Sylhet Today 24 PRINT

রাজবাড়িতে বিয়ের বাদ্য, ব্রিটেনজুড়ে উৎসব

জুয়েল রাজ |  ২০ মে, ২০১৮

ছেলেবেলায় ঘুম পাড়ানি কিচ্ছা কাহিনীতেই শোনা 'রাজবাড়ির বিয়ে'তে বছর ধরে চলে আয়োজন। মহা ধুমধাম। রাজ্যজুড়ে ঢোল পিটানো হতো। ঘোড়ায় চড়ে রাজ্যে রাজ্যে ছুটতেন রাজদূত।

রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ এসে সমবেত হতেন সেই বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে। সেই যুগ পেরিয়ে গেছে শত শত বছর আগে। ব্রিটেনের রাজপরিবার এখনো সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

ছেলেবেলার সেই গল্পই সত্যি হয়ে এলো। ব্রিটেনের বসন্ত সাধারণভাবেই সুন্দর। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন বসন্তের। আজকের রোদেলা বসন্ত ব্রিটেনের অন্য সাধারণ বসন্তের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। ব্রিটেনের আকাশে বাতাসে যেন বসন্তের আমেজ।

ব্রিটেন জুড়ে চলছে সেই উৎসব। ১৯মে ব্রিটেনের রাজপরিবারে অনুষ্ঠিত হল বহু প্রতীক্ষিত বিয়ের উৎসব। এক ধরণের উন্মাদনা ও বলা যায়। শত শত মানুষ তিন চার দিন ধরে রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন, থাকছেন। গৃহহীন হিসাবে নয়, রাজপরিবারের বিয়ে উপভোগ করতেই সেখানে সমবেত হয়েছেন তাঁরা।

বিগত ছয় মাস ধরেই ব্রিটেনের সংবাদ মাধ্যমজুড়ে সেই উত্তাপ টের পাওয়া যাচ্ছিল। সাধারণ মানুষ মেতে ছিল রাজবাড়ির সেই বিয়েকে ঘিরে। গতমাসেই বিশ্বের ৫২টি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের নিয়ে ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল কমনওয়েলথ সম্মেলন। পত্রিকার পাতায় বহু খুঁজে ও বড় কোন শিরোনাম পাওয়া যেত না। কিন্তু হ্যারি মেগানের সংবাদগুলো প্রতিদিনই পত্রিকার পাতাজুড়ে থাকতো বড় বড় শিরোনাম। ব্রিটেনের আজকের  টেলিভিশন, সংবাদপত্র এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে শুধুই হ্যারি আর মেগান।

বার্কশায়ারের উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জস চ্যাপালে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সারা বিশ্বের সাড়া জাগানো বিবাহ উৎসব।

জর্জস চ্যাপালে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন দুই ভাই উইলিয়াম ও হ্যারি। কিছুক্ষণ পরে বিয়ের মঞ্চে একসাথে এসে প্রবেশ করেন দাদী, ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও দাদা ফিলিপ। উঠে দাঁড়ান উইলিয়াম ও হ্যারি।

রাজকুমার হ্যারির পিতা প্রিন্স চার্লসের হাত ধরে সাদা গাউন পরে প্রবেশ করেন মেগান। উঠে দাঁড়ান আমন্ত্রিত অতিথিরা। নেপথ্যে অর্কেস্টায় বাজছে মধুর সুর।  

প্রিন্স হ্যারি ও মেগানকে বিয়ের শপথ বাক্য পাঠ করান বিশপ। 'গড ইজ লাভ এন্ড গড লিভ ইন লাভ, ম্যারেইজ ইজ গিফট অব লাভ' পুরোহিত পাঠ করেন বিয়ের শপথ বাক্য। ৩৩ বছর বয়সী হ্যারির চেয়ে বয়সে তিন বছরের বড় প্রেমিকা মেগান।

শপথ বাক্য পাঠ করার পর সমবেত প্রার্থনা সংগীত লর্ড ওব কাইন্ড নেস…।

কনের ঘুমটা তোলেন রাজকুমার। যাজক হ্যারিকে জিজ্ঞাসা করেন,  তুমি কি মেগানকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করত রাজি? একই প্রশ্ন করেন কনে মেগানকে, তুমি কি সারাজীবনের জন্য গ্রহণ করবে? আমন্ত্রিত অতিথিদের সাক্ষী করেন পুরোহিত। সেন্টারবুরির যাজক জাস্টিন উইলবি তাদের বিয়ে পড়ান।

