Sylhet Today 24 PRINT

কেন কোটার পক্ষে বলছি

সুবীর নন্দী দাশ |  ০৫ জুলাই, ২০১৮

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিষদের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনের প্রতি শিক্ষিত তরুণদের বড় একটি অংশের সমর্থন আছে। ব্যক্তিগতভাবে কোটা নিয়ে কিছু ভাবনা তুলে ধরার দরকার মনে করছি।

১.আন্দোলনকারীরা কোটার সংস্কার চান, কিন্তু সংস্কারের রূপরেখা কই? এই সংস্কার কি তারা শুধু সংখ্যাগত সংস্কার না গুণগত সংস্কারও চান। কোথায় কত ভাগ কোটা আন্দোলনকারীরা চান এর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই কেন?

আপনাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ব্যতীত আন্দোলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ থেকে যায়।

২. বাংলাদেশর সব থেকে বড় অর্জন প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। এই অর্জনের কারিগর অধিকাংশই নারী যারা কিনা নারী কোটায় (সবাই নয়) নিয়োগপ্রাপ্ত। তাই কোটা পদ্ধতি একেবারে খারাপ বা এমন সিদ্ধান্তে আসতে পারিনা।
৩. কোটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ব্যবস্থা। আমাদের সংবিধানের ২৮ নং অনুচ্ছেদে কোটার অনুমোদন আছে। কোটা নতুন কোন ব্যাপার নয়।

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ৮০% কোটা মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণ করেছিলেন, এবং তা ফলপ্রদ হয়েছিল। "মেধাবী" তখনও ছিল কিন্তু কেউ আন্দোলন করেনি।

৪. কোটা ব্যবস্থা সংস্কারে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রামের শিক্ষিত নারীগণ, যারা নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়নি। তারপর ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় থাকবে গ্রামের কলেজের ছেলেরা, ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আদিবাসী শিক্ষার্থী।

কোটা ব্যবস্থা সংস্কারে লাভ হবে ঢাবিসহ কয়েকটি নামী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের।

৫. উচ্চ ডিগ্রিধারীরা সরকারি চাকরি চায় কারণ নিশ্চয়তা, সামাজিক মর্যাদা, দুর্নীতির সুযোগ। যেসব তরুণ ইতোমধ্যে বিশ্বনেতৃত্বে আসীন কেউ কিন্তু সরকারি চাকুরে নয় কিন্তু।

৬. বেকার সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এসজিডি বিশ্ব অগ্রাধিকারে রেখেছে বেকার সমস্যা সমাধানকে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ৬৪% এর বয়স ১৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। আবার এদের মধ্যে ৫ কোটি তরুণ, বয়স ৩০ এর নিচে। এই ৫ কোটি তরুণের কর্মসংস্থান রাষ্ট্রের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে আগামী ২০ বছরে ১০ লাখের বেশি সরকারি চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। তাহলে বাকি ৪ কোটি ৯০ লাখের কী হবে?

সরকারি চাকরি একটি অনুৎপাদনশীল খাত, দেশের শিক্ষিত মেধাবীদের উৎপাদনশীল খাতে নিয়োগের উপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। স্বঘোষিত মেধাবীগণ উৎপাদনশীল খাতে কেন যেতে চাননা? কোটা সংস্কার কি বেকার সমস্যার সমাধান করবে? মনে করি, তরুণদের উৎপাদনমুখি সম্মানজনক কাজে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন।

৬. কোটা ব্যবস্থা সংস্কারে সচিবালয় কুমিল্লা, বরিশাল, নোয়াখালী, চাঁদপুর মত কয়েকটি অঞ্চলের আধিপত্য থাকবে, অন্যরা কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ আমলাতন্ত্রে তাদের উত্তরাধিকারীত্ব বেশি, কিছু ক্ষেত্রে যোগ্যতাও বেশি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সুপ্রিম কোট বার এর উজ্জ্বল উদাহরণ।

৭. বাংলাদেশ বিশ্বের এমন একটি দেশ যেখানে দার্শনিক, সাইন্টিস্ট, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানীগণকে কেউ মেধাবী বলে না, মেধাবী বলে আমলাদের। এই অতি মেধাবীগণ তোপখানাবাসী হয়ে বিশ্বমানের একটি আমলাতন্ত্রকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে আন্দোলনকারীগণ কিসের ভিত্তিতে ঠিক করলেন তারা মেধাবী, কোটাধারীরা মেধাবী নয়, কোটাধারীরা কি কোটার জোরে স্নাতক সম্পন্ন করেছে?

সরকারি চাকরি অধিকার নয় ভুলে যাবেন না।

৮. ইংরেজিতে একটি কথা আছে equal justice to unequal is injustice. অসমের জন্য সম ব্যবস্থা অসমতার জন্ম দেবে। একটা বৈষম্যহীন, ন্যায্য রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যে কোটার পক্ষে আছি।

  • সুবীর নন্দী দাশ: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
  • [প্রকাশিত লেখায় মতামত, মন্তব্য ও দায় লেখকের নিজস্ব]

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.