Sylhet Today 24 PRINT

কোভিড-১৯: সামাজিক দূরত্ব ও আমাদের প্রস্তুতি ও করণীয়

ড. মোহম্মদ মাহবুব চৌধুরী |  ১৪ এপ্রিল, ২০২০

কোভিড-১৯ আমাদেরকে জানা বিশ্বকে সম্পূর্ণ এক নতুন মাত্রায় উপস্থাপন করেছে। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশ হতে এই নতুন ভাইরাস (করোনাভাইরাস) এর সংক্রমণ শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত বিশ্বের ২১২টি দেশের প্রায় ১৯ লক্ষের বেশি মানুষকে সংক্রমিত করেছে, ১ লক্ষ ১৯ হাজারের মত মানুষ ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে, ৪ লক্ষ ৪০ হাজারের বেশি আক্রান্ত রোগী সেরে উঠেছেন। এই রোগের ভয়াবহতার অন্যতম কারণ এই ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণের ক্ষমতা যা নির্বিচারে যে কাউকেই আক্রান্ত করতে পারে এবং যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল সে যেই হোক তার জন্য জীবনসংহারী হয়ে উঠতে পারে। যেহেতু এই রোগ এর কোন কার্যকর ড্রাগ নেই, কোন ভ্যাক্সিন ও আবিষ্কৃত হয়নি তাই সাবধানতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে নিজেকে দুরে রাখাই হল এই রোগ এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকরী ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ। এই সাবধানতামূলক ব্যবস্থার অন্যতম হল সামাজিক ও নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ (৬ ফুট ব্যবধান) যা এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বই এক অবিসংবাদিত নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সারা বিশ্বে সামাজিক এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার যে সাবধানতামূলক নীতি গৃহিত হয়েছে তার উদ্দেশ্য হল সংক্রমণের হার যথাসম্ভব কমিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাতে এই নিয়ন্ত্রিত সংখ্যক রোগীকে যাতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যায়। এটা করা সম্ভব না হলে রোগ বিস্তারের একেবারে শুরুতেই রোগ সংক্রমণের হার অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে গিয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এমনভাবে বেড়ে যাবে যে তাদেরকে আর কোন ভাবেই জরুরি ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সম্ভব হবে না। যেহেতু এই নতুন ভাইরাসকে মোকাবেলা করার মত কার্যকর কোন ড্রাগ নেই এখনো তাই এর একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত এই সাবধানতামূলক ব্যবস্থা গুলো যথাযথভাবে মেনে চলাই হল একমাত্র কার্যকর ব্যবস্থা। কিন্তু একটি কার্যকর ভ্যাক্সিন আবিষ্কার, এরপর কোয়ালিফাই করে জনগণের জন্য ব্যবহারোপযোগী অবস্থায় আনতে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যায়। তাই কানাডার প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত দেশের নাগরিকদেরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সময় ২০২১ সাল এর শেষ বা তারও বেশি পর্যন্ত হতে পারে বলে আশংকা ব্যক্ত করেছেন। বিশ্বের তাবৎ দেশগুলোতে এই সময়ের মধ্যে নাগরিকদের বিভিন্ন মাত্রার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য সাবধানতামূলক ব্যবস্থা- বাইরে অবস্থানের ক্ষেত্রে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস ব্যবহারসহ একজন আরেকজন হতে ৬ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, নিয়মিত হাত-মুখ সাবান দিয়ে ধোয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো শক্তভাবে পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এখন এই সামাজিক দূরত্ব অথবা লকডাউন কার্যকর রাখার পাশাপাশি এই দেশগুলো আর যা করছে তা হল- বেশিরভাগ সংখ্যক ঠাণ্ডা-কাশি-সর্দি-জ্বরের উপসর্গ বিশিষ্ট রোগীদেরকে কোভিড-১৯ টেস্টের আওতায় এনে আক্রান্ত রোগীদের কোয়ারেন্টিন করে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আনা, এর ফলে তাদের দ্বারা নতুন কাউকে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে ফেলা, এবং তাদের সংস্পর্শে কেউ ইতোমধ্যে এসে থাকলে তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকেও কোয়ারেন্টিন বা চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা। এতে করে সংক্রমণ যেমন কমানো সম্ভব তেমনি অতি দ্রুত আক্রান্তকে এভেইলেবল স্বাস্থ্যসেবাও প্রদান করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে রোগ বিস্তারের প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখতে পারলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোন দুর্বলতা থাকলেও তাড়াতাড়ি কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে সেই গ্যাপ মেটানোর চেষ্টা করা যায়- ডাক্তারদের জন্য পর্যাপ্ত পিপিই- মাস্ক, ফেইস শিল্ড, কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তকরণের জন্য টেস্ট কিট, আক্রান্ত রোগীদেরদের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল, আইসিইউ সুবিধা বাড়ানো যায়।