হ্যারিকে কিছুটা বিব্রত লাগলেও উজ্জ্বল ছিলেন মেগেন। এরপর বক্তব্য রাখেন আমেরিকান বিশপ মাইকেল কেরি। তিনি তাঁর বক্তৃতায় ভালোবাসার জয়গান শোনান। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী চলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।

সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও অভিজাত ৬০০ অতিথির উপস্থিতিতে পরস্পরকে বিয়ের বন্ধনে জড়ালেন তারা। রাজপরিবারের এই নতুন দম্পতি এখন থেকে পরিচিত হবেন ডিউক ও ডাচেস অব সাসেক্স হিসেবে। সাদা ধবধবে পোশাকে বিয়ের জন্য গির্জায় হাজির হন মেগান মেরকেল।

মোট ২ হাজার ৬৪০ জনকে বিয়েতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সারা দেশে কমিউনিটি সেবার জন্য ১ হাজার দুইশত জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ভাগ্যবান দুই ব্রিটিশ বাংলাদেশীও আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দিয়েছিলেন সেখানে। একজন লন্ডনের মারিয়াম চৌধুরী, অন্যজন ব্রিস্টলের নাছিম আলী চৌধুরী। দুজনেই দাতব্য কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।

বোনের সন্তানকে আশীর্বাদ করতে এসেছিলেন রাজপুত্রদের মা প্রিন্সেস ডায়নার বড় বোন ল্যাডি জেন ফিলোস। ছিলেন বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। নতুন রাজবধু মেগান মার্কেলের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসাবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রিয়াঙ্কা।

উপস্থিত ছিলেন সাবেক ফুটবল তারকা বেকহাম ও তাঁর স্ত্রী ভিক্টোরিয়া, টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস। বড় ভাই উইলিয়ামের শাশুড়ি ক্যারল মিডলটন। সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন তারকা কমেডিয়ান জেমস করডেন, মেগানের সহ অভিনেতা টাইওন।

সংগীত শিল্পী জোস স্টোন ও সোফিয়া, উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রাহ, হ্যারির খালাতো বোন কেটি স্পেনসারও উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রিন্স হ্যারির সাবেক দুই প্রেমিকা ক্রেসিডা বোনাস ও চেলসিয়াও বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী ৩৪ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হবে। বিয়ের এই খরচ কে মেটাবেন এই নিয়ে ও সাধারণ মানুষের আছে কৌতুহল। প্রথা অনুযায়ী কনের বাড়ি থেকে এই খরচ বহন করার কথা। কিন্তু মেগানের পিতা টাকার জন্য রাজপরিবারের গোপনীয়তা ভেঙে পাপারাজ্জিদের ছবি তোলার জন্য টাকা গ্রহণের অভিযোগে মেয়ের বিয়েতে নিষিদ্ধ হয়ে যান। তাই প্রিন্স হ্যারিকেই সব ব্যয় বহন করতে হবে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে এই বিয়ে রাজ পরিবারের অন্যান্য বিয়ের মতোই মোটামুটি ১ বিলিয়ন পাউন্ড ব্রিটেনের অর্থনীতিতে যোগ করবে। সুভ্যেনির, কয়েন স্ট্যাম্প ইত্যাদি থেকে মিলিয়ন পাউন্ড আয় করবে ।

শুধু কি আমন্ত্রিত অতিথিরাই শামিল হয়েছিলেন সেই বিয়েতে? রাজ্যের সাধারণ মানুষ কি বঞ্চিত হয়েছেন?

উইন্ডসর ক্যাসেল থেকে ফেরার পথে রাজকীয় ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বসেন হ্যারি ও মেগান। রাস্তার দুইপাশে হাজার হাজার উৎসুক জনতা  জাতীয় পতাকা হাতে অভিনন্দন জানান নবদম্পতিকে।  

পৃথিবীর ইতিহাসে কতো না প্রেমের কাহিনী। লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, সেলিম-আনার কলি, চন্ডিদাস-রজকিনীর মতোই এই অমর প্রেম কাহিনী হয়ে রবে হয়তো রাজকুমার হ্যারি আর মেগানের প্রেম। দেশ, কাল, প্রথা ভেঙে মেগানকে জয় করেছেন রাজকুমার হ্যারি। জয় হয়েছে প্রেমের। জয় হয়েছে মানবতার।

সবই ছিল শুধু একটা অপূর্ণতা ছাড়া। আর তা হল প্রিন্সেস ডায়না। অনেকেই স্মরণ করেছেন প্রিন্সেস ডায়নাকে। মৃত্যুর  প্রায় ৩০ বছর পরেও সাধারণ মানুষের মনে জাগরুক ডায়না।
   
বিবিসি ওয়ান সরাসরি সম্প্রচার করেছে সেই বিয়ের উৎসব।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.