Sylhet Today 24 PRINT

ড. মোমেন: সিলেটের নতুন সম্ভাবনা

মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা |  ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সিলেট। ব্রিটিশ ভারত থেকে শুরু করে বাংলাদেশের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশে সিলেটবাসীর ভূমিকা সুবিদিত। সিলেটের অনেক কৃতি সন্তান দেশ ও জাতির রূপান্তরে রেখেছেন ঐতিহাসিক ভূমিকা। সিলেটবাসীর স্বাতন্ত্র ও আভিজাত্য শুধু রাজনীতি নয়, শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য সর্বক্ষেত্রে অনন্য উদাহরণ। যুগে যুগে সিলেটের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাঁদের মেধা, যোগ্যতা, বাগ্মীতা ও দূরদর্শিতায় অখন্ড ভারত, পাকিস্তান আমল এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকলেও সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে সিলেট-১ আসনের বিভিন্ন দলের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সময় যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রায় সকলই ছিলের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কালের প্রয়াত স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রত্যেকেই নিজেদের দক্ষতা ও যোগ্যতায় সিলেটবাসীকে করেছেন সম্মানিত, আলোকিত। মর্যাদার স্থানে দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করেছেন সিলেট-১ সংসদীয় আসনকে।

এদেরই স্বার্থক ও যোগ্যতম উত্তরসুরী হিসেবে সিলেট-১ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ড. এ.কে আব্দুল মোমেনের আবির্ভাব। তিনি সিলেটের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এক নতুন সংযোজন। এই সজ্জন, বহুমাত্রিক গুণী মানুষটি সিলেটবাসীর কল্যাণে নিবেদিত থাকার প্রত্যয়ে নির্বাচনে অবতীর্ন হয়েছেন। এটা সিলেটের মানুষের জন্য গর্বের বিষয়। বৈচিত্রময় সিলেট জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সবসময় দ্যুতি ছড়ায়। এ এলাকার জনপ্রতিনিধিকে শুধু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে বিচার-বিবেচনা করলে চলবে না। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা আর সাবেক জনপ্রতিনিধিদের সাফল্যময় পদচারণার সঙ্গে বেমানান জনপ্রতিনিধি সিলেট সদর থেকে নির্বাচিত হলে মর্যাদার এ আসনটি হারাবে তার ঐতিহ্য আর সম্মানের জায়গা।
 
যোগ্যতম জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে একটি এলাকা আলোকিত হয়। আলোকিত সিলেটের আলোকিত সন্তান হিসেবে ড. মোমেনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তাই দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের সিলেটবাসীর কাছে একটি প্রত্যাশার আলো ছড়াচ্ছে। এই আলোকবর্তিকাকে কাজে লাগাতে পারলে সিলেটের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার পাশাপাশি তাঁর স্বপ্নীল পদচারণায় সিলেটবাসী নিঃসন্দেহে নতুন সম্ভাবনাকে বুনন করতে পারবেন। আমাদের সামনে এখন একটি সুবর্ণ সুযোগ। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা কেমন প্রতিনিধি নির্বাচন করবো, তার উপর নির্ভর করছে সিলেটের উন্নয়ন, অগ্রগতি, মর্যাদা আর সমৃদ্ধি।

