Sylhet Today 24 PRINT

রোহিঙ্গাদের পর আসামের শরণার্থীদের ভার বইবে না বাংলাদেশ

রাজেশ পাল |  ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে একটা যুক্তি ছিলো যে সেদেশে তাদের উপরে বর্মী সামরিক বাহিনীর নির্যাতন চলছে। তাই ভবিষ্যতে নিজেদের বিপদ হতে পারে জেনেও মানবতার খাতিরে তাদের আশ্রয় দেয়ার প্রয়োজন হয়েছিলো। কিন্তু আসামের বাংলাভাষীদের ক্ষেত্রে সেরকম কোন আশংকা নেই। ভারত সরকার তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে বটে, কিন্তু বর্মীদের মতো তাদের উপরে সেনা লেলিয়ে দেয়নি।

আর গতবার "জাতি ভাই" বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য হুজুরেরা যেভাবে রণহুংকার দিয়েছিলেন , অসমীয়াদের ক্ষেত্রে সেধরণের কোনও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখেও পড়বে না বাংলাদেশ। কারণ আসামের নাগরিক তালিকায় বাদ পড়াদের তিনভাগের দুইভাগই হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বী, বাকি একভাগ মুসলমান। যেখানে পান থেকে চুন খসলেই "মা …… পিডা" অভিযান শুরু হয়, সেখানে বাইরের দেশের "বিধর্মী"-দের আশ্রয় দেয়ার কথা পাগলেও ভাববে না।

দুঃখজনক হলেও সত্য, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ক্ষমতায় এসে সেই একই হিন্দুদেরই উৎখাত করলো, যাদের অধিকাংশই ৪৭-এর দেশভাগের সময়ে হিন্দু হওয়ার অপরাধে পূর্ব পাকিস্তান থেকে হয়েছিলো বাস্তুচ্যুত। এদের একাংশকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রথমে জায়গা দিয়েছিলো দণ্ডকারণ্য এর জঙ্গলে, পরে সরিয়ে জায়গা দিয়েছিলো সুন্দরবনের মরিচঝাপি দ্বীপে। জ্যোতিবসুর বামফ্রন্ট সরকার এর পুলিশ আর পেটোয়া বাহিনী যাদের উপরে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিলো ৪ শতাধিক মানুষকে, আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছিলো সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, ধর্ষিতা হয়েছিলেন ২৪ জনের ও বেশি। মরিচঝাপিতে ঠিক কতজন রিফিউজিকে জ্যোতি বসুর কমিউনিস্ট সরকারের পুলিশবাহিনী আর কমিউনিস্ট পার্টির গুণ্ডারা খুন করেছিলো তার সঠিক সংখ্যা কখনোই হয়তো জানা সম্ভব হবেনা। কারণ লাশগুলোকে পার্শ্ববর্তী "টাইগার রিজার্ভেশন"-এ ছুড়ে ফেলা দেয়া হয়েছিলো বাঘের খাবার হতে।

আর অপর অংশ যারা আসামে ঠাঁই নিয়েছিলো তারা হয়ে উঠেছিল স্থানীয়দের চক্ষুশূল। ব্রিটিশদের চাষাবাদের জন্য স্থানান্তর, ৪৭ এর দেশভাগ, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হিন্দু মুসলমান অনেক বাঙালিই প্রবেশ করেছিলেন আসামে। আর আমরা যেভাবে রোহিঙ্গাদের জামাই আদর করে চলেছি, ঠিক তার বিপরীত চেহারাই দেখতে পেয়েছিলো বাঙালি শরণার্থীরা। অসমীয়াদের কাছে তীব্র বিমাতাসুলভ আচরণ পায় তারা। এমনকি খড়গ চালানোর চেষ্টা করা হয় বাংলা ভাষার উপরেও। যার কারণে ৬১ সালের দ্বিতীয় বাংলা ভাষা আন্দোলনে গুলি চালায় আসামের পুলিশ ৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির মতোই। প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন বাঙালি ছাত্র। এরকম অসংখ্যবার "বাঙালি খেদাও" (স্থানীয় ভাষায় "আসুর বাঙাল" মানে বাঙালিরা অসুর) এর মুখে পড়েও মাটি কামড়ে পড়েছিলো তারা। এতকাল সেখানকার স্থানীয়দের সাথে কয়েক প্রজন্ম ধরে দিনরাত লড়াই করে যখন টিকে থাকার সংগ্রামে জয়ী হয়ে উঠেছিলো, ঠিক তখনই আবার ছোরা বসানো হলো তাদের পিঠে!

মানুষগুলোর জন্য দুঃখ হয় ঠিকই, জাগে সমবেদনাও। একদিনতো আমাদেরই ভাই ছিলো তারা। কিন্তু ওই পর্যন্তই। যে সমস্যার সৃষ্টি করেছে বিজেপি সরকার, তার দায়ভার তাদেরই বহন করতে হবে। এতে আর কারো কিছুই করার নেই।
রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়ে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। মানবতা দেখাতে গিয়ে এখন রীতিমতো "ভিক্ষা চাইনা কুত্তা সামলা" অবস্থা আমাদের। একই ভুল আর দ্বিতীয়বার করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের মাটি কোন রিফিউজি সেন্টার নয় যে যখন যার ইচ্ছে সেই নিজেদের বোঝা চাপিয়ে দেবেন আর আমরা সমানে মেহমানদারী করে যাবো। আমরা ইউরোপ বা আমেরিকার মতো সম্পদশালী রাষ্ট্র নই। নেই মধ্যপ্রাচ্যের মতো তেল বিক্রির অঢেল টাকাও। এছাড়া ১৮ কোটি মানুষের বিশাল জনসংখ্যা সামাল দিতেই হিমসিম খাচ্ছি আমরা। এমতাবস্থায় এতো এতো মেহমান আপ্যায়ন আমাদের পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়।

মানবতার চেয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ অনেক অনেক বড়।

  • রাজেশ পাল: আইনজীবী

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.