এখন দেখি কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে আমরা কী করেছি বা করছি-
আমাদের সরকার জানুয়ারি হতে মার্চ পর্যন্ত সময় পেয়েছিল এই প্রস্তুতি নেওয়ার। সেটাতো করেনিই, বরং মন্ত্রীরা দাম্ভিকভাবে বারবার জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলে গেছেন- ‘আওয়ামী লীগ করোনার চেয়েও বেশি শক্তিশালী’, ‘করোনা নিয়ন্ত্রণে আমেরিকা-ইতালির চেয়েও বাংলাদেশ বেশি সফল’ ‘সিঙ্গাপুরের চেয়েও বৃহৎ হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে’- নানা কথা। তাদের এই সমস্ত রাজনৈতিক বক্তৃতা জনগণ তিন মাস ধরে শুনে গেছে- কতখানি বিশ্বাস করেছে বলা মুশকিল। করোনার অস্তিত্ব নিয়ে একটা লম্বা সময় ‘অস্বীকৃতির’ নীতি বজায় রাখার পর মার্চের শুরুতে যখন প্রথম কোভিড-১৯ রোগী চিহ্নিত হল তখন আমাদের সরকারের নীতিনির্ধারকরা শুরু করলেন- ‘নো টেস্ট নো করোনা’ নীতি। জনগণ কিন্তু দেখলো ১৮ কোটি জনগণের জন্য মাত্র কয়েক হাজার টেস্টিং কিট, ১০০-২০০ ভেন্টিলেটর, ৬০-৭০টা আইসিইউ ছাড়া আমাদের আর কিছুই নাই, এমনকি ডাক্তারদের পর্যাপ্ত পিপিই পর্যন্ত নেই। মন্ত্রীদের এতদিনের বক্তৃতাবাজির স্বরূপ উন্মোচিত হল। কিছু মন্ত্রী পরিস্থিতি টের পেয়ে ইতোমধ্যেই আড়ালে চলে গেছেন। এটা হল সরকারি ভাবে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত করার আগে আমাদের প্রস্তুতি।

এখন দেখি প্রথম রোগী সনাক্তকরণের পরেও আমরা কী ধরনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি বা নিচ্ছি-
প্রথমত, আমরা সামাজিক দূরত্ব বা লকডাউনের জন্য কোন স্ট্র্যাটেজিক ব্যবস্থা না নিয়েই মার্চের শেষে এক সপ্তাহের জন্য জনগণকে কাজ হতে ছুটি দিয়েছি। ১ কোটি জনগণ এই খুশিতে ঢাকা শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাস, ট্রেন, লঞ্চ স্টেশনে গিয়ে গাদাগাদি করে জড়ো হয়েছে- নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই, কিছু পাবলিক গেছে আবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আনন্দভ্রমণে- সংক্রমণের ষোলকলা পূর্ণ করতে। জনগণ অসচেতন বা মূর্খ মানলাম, কিন্তু সরকার তো পারতো ‘ছুটি’র ঘোষণা না দিয়ে লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে জনগণকে নিজের অবস্থান না ত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করতে, বা জনগণকে বাড়িতে যাবার সুযোগ দিলেও আর্মি-পুলিশকে রাস্তায় নামিয়ে প্রয়োজনীয় শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে দিতে- সেটা করা হয় নাই। উপরন্তু এই বিপুল সংখ্যক লোক গ্রামে গিয়েও গ্রামের যে মানুষগুলো এতদিন কিছুটা নিরাপদ ছিল তাদেরকেও পাঠিয়ে দিলো আরও বড় ঝুঁকির মাঝে।

