Sylhet Today 24 PRINT

হাটনের সফরনামা

আব্দুল হাই আল-হাদী |  ২৫ জুন, ২০১৮

জন হেনরী হাটন একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী। একই সাথে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক। তিনি ছিলেন আসামের ডেপুটি কমিশনার। কিন্তু নৃবিজ্ঞানের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল অত্যন্ত বেশি । এজন্য প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি নৃবিজ্ঞানের চর্চা করে গেছেন আজীবন। তাঁর প্রকাশিত দ্য এংমি নাগা (The Angmi Naga) এবং দ্য সেমা নাগা (The Sema Naga) বই দুটি ক্লাসিকের মর্যাদা লাভ করেছে। নৃবিজ্ঞান ও গবেষণার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহের কারণে ১৯৩৬ সালে তিনি সরকারী চাকুরী থেকে ইস্তফা দেন। পরবর্তীতে তিনি ক্যাম্বিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আসামের ডেপুটি কমিশনার থাকার সময়ে ১৯২৫ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর তিনি প্রাচীন জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজধানী নিজপাট (বর্তমান জৈন্তাপুর উপজেলা সদর) সফর করেন। ২২ অক্টোবর ১৯২৫ সালে তিনি তাঁর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেন যেখানে তৎকালীন জৈন্তিয়ার একটি নিখুঁত চিত্র পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় সে ডায়েরিটি পাঠকদের জন্য ভাষান্তর করা হলো:-
 
জৈন্তাপুরের দিকে ৭ মাইল দূরে। বাঁধানো বুনোপথ ক্রমশ: পাহাড়ের পাদদেশে নেমে গেছে; কিন্তু গ্রানাইট বা চুনাপাথরের তৈরি উপরের অংশ থেকে নীচের বেলে পাথরের তৈরি অংশের অবস্থা আরও খারাপ। আম-খুট প্রবাহ জুড়ে এক বিশাল স্তূপ রয়েছে (উম-পানি  Am. Cf.  দ্বারা নাগা-পাহাড়ের Konyak দেশের অংশ হিসেবে প্রতিস্থাপিত)। সমস্ত পথ জুড়ে পান চাষে ভরপুর, পান গাছ বৃক্ষের উপর জন্মে থাকে এবং Konyak Nagas যারাও একই পদ্ধতিতে পান চাষ করে। এর থেকে এগুলো অধিকতর ঘনিষ্ঠভাবে ও পাতলাভাবে আছে। নাগা পর্বতের Namsang and Kongan এর মতো syndai রা প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য পানের উপর নির্ভরশীল এবং সমতলে চাল ক্রয় করে উপরের গ্রামে বয়ে নিয়ে যায়। দৃশ্যত: প্রায় সব চাল-ই এই পথে পেয়ে থাকে। বাঁশ এ্যাকুয়েডেটস দ্বারা নিকটতম প্রবাহ থেকে পানি আনার মাধ্যমে পান-বুরুজ চাষাবাদ হয়ে থাকে। এটা মাটিকে স্যাঁতস্যাঁতে এবং প্রচুর ঠাণ্ডা রাখে, এটা নাগাদের একটা প্রভাব যারা ঘন জঙ্গলে কেবলমাত্র চাষাবাদ করে; যেখানে এই সিন্টেংরা এটা জমির মধ্যে চাষাবাদ করে যা আংশিকভাবে পরিস্কার করা হয় এবং অনেক কমে শক্তভাবে ট্রিড করে। বুলেট-ধনুক এর প্রমাণ। ক্ষুদ্রতম ছেলেদের থেকে প্রায় সব পুরুষই উপরের দিকে একটিকে বহন করে নিয়ে যায় ; এমনকি তাদের মধ্যে যদি ভারি বোঝাও থেকে থাকে।

