Sylhet Today 24 PRINT

সদিচ্ছায় সম্ভব নিম্নবিত্তদের খাবার তুলে দেওয়া

মাধব কর্মকার |  ০১ এপ্রিল, ২০২০

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক); ২৭টি ওয়ার্ড, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরসহ ৩৬ জন কাউন্সিলর, আর ১ জন মেয়র। ২৬.৫ বর্গ কিলোমিটারের এই সিটি করপোরেশন গঠনের উদ্দেশ্য নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা। হচ্ছে কি সেবা?

দেশে এখন চরম ক্রান্তিলগ্ন। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে উদ্বিগ্ন পুরো জাতি। ছুটি বাতিল হয়েছে ডাক্তার, নার্সসহ জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের। ভয়ার্ত দিন পার করছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্যরা।

সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে কিংবা এলাকার সন্তান হিসেবে এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ কাউন্সিলরের মুখদর্শন করতেই পারিনি। বোধ করি হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন তারা। কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধির তো ঘরে বসার থাকার কথা ছিলো না। শপথে তো জনগণের সেবা করার কথা। কোথায় তা?

করোনা প্রতিরোধে সারাদেশে স্প্রে করা হচ্ছে জীবাণুনাশক। সিলেটেও হয়েছে, হচ্ছে। বাজেট ছিলো এককোটি টাকা। টাকা শেষের পর্যায়ে বোধহয়। কিছু স্থানে সাবান পানির ব্যবস্থা করেছে সিসিক কর্তৃপক্ষ। তবে বেশিরভাগ ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লায় তা ছিল দুষ্প্রাপ্য।

গাজীপুরের মেয়র যখন চায়না থেকে কিট আর পিপিই আনতে ব্যস্ত, চট্টগ্রামের মেয়র যখন প্রত্যেক বাসায় খাদ্য তুলে দিতে ব্যস্ত, ঢাকার বিদায়ী মেয়র সাঈদ খোকন যখন ৫০ হাজার পরিবারের পুরো মাসের খাদ্য নিজের হাতে তুলে নিলেন, তখন আমাদের মেয়র স্প্রে মেশিন হাতে মিডিয়া কাভারেজে ব্যস্ত। আর কাউন্সিলরদের কয়েকজন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলেও কেউ বা আছেন ঘরে কেউ বা মহল্লার দোকানে আড্ডায়।

এতো অদূরদর্শী জনপ্রতিনিধি নিয়ে কীভাবে এগিয়ে যাবে সিসিক। কীভাবে পাবো নাগরিকসেবা?

মেয়রের ভাষ্যমতে, মহানগরীতে নিম্নবিত্তের সংখ্যা প্রায় ২.৫ লাখ। কীভাবে পার হচ্ছে তাদের দিন তা কি জানেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা? নাকি জেনেও না জানার ভান করছেন তারা। অথচ কার ঘরে কত সদস্য, কেমন আয় সবই তো জানেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ। সত্য না? শতভাগ সত্য। বিশ্বাস না হয় মিলিয়ে নেবেন নির্বাচনের আগে।

শুনলাম মেয়র নাকি ত্রাণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন ডেপুটি কমিশনারের (ডিসি) কাছে! কিন্তু কেন? গত ৩ অর্থবছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনে। সেগুলো কি রাস্তা বর্ধিতকরণ আর ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নেই বরাদ্দপ্রাপ্ত! আপদকালীন কিংবা দুর্যোগে তবে কীভাবে সেবা দেবেন মাননীয় মেয়র!

সমাজের উচুস্তরের মানুষের জন্য নানাবিধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হলে নিম্নবিত্তদের অন্তত ১৫ দিনের ডাল ভাতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। এখানেও তো ভোট রয়েছে, এবং সিসিকের ভোটব্যাংক কিন্তু এই সহস্রাধিক বস্তি ও কলোনি।

সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই বলে কি সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকবেন মাননীয় মেয়র এবং কাউন্সিলরগণ? লজ্জা নয় কি এটা?

এই দুঃসময়ে এই মহানগরীর কর্মহীন অর্থহীন মানুষের পাশে দাড়াতে কেবল আপনাদের সদিচ্ছার দরকার ছিলো। পাড়ার ছেলেগুলোকে আপনারা একত্রিত করতে পারেননি। প্রত্যেক পাড়ার মধ্যবিত্তদের কাছ থেকে খাদ্য উত্তোলন করে নিম্নবিত্তদের পৌঁছাতে পারেননি। তাদের খাদ্য সংকট দূর করতে পারেননি। এটা আপনার ব্যর্থতা।

হ্যাঁ, আপনার/ আপনাদের ব্যর্থতা। এজন্য আপনাদের কাউন্সিলর বানানো হয়নি। কীভাবে ভোট চাইবেন সামনে? লজ্জা করবে না? অবশ্য এসবের আপনারা থুরাই কেয়ার করেন!

সময় এখনো আছে। মানবতায় এগিয়ে আসুন। ডেবিট-ক্রেডিট হিসাব করুন। উপকার করার জন্য সবসময় টাকার প্রয়োজন পড়ে না, প্রয়োজন হয় কর্মপ্রচেষ্টার ,আর আপনার ভোটারদের প্রতি ভালবাসার।

আসুন এগিয়ে আসি, সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতায় সমাজের দুঃস্থ ও নিম্নবিত্তদের দুবেলা খাওয়ানো অসম্ভব নয়।

  • মাধব কর্মকার: নাট্যকর্মী ও সাংবাদিক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.