Sylhet Today 24 PRINT

সাকিব : বাঘের চাইতে আহত বাঘ বেশি ভয়ংকর

আসিফ মোক্তাদির |  ৩১ অক্টোবর, ২০১৯

সাকিবকে নিয়ে চলমান ইস্যু সম্পর্কে প্রায় সবাই কমবেশি অবহিত। সাকিবের দোষ কী ছিল, কয়বছরের নিষেধাজ্ঞা এসব প্রায় সকলেরই জানা হয়ে গেছে। তাই এসব তথ্য সম্পর্কে নতুন করে আর কিছু লেখার আছে বলে মনে হয় না।

বাঙালিরা বরাবরই অতি আবেগী। একটা কথা প্রচলিত আছে, বাঙালিদের কে বাঁচাবে, আবেগ না যুক্তি? নাকি মেধা ও শ্রম? আবেগ দিয়ে বাঙালিরা অনেক কল্পনাতীত জিনিসকেও বাস্তবে রূপ দিয়ে দিতে পারে। বাঙালিরা পৃথিবীর অন্যতম আবেগপ্রবণ জাতি। তাই বলে বাঙালিদের মেধার ছোট করা হচ্ছে না।

সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের নয় বরং বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়। তাই তার নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশিদের আবেগে ভেঙে পড়া অস্বাভাবিক কিছুই নয়। প্রিয় খেলোয়াড়ের নিষেধাজ্ঞায় সমর্থকদের হতাশা, ক্ষোভ ও রাগে ফেটে পড়া খুবই স্বাভাবিক। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমবারের মত ওডিআইতে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার হওয়ার মাধ্যমে সাকিব ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই শীর্ষ অলরাউন্ডারের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া অনেকটা নিজস্ব সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন। নিষেধাজ্ঞা যখন দেওয়া হল তখনও ছিলেন ভালো ফর্মে। বিশ্বকাপে ছিলেন বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার।

নিষেধাজ্ঞাটা এমন সময় দেওয়া হল যখন ভারত সফর আসন্ন এবং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাথে খেলোয়াড়দের তিক্ত সম্পর্ক চলমান। তাই অতি আবেগী বাঙালিদের ধারণা পাপনের জন্যই সাকিবকে এ শাস্তি পেতে হচ্ছে। পাপন যে দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা এরকম না। পাপনের বিরুদ্ধেও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আছে। তাই পাপনকেও ক্ষমতা থেকে সরানোর দাবি অযৌক্তিক না। কিন্তু ক্রিকেটীয় জ্ঞান থেকে এতটুকু বলা যায়, সাকিবের এ নিষেধাজ্ঞার জন্য আপাতদৃষ্টিতে পাপন দায়ী নন। কারণ ২০১৭ সালের বিপিএল থেকেই ভারতের ওই জুয়াড়ি সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছিল এবং এ বছরেরই জানুয়ারি এবং আগস্ট মাসে আকসু জুয়ারির ব্যাপারে সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। নিষেধাজ্ঞা এমন সময়ে এসেছে যেখানে দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে সব দোষ গিয়ে পড়ছে পাপনের ঘাড়ে। ব্যাপারটা অনেকটা পরের মাথায় কাঁঠাল ভাঙার মত।

সাকিবের ব্যাপারে যেকোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশি জনগণের অনেকটা শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যেত। এমনকি সাকিবের বউ এবং মেয়ের সমালোচনা করতেও অনেকে ছাড়েনি। তবে এক্ষেত্রে সাকিব অনেকটা সফটকর্নার পাচ্ছেন একমাত্র পাপনের জন্য। না হলে কে জানে এদেশের জনগণ সাকিবকে স্পট ফিক্সারই বানিয়ে ফেলত। কে জানে কয়েকদিন আগে ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার পিছনে কি সাকিবের সফটকর্নার পাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল? ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হয়েও মাশরাফিকে না জানিয়ে হঠাত করেই এরকম ধর্মঘটের ডাক দিয়ে কি ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল? কে জানে? হয়তবা ছিল। পর্দার আড়ালেও অনেক কিছু ঘটে যায় যা আমাদের অজানা।

সাকিব ইস্যুতে তাই আড়াল পড়ে গেছে দেশের আর সব সমস্যা। আবরারের হত্যাকারীরা হয়ত জেলে বসে হাসছে, নুসরাতের হত্যাকারীর ফাঁসির রায় কার্যকর হবে? আবেগপ্রবণ বাংলাদেশিরা এক ইস্যু পেলে ভুলে যায় আরেক ইস্যু। কয়েকদিন মাতামাতি হয় পরেই সবাই ভুলে যায়। এই সাকিবকে ও দুদিন পরে সবাই ভুলে যাবে। ভারত সফরে ভরাডুবির পর আহাজারি হবে।

তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সূর্য অস্তমিত হবে না। কারণ সাকিবরা ফিরবে। ফিরতে হবে। লারা, শচীন, পন্টিং, গ্যারি সোবার্সদের মত লিজেন্ডারি প্লেয়ারদের সাথে লিজেন্ড হিসেবে নিজের নাম উচ্চারণ করার জন্যও সাকিবরা ফিরবে। মনে রাখবেন, বাঘের চাইতে আহত বাঘ বেশি ভয়ংকর!

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.