Am-sorai  প্রবাহ এখন একটি হালকা কাঠের সেতু দিয়ে অতিক্রম করলাম, যা একদা নিশ্চিতভাবে পাথরের একটি ছিল। প্রবাহের বিছানায় আমি প্রত্যক্ষ করলাম প্রচুর ব্লকের অনেকগুলো অংশ যেগুলো চতুর্দিকে ছড়ানো এবং ভবনের জন্য স্লোট করা। Am-kumbeh প্রবাহ অতিক্রমের সময় উঁচু মাটির বেড়িবাঁধ চোখে পড়ে। আমি প্রবাহে নেমে পড়লাম দেখতে যে কিভাবে পানি প্রবাহিত হয়। পায়েপথ সমরুপ নির্মিত প্রত্যেক দিক থেকে পরিপূর্ণ ব্রিজ ও কুলের মধ্যে একটি মিহি ধনুকাকৃতির খিলান পাওয়া গেল। পানির উপরের নির্মিত এসব পায়েপথ কিছু সময় অবশ্যম্ভাবীরুপে ভেঙ্গে পড়ে এবং সম্ভবত: যা পড়ে যাওয়া বা কাটা ব্লকের নির্মিত সাধারণ অমসৃণ পাথরকর্ম দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। তুমি প্রবাহে না নামার আগ পর্যন্ত দেখা যায়- উপরে ঘাস বর্ধনশীল এবং জঙ্গলের শৈবাল প্রত্যেক দিকে ঝুলে আছে যা পুরোপুরি সেতুটিকে ঢেকে ফেলেছে। খিলান প্রায় একই ধাঁচের এবং Um-niakaneh আগ পর্যন্ত। কেবলমাত্র সেখানে 'প্রধান প্রধান-পাথর মূলনীতি' ব্যবহারের প্রচেষ্টা দেখা যায়। যদিও প্রধান-পাথর খিলানের কেন্দ্রে নয় বরং খানিকটা উপরে বাঁকানো। কিছু সামান্য এর উপরে একটি আঁধার কাটা পুরোপুরি সলিড রকের বাইরে যা গুটার ও নালার সাথে রকের বাইরে খনন করা হয়েছে এবং  যাতে বৃষ্টির পানি এটিকে পরিপূর্ণ করে রাখার জন্য ঢালুর উপরে উঠে। আধারটি ২২ ফুট ১১ ইঞ্চি প্রশস্ত, ২৯ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা গোলাকার প্রান্ত এবং পর্যায়ক্রমে তিনটি বড় ধাপে, কেন্দ্রে গভীরতা বাইরের প্রান্তের দিকে ৬ ফুট গভীরে তলানি থেকে। পথ থেকে দূরের প্রান্তে এবং পাহাড়ের ঢালের পেছনে, আধারের সাথে একটি ব্লকে একটি হাতি খোদাই করা যাতে পানিতে দাঁড়াতে পারে এবং প্রায় নিমজ্জিত যখন পুরো আধারটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

বিপরীতদিকে, এটা একটা সিঁড়ির বহর যা প্রান্তভাগ হতে আধারের কেন্দ্রের দিকে ধাবমান। এতে মোট ছটি সিঁড়ি আছে যাদের প্রত্যেকটি প্রায় ১ ফুট উঁচু, এটি আবার ফেলে রাখা হয় যখন আধারটি কাটা হয়। এখানকার নিকটে কোথাও আমাকে বলা হলো একটি চন্দ্র, সূর্য ও এবং অন্যান্য প্রতীক খোদাই করা শিলা ছিল কিন্তু কোনভাবে আমি এটা মিস করেছি, যেহেতু আমার পথপ্রদর্শকরা বললো যে, এগুলো আরও আছে যতক্ষণ না আমরা সমতলে পৌঁছলাম এবং যখন তারা স্বীকার করলো যে তারা এগুলো কোথায় তা জানতো না এবং কখনও তা দেখেনি। এটা অবশ্যই সেখানে জোয়াইয়ের কোথাও অবস্থিত কারণ সেখানে অনেক মানুষ আমাকে এটার কথা বলেছিল।
 