আমরা কি কেবল প্রতীক সর্বস্ব সংকীর্ণ চিন্তায় আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবো? নাকি ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা আর মর্যাদার বিষয়টিকে বিবেচনায় নেবো -সেই অগ্নিপরীক্ষা আমাদের সামনে। সিলেটের মানুষের রুচিবোধ, পুণ্যভূমি সিলেটের রাজনৈতিক ও সামাজিক সহাবস্থানে ইতিহাসের পরম্পরায় এ ঐতিহাসিক সুযোগকে কাজে লাগাতে আমরা কতটুকু প্রস্তুত? এ নির্বাচনে যারা সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে অবতীর্ন হয়েছেন আমি কাউকে খাটো করতে চাই না। একটি বিষয় শুধু আমাদের সকলের ভাবনায় নিতে হবে, আমাদের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার বহন করার যোগ্যতম ব্যক্তিটি কে? কোন প্রার্থী আমাদের মর্যাদার আসনটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আরো বেশি বিকশিত ও আরো বেশি প্রকাশিত করতে সক্ষম হবেন। কোন প্রার্থীর ব্যক্তিগত সংযোগ আমাদের প্রাণের সিলেটের সংযোগকে আরো বেশি সমৃদ্ধি আর খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে যেতে পারবেন। বর্তমান যুগে একজন সংসদ সদস্য কেবল আইন প্রণেতাই নন, তাকে হতে হবে একজন দক্ষ প্রশাসক, সৃজনশীল উন্নয়নকর্মী, ন্যায়বিচারক আর সহনশীল সমাজসেবক। একজন জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি আর জীবনবোধের উপর নির্ভর করে একটি এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ আর পরিণতি। আমাদের যদি কেবলই রাজনৈতিক বৃত্তাবদ্ধে আমাদের চিন্তা-চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করি, তাহলে আমাদের সংকীর্ণতা আর খন্ডিত ভাবনায় ভবিষ্যতের সিলেটকে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ করবো। আমাদের পূর্বপুরুষরা যে গরীয়ান ঐতিহ্য আর মর্যাদার জায়গাটুকু আমাদের জন্য তৈরি করে গেছেন, নতুন প্রজন্মের উচিত সেই বিবেচানবোধকে কাজে লাগিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।

সারাদেশ থেকে তিনশ জনপ্রতিনিধি মহান জাতীয় সংসদ প্রতিনিধিত্ব করবেন। এই তিনশ জনের ভীরে আমাদের প্রতিনিধিকে যোগ্যতা ও দক্ষতায় যদি মর্যাদার বিচারে অগ্রণী রাখতে হয় তাহলে সেই দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। আসুন আমরা আমাদের সকল প্রার্থীর ব্যক্তিগত জীবনাচার, তাঁদের শিক্ষা, মেধা, যোগ্যতা আর ব্যক্তিগত ভাবনার জায়গাগুলো স্পর্শ করি। তাঁদের সকলের অতীত অভিজ্ঞতা, তাঁদের দৈনন্দিন কর্মকান্ড আর তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের একটু পর্যালেচনা করি। নিজের বিবেক, বুদ্ধি আর চিন্তা-চেতনাকে প্রসারিত করে আসুন আমরা সকলে মিলে খুঁজি আমাদের স্বপ্নের প্রতিনিধিকে -যার মধ্যে থাকবে আমাদের ভবিষ্যতের হাতছানি, নতুন প্রজন্মের জন্য সম্ভাবনার সহাবস্থান।

মর্যাদার সিলেটের ভবিষ্যৎ জনপ্রতিনিধি কে হলে আমাদের সিলেটের মুখ আরো বেশি উজ্জ্বল হবে, আরো বেশি প্রাগ্রসর হবে -এ বিচার বিশ্লেষণ এখনই করা জরুরি। আসুন আমাদের নিজ অবস্থান থেকে এ আলাপ-আলোচনা শুরু করি। আমাদের সিলেট আমরা গড়ি। আমাদের স্বপ্ন আমরা সাজাই। আমাদের গন্তব্য আমরা নির্ধারণ করি। আমি মনেকরি, ড. এ.কে আব্দুল মোমেন একজন লেখক, গবেষক, অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, রাষ্ট্রদূত, প্রশাসক, অধ্যাপক সর্বোপরি একজন সৃজনশীল সজ্জন ভদ্রলোক হিসেবে আমাদের জনপ্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতম দাবিদার। আপনি আপনার ভাবনায় যদি ড. মোমেনকে আপনার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ্যতম মনে করেন, ঐতিহ্যের সিলেটে সম্ভাবনার সারথি হিসেবে তাঁকে উপযুক্ত মনে করেন; তাহলে অনুরোধ থাকবে, তাঁর পক্ষে অবস্থান নিন। সুন্দর আর সমৃদ্ধির পানে চেয়ে আসুন আমরা সকলে মিলে সম্ভাবনার গান গাই। জয় হোক মানবতার। জয় হোক সুন্দর জীবনবোধ আর পরিশিলীত জীবনাচারের। সিলেটের মানুষের একজন উন্নয়নব্রতি হিসেবে ড. মোমেন হবেন নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশাবাদ।

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী।
[প্রকাশিত লেখায় মতামত, মন্তব্য ও দায় লেখকের নিজস্ব]

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.