দ্বিতীয়ত, মসজিদগুলোতে এই মুহূর্তে মক্কা-মদিনা বা অন্যান্য মুসলিম দেশের আদলে সমস্ত জামাত বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় আদেশ না দিয়ে আমরা ছেড়ে দিলাম তা সম্পূর্ণ রূপে অসচেতন কিছু অতি-ধার্মিক মানুষের বিবেচনার উপর। কিছু অপরিণামদর্শী মোল্লা আর মুসলিম কোন রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় সিদ্ধান্তের অনুপস্থিতে দলে-দলে মসজিদে হাজির হয়েছে সম্ভাব্য বিপদকে তোয়াক্কা না করেই। সরকার কি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে একটা জাতীয় ঘোষণা দিতে পারতো না শুরুতে? নানা মত থাকবেই মোল্লাদের মাঝে, কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা এলে এই অবিবেচকরা কতটা বিরোধিতারই সুযোগ পেত? আমার ধারনা এই পরিস্থিতিতে এরা কোন ঝামেলাই করতে পারতোনা যদি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কোন কেন্দ্রীয় নিষেধাজ্ঞা আসতো। যাই হোক জানিনা রাষ্ট্র এ ব্যাপারে কী ভূমিকা নিচ্ছে।

এছাড়া কতিপয় অশিক্ষিত ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা সোশাল মিডিয়াতে অনবরত করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত মনগড়া তথ্য দিয়ে যাচ্ছে, ধর্মের অপব্যাখ্যা করছে, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে যা এই করোনাময় সময়ে অত্যন্ত বিপদজনক। এমনিতেই সরকার সবকিছুর উপর নজরদারি করে কোন না কোনভাবে কিন্তু এই বিশেষ ধর্মব্যবসায়ীদের জন্য যে ধরনের রেগুলেটরি ভূমিকা রাখা উচিত তা তো চোখে পড়লো না।

তৃতীয়ত, সরকারি ছুটির সাথে সাথে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কর্মীদের ছুটিতে পাঠায় এক সপ্তাহের জন্য মাসের শেষে বেতনের কোন বন্দোবস্ত না করেই। তো এ কর্মীরা যখন তাদের ছুটির শেষদিনে কাজে যোগদানের জন্য পায়ে হেঁটে, গাড়ির ছাদে গাদাগাদি করে ঢাকামুখী হয় তখন হঠাৎ করে গার্মেন্টস মালিকরা একেবারে শেষমুহুর্তে তাদের ছুটির মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দেয়। এই অমানবিক কাণ্ডে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা এবং সরকারের দায়ভার কোনভাবেই এড়ানো যায়না। উপরন্তু এতগুলো মানুষদের রাস্তায় এনে নতুন করে আবার করোনাবিস্তারের পথ খুলে দেয়া হল।

চতুর্থত, আমাদের জনসংখ্যার ৩০-৩২% লোক এখন দরিদ্র এবং অতি-দরিদ্র। এদের মধ্যে প্রায় এক কোটি লোক দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে এবং এরা দিনে এনে দিনে খায়। আর প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি লোক আছে দরিদ্র শ্রেণির যাদের বড়জোর ৩-৭ দিন নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা আছে। তাই লকডাউনের প্রথম সাতদিনের মধ্যেই দেশের ৩০-৩২% লোক খাদ্যের অভাবে অনাহারের সম্মুখীন। এদের জন্য করোনাতে মৃত্যুর চাইতে অনাহারে মৃত্যুর সম্ভাবনাই বেশি প্রকট। আর নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণি কাজের অভাবে আগামী ১৫-৩০ দিনের মধ্যেই এক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে নিপতিত হতে যাচ্ছে। এগুলো ঘটছে আমরা প্রকৃত ক্রাইসিসে পড়ার আগেই, সংক্রমণের সর্বোচ্চ সামনের দিনগুলোতে কী ঘটবে আল্লাহই জানেন।

