেহারা।

মুখোশের আড়ালের অনেক চেহারাই দেখা হয়েছে। সর্বশেষ দেখলাম সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ সামাদ চৌধুরী কয়েস সাহেবের চেহারা।

কয়েস সাহেব কী বলেছেন দেখা যাক -‘আমি যদি বড় কিছু হতাম তাহলে জাফর ইকবালকে কোর্ট পয়েন্টে ধরে এনে চাবুক মারতাম। সিলেটের শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে সিলেটী ছেলেদের ভর্তি না করতে যতসব আইন কানুন করা হয়েছে। সে চায় না সিলেটের মানুষ শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হোক। ভালো ভিসি ছিল তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। সিলেটের মানুষ ফুলচন্দন দিয়ে তাকে প্রতিদিন পূজা করে।’

মানুষের বিদ্যা বুদ্ধি এবং সাধারণ জ্ঞানের দৌড় কতোটুকু হলে এরকম মন্তব্য করতে পারে ভেবে অবাক হচ্ছি।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সিলেটের গর্ব। খুব অল্প সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। এত অর্জনের পেছনে একটা নামের অবদান খুব মোটা করে লিখতেই হবে, নামটি হচ্ছে 'মুহম্মদ জাফর ইকবাল'।

কয়েস চৌধুরী হচ্ছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট সদস্য। আশা করি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দা দিয়ে হাঁটার সৌভাগ্য তার হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর জাফর ইকবালের অবদান কতটুকু সেটা তাকে একটু খোঁজ নেয়ার আহবান জানাই।

কয়েস চৌধুরীদের আবদার ছিলো শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেটীদের জন্য আলাদা কোটা সুবিধা দিতে হবে। এরকম আবদার আমাদের গর্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কতোটা ক্ষতিকর হবে সেটা বোঝার মতো সাধারণ জ্ঞান নেই বলেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন ধরে নিচ্ছি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে অসংখ্য সিলেটী ছাত্রছাত্রী নিজ যোগ্যতায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সুযোগ পেয়েছে, এখনও পাচ্ছে। কই? তাদের তো কোটা সুবিধার দরকার হয়নি! কোটা সুবিধার দরকার পড়তে পারে কিছু অযোগ্য অথর্ব লোকদের এবং তাদের সন্তানদের। জাফর ইকবালদের কখনো কোটা সুবিধা লাগেনা, তারা তাদের ছাত্রছাত্রীদের মেধার উপর বিশ্বাস রাখেন। এ কারণে তারা কোটা পদ্ধতির বিপক্ষে কথা বলবেন এটাই স্বাভাবিক এবং এতে অথর্বদের গাত্রদাহ হবে এটাও স্বাভাবিক।

বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন যায়গায় সিলেটের মানুষ তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেটীদের জন্য আলাদা কোটার আবদার করে কয়েস চৌধুরী সাহেব মূলত সিলেটীদেরই অপমান করলেন।

মাহমুদুস সামাদ চৌধুরীর বাবা ছিলো একাত্তরের পাকিস্তানের গণহত্যার সহযোগী শান্তি কমিটির প্রভাবশালী ব্যক্তি।অন্যদিকে ডক্টর জাফর ইকবাল নামটি আমাদের প্রজন্মের কাছে আলাদা গুরুত্ব বহন করে। জাফর ইকবাল স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে একটি সাহসী কণ্ঠ। তাঁর লেখায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন, স্বাধীনতার কথা বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলেন। এ কারণে জাফর ইকবাল নাম শুনে কাদের গাত্রদাহ শুরু হয় আমরা জানি। সমীকরণটা সহজেই মিলে যাচ্ছে।

আমি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিসেবে আমাদের প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে এমন কটূক্তির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এরকম ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার পর কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে থাকতে পারেনা। স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে এরকম বক্তব্য দেয়া আওয়ামী লীগের অবস্থানের সাথেও যায়না কোনোভাবেই। আমি অপেক্ষায় আছি এরকম একটি বিষয়ের যথাযথ সুরাহা হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.