Sylhet Today 24 PRINT

কেমন আছ বিশ্ব?

পিকলু প্রিয় |  ০৮ এপ্রিল, ২০২০

জীবজন্তু, পশুপাখিকে মেরে ধরে, নদীনালা অবাধে দখল করে, চারপাশে ময়লা আবর্জনার স্তূপ করে, মানবজাতি যে সর্বনাশ করেছে তার হিসেব এখন মানবজাতি মৃত্যুর মিছিল দিয়ে দেবে! ❛চিরদিন কাহারও সমান যায় না❜; মানবজাতি ভুলেই গিয়েছিলো এই পৃথিবী শুধু তাদের একার নয়! আরও নানান জাতের অনেকেই ছিল সব ক❜টাকে মেরে ফেলেছে হিংস্র ও লোভী মানবজাতি! ক্ষমতার লোভ এতটাই ছিল তাদের! তারা ছাড়া অন্য কেউ রাজত্ব করতে পারবে না!

জীব, জন্তু, পশু-পাখি, নদী, নালা, গাছগাছালি, ধ্বংস করে, তাদের (চামড়া, হাড়, দাঁত, লোম) দিয়ে কোট, ব্যাগ, জুতা, চিরুনি, গহনাসহ আর কত কিছু বানিয়েছে পুঁজিবাদী মানবজাতি! গাছগাছালি ধ্বংস করে বিভিন্ন রকমের আসবাবপত্র বানিয়েছে! ক্ষমতা, লোভ, আর পুঁজিবাদের বৃত্ত এখানেই থেমে থাকেনি; মানবজাতি খুনোখুনি বর্বরতা করে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ সাজিয়েছে! কিন্তু চিরন্তন সত্য প্রকৃতি তার প্রতিশোধ ঠিক কড়ায়গণ্ডায় ফিরিয়ে দেয়। ❛তারি নাম প্রকৃতি যার কাছে কোন অজুহাত নেই❜।

এখন লক্ষ করে দেখুন, বিগত প্রায় দশ (১০) হাজার বছর আগ থেকে আজ অবধি যে প্রাণিকুল ও পরিবেশকে ধ্বংস করে শ্রেষ্ঠ জাতি সেজে ছিলেন, তারাই আজ মুক্ত আকাশের নিচে আপন আনন্দে জীবন যাপন করছে এবং শ্রেষ্ঠ জাতিকে নাকাবন্দি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।

জীবনে ততটাই বড় হওয়া উচিত মাটিতে পা রেখে যতটুকু আকাশ ছোঁয়া যায়। মানবজাতি ইতিহাস ভুলে যায়! আজকাল মাটিতে পা রাখতে তাদের অনীহা! মানবজাতি ইতিহাস ভুলে গেলে কী হলো প্রকৃতি তার হিসেব ঠিক কষে রাখে।

মানুষের ধারণা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও অনেক বৈচিত্র্যময় প্রাণি বিলুপ্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। তা ঠিক, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে শুধু প্রাণিকুল নয় অনেক কিছুই বদলায়। তাই বলে শাক দিয়ে মাছ ডেকে আর কত মশাই! বলাই বাহুল্য জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বৈচিত্র্যময় প্রাণির যত বিলুপ্তি ঘটছে তার থেকে ঢের বিলুপ্তি ঘটেছে মানুষের কর্মকাণ্ডে! আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রাণিকুল বিলুপ্তির পিছনে মানুষের ভূমিকা সব থেকে বেশি।

ডাইনোসরের পরেও পৃথিবীতে প্রাচীন অদ্ভুত প্রাণিদের কোন কমতি ছিল না। মানুষের উন্নতির সাথে সাথে, বিশেষ করে হোমো সেপিয়েন্স নামক মনুষ্য প্রজাতির কল্যাণে গোটা বিশ্বজুড়ে একে একে এই বিশাল প্রাণিগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মনে হতে পারে মানুষ আর এমন কী ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে! কিন্তু প্রাণিজগতের খাদ্যশৃঙ্খলা অত্যন্ত নাজুক এবং পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া এই বিরাট প্রাণিগুলো প্রকৃতিগতভাবেই সংখ্যায় কম ছিল, জন্মহারও ছিল অত্যন্ত ধীরগতির। একটি তৃণভোজী প্রাণির মৃত্যুর সাথে সাথে তার মাংসের ওপরে নির্ভরশীল মাংসাশী শিকারির জীবনেও প্রভাব পড়ে। এই রকম আরও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।

করোনা ভাইরাস (কোভিড ১৯) রোগে সভ্য দেশ, উন্নত আধুনিক দেশ, তাদেরই চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা হিমশিম খাচ্ছেন কিছু চিকিৎসক মারাও গিয়েছেন! সেখানে ভারতীয় উপমহাদেশগুলোকে নিয়ে আতংকিত না হওয়ার কোন কারণ নাই। বিশেষ করে ঘনবসতির দেশ বাংলাদেশ যেখানে সু-শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা খুব কম। মূর্খতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা আষ্টেপৃষ্ঠে লেপটে আছে! সেই দেশ যদি একবার চীন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, আমেরিকার মত অবস্থা হয় তা হইলে পুরো বাংলাদেশ মৃত্যুপুরী হয়ে উঠবে।

এই রকম মহামারিতে যাহারা ধর্মের বয়ান দিচ্ছেন তাদের বলছি- আপনাদের বিশ্বাস আপনার কাছে রাখুন। ধর্ম ব্যাপারটাই হলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিশ্বাস। আর যাই করুন অন্ততপক্ষে ধর্মের বিশ্বাস দিয়ে বিজ্ঞানকে পরিমাপ করবেন না!

আশা করছি এই ভাইরাসের সাথে মোকাবেলা করতে গিয়ে অনুমান করতে পারছেন কোন ধর্ম কিংবা ধর্মগ্রন্থের বদৌলতে নয় সমাধান হলে কেবল এই বিজ্ঞানীদের দ্বারাই হবে। এবং তখন সর্বমহলই উপলব্ধি করতে পারবেন এবং একই সাথে দীর্ঘশ্বাস ফানুস করে ভাববেন মন্দির- মসজিদ নয় আরও বেশি হাসপাতাল, আরও বেশি গবেষণাগার, আরও বেশি শিক্ষাব্যয় প্রয়োজন ছিল মানবজাতির জন্য।

করোনার প্রকোপ দেখে সারা বিশ্ব যখন বুঝতে পারলো সস্তা আবেগ ও অলৌকিক বিশ্বাস মানুষকে বাঁচাতে পারবে না! ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা করা ও ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করা শ্রেণিগুলো এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন বিজ্ঞানই মুক্তি।।

মানুষ বেঁচে থাকুক। সকলের মঙ্গল হউক।
সতর্ক থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

  • পিকলু প্রিয়: লেখক, ফ্রিল্যান্স সংবাদকর্মী, দোহা, কাতার।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.