এখন প্রশ্ন হল আমাদের ‘মধ্যম আয়’-এর দেশ এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছে বা নিচ্ছে? আমাদের সরকার কর্তৃক সাড়ে ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রাথমিক অর্থনৈতিক প্রণোদনা উঁচুতলার লোকদের জন্য সুনির্দিষ্ট ভাবে আর্থিক বরাদ্দের ঘোষণা এসেছে। পাকিস্তানের মত চরম ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ ও করোনাময় দুর্যোগের বাস্তবতায় তাদের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগণের জন্য মাথাপিছু মাসিক ১২০০০ রুপির বরাদ্দ করেছে, পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জিও সাড়ে সাত কোটি দরিদ্রের জন্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফ্রি রেশনের ব্যবস্থা করেছে- জনগণের কাছে সরাসরি আর্থিক সাহায্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে।

আজকে শুনলাম সরকার ৫০০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নিয়েছে হতদরিদ্র মানুষদের জন্য। দেরিতে হলেও এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই কিন্তু বলা বাহুল্য, এখানেও করা হয়েছে হতদরিদ্র মানুষদের প্রতি এক ধরনের বৈষম্য-যেখানে ধনী গার্মেন্টস শিল্পের মালিকদের ২% সুদে আর ভারী শিল্পমালিকদের ৪% সুদে প্রায় ৭২০০০০ কোটি টাকার ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেখানে হতদরিদ্র মানুষদের জন্য সবচেয়ে বেশি ৫% সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। আমরা জানি ধনীদের ঋণখেলাপ হলেও তারা সরকারের আনুকূল্যে কোনভাবে পার পেয়ে যায়, কিন্তু দরিদ্র জনগণকে কোনধরনের ঋণখেলাপেও দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়।

যাই হোক, আমাদের এখানে লকডাউন কাজ করছেনা বা লোকজন বেরিয়ে আসছে এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ক্ষুধা। বাংলাদেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে যেখানে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি লোকের খাদ্য মূলত দৈনিক জীবিকা নির্ভর বা নিম্ন আয়ের পেশা নির্ভর সেখানে এভাবে কতদিন লকডাউন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলা মুশকিল; কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে আগামী ১-২ মাস অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল করোনা পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষণের জন্য। আমাদের মাত্র কম্যুনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্যাটার্ন দেখলে আমাদের সংক্রমণের সর্বোচ্চ হার সামনের ১ মাসের মধ্যেই প্রতিভাত হবার কথা। তাই ন্যূনতম সামনের ১ মাস যদি আমরা কঠোরভাবে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে না পারি করোনা পরিস্থিতি যে ভয়ালভাবে উপস্থিত হতে পারে তা চিন্তা করতেও ভয় হয়। আমরা যদি সামাজিক দূরত্ব বা শারীরিক দূরত্ব বা সামাজিক লকডাউনকে কার্যকরী করতে চাই ন্যূনতম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে অন্তত ১ মাসের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে যাতে ক্ষুধার তাড়নায় তাদের বের হতে না হয়। সরকার কি চাইলে এই জরুরি পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মত দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামনের ১-২ মাসের জন্য বিনামূল্যে রেশনের বন্দোবস্ত করতে পারে না? প্রয়োজনে শহরের বস্তি, পাড়া-মহল্লা, গ্রামে, ইউনিয়নে এই খাদ্য সরবরাহের কাজে আর্মিকে ব্যবহার করা যেতে পারে। জানিনা সরকার এভাবে কিছু ভেবেছে কি না।