একটি আধুনিক হালকা কাঠের সেতু পার হয়ে Am-lubon নদী পাড়ি দেওয়া হলো যা মেগালেথিক স্তম্ভের উপর দাঁড়ানো। এটা স্পষ্টতই সমতল পাথর স্ল্যাবের একটি সেতু যা  Maput-এর মতো যাকে Thluumwi বলা হয়। Maput এর মতো পাঁচ জোড়া একই রকম ভারবাহী স্তম্ভ আছে, কিন্তু অনেক বেশি উচ্চতর এবং ছটি মনোলিথিক খিলান, কেবলমাত্র দুইপ্রান্ত একটির বেশি ক্ষুদ্রতম, এখনো অস্তিত্বমান। অন্যগুলোর অবশেষ প্রবাহের বেডে খড় দিয়ে মোড়া। সেতুর পেছনভাগ হচ্ছে ডলমেনের এক যুগল। পথের বাকি অংশ কেবলমাত্র ছোট প্রবাহসমূহ যা একটি একক স্ল্যাব পার হয়ে যাওয়া যায় কিংবা দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে অগভীর নদীর অংশ পাহাড়ের নীচ পর্যন্ত একটি আইরিশ সেতু অতিক্রম করে পার হওয়া যায় এবং জৈন্তাপুর পরগণার নিচু জমিতে পৌছা যায় এবং সেখানে একটি খেয়া আছে।    
জৈন্তাপুরে নিজেই আমি প্রত্যক্ষ করেছি যে, বাড়িগুলোর অনেকগুলোই নির্মাণে পুরোপুরি সিন্টেং স্থাপত্যশৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। কিছু কোয়াসী-মেগালেথিক স্ল্যাব সেতু, কিছু মিহি মেনহির এবং খাসি ধরণের ক্রোমলেস ছাড়া তাদের কিছু নর্থিয়াংয়ের মতো। পুরাতন প্রাসাদ বা মন্দিরের ঘের প্রাঙ্গণের দেয়াল সংযুক্ত। আমি দেখলাম যে জৈন্তাপুরে নিজ থেকে কোন মেগালেথিক কাজ নেই, কিন্তু একটি বড় গোলাকার পাথর স্তম্ভের শীর্ষ ভাঙ্গা এবং সমস্ত স্তম্ভপীঠের/বেদিকার সিঁড়ির শীর্ষ  অর্ধশায়িত অবস্থায়- যা দরবার হলের সাইটে ব্যবহার করা হতো। যাই হোক, কিছু হালকা মনোলিথ বাড়ি-স্তম্ভ দেখলাম যা বর্তমান নৃপোহ দ্বারা নির্মিত যিনি কি-না বংশগত প্রতিনিধি। সাধারণ কাঠের নির্মিত বাড়ির-খুঁটি দ্বিধাবিভক্ত উপরিভাগ ভেলাকে বহন করার জন্য। সর্বত্র প্রাসাদসমূহ, দেয়াল ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ছড়ানো যাদের সব-ই ইটের তৈরি এবং অধিকাংশ সর্বশেষ ১৮৯৭ সালের বড়-ভূমিকম্পের সময় নিপতিত হয়। জনসংখ্যার অধিকাংশই এখন সিন্টেং এবং তাদের বাড়িগুলোর অধিকাংশই টিপিক্যাল যা বরা-সমর্থিত সিন্টেং ছাদ যা সামনের দরজা দিয়ে ক্রমশ: একপ্রান্তে নিচু হয়ে এসেছে। বাংলা টাইপও বরা সমর্থিত, কিন্তু পাশে দরজা আছে। এটা বলা হয় যে, এ বরা-সমর্থিত টাইপ গ্রহণ করা হয়েছে যেহেতু এটা সাইক্লোন এবং ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে কম দায়ী। নর্থিয়াং এর মতো প্রাচীন জৈন্তিয়া রাজ-ফটকগুলো বরা-সমর্থিত ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত এবং ডাবল গেইটওয়ে দুটির মধ্যে প্রত্যেক সাইডে একটি খুপরিসহ যুক্ত।

পুরাতন মন্দির বা প্রাসাদ প্রাঙ্গণের দেয়ালের ভেতরে একটি বড় বর্গাকৃতি থামাল একটি বর্গাকৃতির বেদীর সাথে এর কেন্দ্রে অস্পষ্টভাবে আছে যা তথাকথিত পিরামিডিকেল টাইপ নির্দেশ করছে। পাথরের বেদী-ছাওয়া সমাধি মন্দির দ্বারা সংরক্ষিত হত এবং পারিবারিক দেবীর স্থায়ী জায়গা ছিল। স্তম্ভপীঠ পর্যন্ত পাথর সিঁড়ির বিপরীতে বলির পুরাতন জায়গাটির অবস্থান। দুটি আনুক্রমিক বড় চ্যাপ্টা সিঁড়ি গোলাকার মঞ্চ পর্যন্ত চলে গেছে রক্ত বহনের জন্য, সিঁড়ির মুখ দিয়ে বেদীর দিকে চলে গেছে এবং একটি হৃদয়াকৃতির পাথর-পিণ্ড বিপরীত প্রান্ত থেকে ভেতরমুখী। এসব পরিধি-রেখার মধ্যে একটি কেন্দ্রীয় ডিপ্রেশনের মধ্যে নেমে গেছে এবং এটা বলা হয়ে থাকে যে, প্রকৃতপক্ষে একটি কেন্দ্রীয় নালা নির্গম নলের দিকে ছিল এবং এটি প্রায় ফাঁপা-আকৃতির মানবরুপ গ্রহণের জন্য। এটিই সে স্থান যেখানে নিয়মিতভাবে বলিদান করা হত যা চূড়ান্তভাবে জৈন্তিয়া রাজ্যের পতনের কারণ হয়েছিল। যদিও কয়েক মাইল দূরে ফালজুর-এ এটি প্রকৃতপক্ষে বলিদানের উৎসব উদযাপিত হত।

