Sylhet Today 24 PRINT

শিশুদের পক্ষে একটু বলি...

বদরুল আলম |  ০২ অক্টোবর, ২০১৮

শিশুটি একটু খেলতে চায়, খোলা আকাশের নীচে একটু ঘুরতে চায়, জমিনে প্রকৃতির অসংখ্য সৌন্দর্য ভোগ করতে চায় কিন্তু কোন ফুরসত নেই। তাকে বন্দি করা হয়েছে সিলেবাসে, আটকে রেখেছে অপরিকল্পিত এক রুটিন। পাগলের মতো ছুটতে হয়েছে অদৃশ্য এক প্রতিযোগিতায়। এ তো এক নেশা! (কথাগুলো জানিয়েছিল আমাদের-ই প্রতিষ্ঠিত "মর্নিংসান ইসলামিক আইডিয়াল একাডেমি", দনা বাজারের এক শিশু শিক্ষার্থী)।

যতই পড়িবে ততই শিখিবে- এর অর্থ কি এক বছরে এক ক্লাসে ১৪-১৫ টি বই পড়া? এক বছরে অনেক বই পড়লে অনেক জ্ঞান অর্জন হবে এমন ভাবাটা মোটেও উচিত নয়। এক বছরে মূলত ১০-১১ মাসে, একটি ক্লাসে এত বই পড়ার কোন যুক্তি আছে বলে মনে হয় না। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে ১৩-১৪ টি পাঠ্যবই পড়তে হয়। এটি বেশ কয়েক বছর যাবত শুরু হয়েছে। শুনেছি আগে ছাত্র জীবনে এত বই পড়ানো হত না। তাই বলে কি তখন কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, শিক্ষক হয়নি? তাহলে কেন এখন এত পড়াশোনা! আসলে পড়াশোনা তো হচ্ছেই না বরং শুরু হয়েছে শিক্ষাভীতি। প্রাথমিক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী পড়ে আসছে মাত্র ৬ টি বই। অথচ এই শিক্ষার্থী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে এসে বছরের শুরুতে ১৩-১৪ টি বই হাতে পেয়ে ভয় পেয়ে যাচ্ছে। বছরের শুরুতে সরকার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছে। তা পেয়ে তাদের আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে তাদের মধ্যে হচ্ছে ভীতির সঞ্চার। এমনিতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকে বিষয়ভিত্তিক ভীতি।

এডুকেশন ওয়াচ নামক সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপর ৫ টি বিষয়ে ২৭ টি দক্ষতা নির্দেশকের মাধ্যমে ৫৪ ধরনের প্রশ্ন করা হয়। এর মধ্যে ইংরেজি বিষয়ে দক্ষতা নির্ণয়ে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, সবচেয়ে ভাল ফলাফল এসেছে বিজ্ঞান বিষয়ে। এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের হার ছিল ৮৩.৩ শতাংশ, বাংলাদেশ গ্লোবাল স্টাডিজে ৭৮.৭ শতাংশ, বাংলায় ৭৩.৭ শতাংশ, গণিতে ৬৯.২ শতাংশ এবং ইংরেজিতে ৩৮ শতাংশ। তবে গ্রাম-শহর ভেদে দক্ষতার হারে তফাৎ রয়েছে। ইংরেজি বিষয়ে শহরের শিক্ষার্থীরা গ্রামের শিক্ষার্থীর তুলনায় এগিয়ে।

গণিত ভীতি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশের শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে। তবে অন্যান্য দেশে গণিত ভীতি দূর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রাইমারি স্কুল থেকেই গণিত ভীতি শুরু হয়। পরবর্তীতে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। তাই প্রাথমিকের গণ্ডিতেই এই ভীতি দূর করতে হবে। গণিত মানুষের বাস্তব জীবনে কিভাবে কাজে লাগে তা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ধারনায় আনতে হবে। আজকাল ছোটদের গণিত শেখার জন্য মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারে অনেক ধরনের অ্যাপস পাওয়া যায়, যা দিয়ে গণিতকে খুব সহজেই খেলার ছলে সহজবোধ্য করা যায়।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কমাতে হবে। বইয়ের মান উন্নয়নও সহজবোধ্য করতে হবে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, শিক্ষক নিয়োগ ত্বরান্বিত করতে হবে এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।

শিশুদের নিয়ে আমাদের ভাবনার অন্ত নেই। সীমাহীন ভাবনায় আছি আমরা। যে ভাবনা অনেক আগে ভেবেছিলেন কবি সুকান্ত। এই মুহূর্তে প্রিয় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কে একটু স্মরণ করে বলি,
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান।
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব— তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি— নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে করে যাব আশীর্বাদ, তারপর হব ইতিহাস।

  • বদরুল আলম: প্রভাষক, তাজপুর ডিগ্রি কলেজ, সিলেট; এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.