এবার আসি করোনা প্রতিরোধে আমরা কী জরুরি স্বাস্থ্যব্যবস্থা গ্রহণ করেছি বা করছি-
আগেই বলেছি সামাজিক, শারীরিক দূরত্ব বা লকডাউনের সুফল পেতে হলে সংক্রমণের একেবারে শুরুর দিকে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে যে সময়টুকু পাওয়া যায়, ওই সময়টাকে পুরো কাজে লাগাতে হয় বেশি সংখ্যক সন্দেহভাজন রোগীকে টেস্ট করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন করা যাতে তার দ্বারা ভবিষ্যৎ সংক্রমণকেও প্রতিরোধ করা যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকেও যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা যায়। এই প্রকৃত রোগীর সংখ্যা জানাটা অতি জরুরি যে তা সরকারের পক্ষে কার্যকর স্ট্যাটেজি নিতে সহায়ক হয়- যাতে সংক্রমণ এর হার যখন অতি দ্রুত (এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথ) পর্যায়ে পৌছায়, ওই ভয়ংকর সময়ের তাণ্ডবকে মোকাবিলা করার জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থার যথাযথ প্রস্তুতি আগে থেকেই নেওয়ার একটা সুযোগ পাওয়া যায়। আমাদের পাশের দেশ ভারত ইতিমধ্যেই ১ লক্ষেরও বেশি টেস্ট করেছে, পাকিস্তান করেছে ৫০ হাজারের ও বেশি। সেখানে গত এক মাস ধরে সর্বসাকুল্যে আমাদের টেস্ট হয়েছে ৯৬৫৩। বাংলাদেশে পার মিলিয়নে টেস্ট এর সংখ্যা যেখানে ৫৯, সেখানে ভুটানে এই সংখ্যা ১৫১১, নেপালে ১৫২, শ্রীলঙ্কায় ২১১।

করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আমরা তো দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা! যাই হোক এই প্রতিরোধমূলক পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে দ. কোরিয়া, তাইওয়ানের মত দেশগুলো করোনা প্রতিরোধে যথেষ্টই সফল হয়েছে। আবার ইউরোপের অনেক দেশ, আমেরিকা বা কানাডার মত অনেক ধনী দেশেই শুরুর দিকে এই চরম অবস্থা মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্যসেবায় কিছুটা ঘাটতি ছিল, কিন্তু করোনা শনাক্ত হওয়ার পরে তারা আর বসে থাকেনি- দ্রুত টেস্টের সংখ্যা বাড়িয়ে শনাক্তকারী রোগীকে আইসোলেট করার ব্যবস্থা নিয়েছ, তার সংস্পর্শে আসা মানুষদের চিহ্নিত করেছে, দ্রুত চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসছে- রোগের বিস্তার কমানোর জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে- এর মাঝে আবার স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক পরিসরে চেষ্টা চলছে চিকিৎসকদের পিপিই সরবরাহ বৃদ্ধি, ভেন্টিলেটরসহ হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়ানো- ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির জরুরি ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। এই দেশগুলো তাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম থাকা সত্ত্বেও এবং মেডিকেল ব্যবস্থা হাজার গুণে ভাল থাকা সত্ত্বেও রোগ সংক্রমণ সীমিত রাখতে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছে। কোন কোন দেশে রোগ সংক্রমণের চুড়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার লাশও পড়ছে এত সামাজিক দূরত্ব বা সাবধানতামূলক ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও। সেইখানে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ১৮ কোটি জনগণের বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে মাত্র কয়েক হাজার টেস্ট কিট, কয়েকশ ভেন্টিলেটর আর অপ্রতুল পিপিই সাপোর্টের সক্ষমতা নিয়ে সংক্রমণের শুরুতেই যেই সমন্বয়হীনতা ও কার্যকর স্ট্রাটেজির অভাব প্রতিভাত হয়েছে -এতে সত্যিকার অর্থেই এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা করছি, যার করাল গ্রাস হতে আমাদের- আপনাদের পরিবার-পরিজন কারোরই রেহাই হয় কিনা বলা মুশকিল।