প্রাঙ্গণের এক কোণে, ইটের আংশিক গোলাকার কলাম তৈরির জন্য দু’টি দেয়াল মিলিত হয়েছে। আমি প্রত্যক্ষ করলাম যে, এটা খোদাই করা হয়েছিল দিমাপুর নলাকার মনোলিথ ধাঁচে, শক্রুর দাত প্যাটার্নের, এ পার্থক্য নিয়ে যে উল্লম্ব প্যাটার্নের উপরের অংশ নীচের অংশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড় ছিল এবং দড়ি প্যাটার্নের বাঁধন দেওয়া হয়েছিল। প্রাঙ্গণের দক্ষিণাংশের দেয়ালে ঘোড়া, একটি হাতি, একটি সিংহ (অথবা একটি ড্রাগন), সেতুর উপরের একই রকম এবং একটি গাছের মধ্যে উদ্ধতভাবে চলা, একটি হাতি ধরা হচ্ছে এবং পোষ মানানো হচ্ছে, একজন ডানাওয়ালা নারী জাতীয় কিছু এবং একটি দৈত্য ক্লাব যুদ্ধ করছে যা দেখতে কুমিরের মতো। পরেরটি সেন্ট জর্জ এবং ড্রাগন কিংবদন্তীর একটি সংস্করণ হতে পারে। এই রিলিফগুলো অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সুপারিন্টেনডেন্ট তাদেরকে এগুলো একটি 'ফিলেট' এর মাধ্যমে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন।

স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাগণ এটা কী-তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। আমি তাদেরকে বললাম-একটি ফিলেট কী ছিল এবং তারা জবাব দিল আমি যা বর্ণনা করেছি তা ছিল 'ক্রোনাইচ'। একই প্রকারে, আমি জানতাম যে এটাকে গ্রেট ব্রিটেনের কিছু অংশে 'ফিলেট' বলা হয়। প্রাঙ্গণের এবং বেদীর শুরুটা এমনভাবে  করা হয়েছে যাতে বেদীর অবস্থান, যাতে দেবীর মূর্তি রাখা হত, এটা দক্ষিণ দিকে মুখ করা এবং সিঁড়িগুলো দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে নেমে গেছে। বলির স্থানটির পরেই দক্ষিণে অবস্থিত এবং পূর্ব বা উত্তর-পূর্বে কুপ, প্রধান গেইট বর্তমানে ভাঙ্গা, এর অধিকাংশই দক্ষিণের দেয়ালে মধ্যে অবস্থিত এবং এখনও একটি ঐচ্ছিক ফটক পূর্ব দেয়ালের উত্তর-পূর্ব কোণায় অবস্থিত, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি পুরাতন শুকনো কুপ রয়েছে যেখানে বলির পর ভিকটিমের লাশ ফেলা হত, বর্তমানে এটা ময়লা এবং পুরনো ইটে পূর্ণ হয়ে গেছে, অস্বস্তিকর সম্পর্কের সাথে যুক্ত স্থানটি ধ্বংস করাই উদ্দেশ্য হতে পারে।
 
সিলেটের ডেপুটি কমিশনার জৈন্তাপুরে আমার সামনে ছিলেন এবং দুপুরে নৃপোহ তাঁর সাথে দেখা করতে আসলেন। প্রবীণ লোকটি কোন কারণে হতাশ ছিলেন এবং আবেদন করলেন যে, সংরক্ষিত মনুমেন্টগুলো তার জিম্মায় ফেরত দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাঁর দাবির প্রতি সম্মতি স্থগিত করা হয়েছিল যদি সরকার কিছু শর্তের সাথে একমত হয়। সেগুলোর কিছু নিশ্চিতভাবে সংরক্ষিত মনুমেন্টের স্বার্থের সাথে ছিল না, কিন্তু এটা তাদের জন্য অপেক্ষাকৃত ভাল তাদের সাথে একমত পোষণ করা মনুমেন্টগুলো নৃপোহকে ফেরত দেওয়ার বদলে, যার হাতে এগুলো দ্রুতই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাবে।

বর্তমান নৃপোহর উত্তরসূরি যদি কেউ থাকতো তবে সিন্টেং প্রথা অনুসারে সে হত তার বোনের ছেলে। কিন্তু তাঁর কেউই ছিল না এবং তার কোন উত্তরসূরি নেই, তাই অনুমেয়রুপে তার মা এবং নানী প্রমুখেরও কোন বোন ছিল না অথবা যদি তাদের থাকতো, তারা কোন বংশধারা ছাড়ত না তাদের বোনদের দ্বারা। আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম যে তাদের পরিবারের যদি কোন নর্থিয়াং শাখা থেকে কোন বংশধারা থেকে থাকে; কিন্তু অনুমেয়রুপে ছিল না যেহেতু দু’টি শাখাই জৈন্তিয়া শাখা হতে প্রতিনিধিত্ব করেছে যখন থেকে তারা ব্রিটিশদের সংস্পর্শে এসেছে। নৃপোহ আমাদেরকে প্রাচীন ধ্বংসপ্রাপ্ত ইটের ভবনের বিভিন্ন খণ্ডাংশ ঘুরে ঘুরে দেখালেন, কিন্তু কমই আগ্রহ দেখা গেল। এরকম সাজসজ্জা এখনো অস্তিত্বমান ফুলেল প্যানেল রূপে, মুসলমান স্টাইলে এবং তুলনামুলকভাবে সাম্প্রতিক সময়ে।
 
আমি জৈন্তাপুরে খেয়াল করলাম, কুকুরগুলোর কান এবং লেজ কাটার ক্ষেত্রে নাগা স্টাইল অনুসরণ করা হয়েছে। সাধারণভাবে জৈন্তিয়া পর্বতের সিন্টেংদের ক্ষেত্রে আমার অভিব্যক্তি হচ্ছে যে আসামের জ্ঞাত অন্যান্য মানুষদের চেয়ে তারা প্রায় মনিপুরীদের অনুরুপ। তাদের বৈশিষ্ট্য মনিপুরীদের কথা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় কিন্তু তাদের প্রায় সবারই বাজারের প্রতি অনুরক্ততা আছে। মণিপুরের মতো- জায়গাটি হাট দ্বারা আচ্ছাদিত, ক্ষুদ্রতম গ্রামসমূহ দৃশ্যত: কোন না কোন বাজারের জায়গা আছে এবং মণিপুরের মতো মহিলারাই বাজার এবং দৃশ্যত: সমস্ত কাজ-ই তারা করে থাকে।

জোয়াইযের খাসিয়া সাব-ডিভিশনাল কর্মকর্তা মি. রিনজাহ যিনি নাগা পর্বত সম্পর্কে কিছুটা জানেন, বললেন যে, তিনি খাসি এবং সিন্টেংদের সাথে কাছা-নাগাদের কিছু সাদৃশ্যতা পর্যবেক্ষণ করেছেন। একটি পর্যবেক্ষণ অধিকতর মজার-কাছা-নাগাদের মধ্যে, অ্যাংমিদের মতো, দুটি সমান পাথর উপরের দিকে মুখ করে থাকে না কিন্তু খাসি ও সিন্টেংদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, একটি উর্ধ্বমুখী এবং একটি ডলমেনের মতো যেন উপরেরটা পুরুষের ও নীচেরটা নারীর প্রতিনিধিত্ব করে। সিন্টেংদের কথাবার্তা শুনে আমার কনিয়ক নাগাদের স্টাকাটো ভাষার কথা স্মরণ করিয়ে দিল যা তাদের উচ্চারণ ও প্রকাশের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়।

লেখক: আব্দুল হাই আল-হাদী, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.