প্রাথমিকভাবে শুধু আইইডিসিআর এর হাতে ন্যস্ত হয়েছিল করোনা রোগী শনাক্তকরণের টেস্টের দায়িত্ব। এখন শোনা যাচ্ছে শুধু ১৮টি নির্দিষ্ট হাসপাতালেও এই রোগের টেস্ট বা চিকিৎসা দেয়া হবে। কিন্তু অনেক অভিযোগ এসেছে এই হাসপাতালগুলো সম্পর্কে। অনেক সর্দি-কাশির উপসর্গের রোগীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার দেরিতে হলেও ৭০০০০ হাজার টেস্ট কিট আমদানি করেছে- কিন্তু এখনই এই মুহূর্তেই অতি দ্রুত টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করে আক্রান্ত রোগীকে কোয়ারেন্টিন করতে না পারলে অতি দ্রুতই আমরা রোগ সংক্রমণের এক অনিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় পড়ে যাব যার পরিণতি সত্যিই বড় ভয়ংকর। ইতোমধ্যে সরকারি হিসেবে সোমবার (১৩ এপ্রিল) পর্যন্ত প্রায় ৮০৩ রোগী সনাক্ত হয়েছে, ৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছে, ৪২ জন সুস্থ হয়েছেন। বেসরকারি হিসেবে আরও প্রায় ১০৯ এর ও বেশি করোনা সন্দেহভাজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এই সংখ্যাগুলো কম্যুনিটি সংক্রমণের সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করে। এখন নানা এলাকায় লকডাউন করা হচ্ছে কিন্তু একই সাথে টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেট করতে না পারলে প্রতিদিনই রোগ সংক্রমণের বা বিস্তারের ঝুঁকি আমরা বাড়িয়ে দিচ্ছি। তাই লকডাউনের পূর্ণ সুবিধা নিতে হলে আমাদের টেস্ট সংখ্যা না বাড়িয়ে কোন উপায় নেই। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।

এই লকডাউনের বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সময়ে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে এখনো যা করা যেতে পারে-
ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পরামর্শ মত করোনা রোগীর টেস্ট বা চিকিৎসার জন্য শুধু ১৮টা নির্দিষ্ট হাসপাতালই নয় সকল বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতাল, থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে ২৪ ঘণ্টা সর্দি-কাশির রোগীর টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্ভাবিত টেস্টকিটকেও অতি দ্রুত বেশি সংখ্যক রোগীর প্রাথমিক টেস্টের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর শনাক্তকারী রোগীকে অতি দ্রুত হাসপাতালগুলোর বেডে কোয়ারেন্টিন করা যেতে পারে। প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর আর অক্সিজেন সরবরাহের নিশ্চয়তাপূর্বক আইসিইউ’র সংখ্যা বাড়াতে হবে, প্রয়োজনে ফিল্ড হাসপাতাল তৈরিরও উদ্যোগ নিতে হবে। অবিলম্বে সকল ডাক্তারদের জন্য উপযুক্ত পিপিই’র সরবরাহ নিশ্চিত করে, এক বিপুল সংখ্যক ডাক্তারকে যারা করোনা রোগীর বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবায় অভ্যস্ত নয় তাদেরকে এই বিশেষ ‘ইনটিউবেশন’ সংক্রান্ত একটা স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ডাক্তারদের ভিলেন না বানিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্টের ব্যবস্থা করে তাদের সাহস আর আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে- কারণ এ যুদ্ধে তারাই আমাদের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা। কিন্তু ইতোমধ্যে পিপিই’র অভাবে কোভিড-১৯ রোগীকে সেবাদান করতে গিয়ে কমপক্ষে ২০ জন ডাক্তার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে - তাদের নিজেরা এবং তাদের পরিবারের জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন। সরকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার এই বিষয়গুলোতে কী কার্যকর ব্যবস্থা এখন নিচ্ছে এটা এখনো পরিষ্কার না- সময় কিন্তু আর বেশি নাই।

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাঝে আমাদের সরকারের দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের সীমাবদ্ধতা তো দৃশ্যমানই- তার উপর ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’র মত নতুন এক উপদ্রব হাজির হয়েছে- তা হল সরকারিদলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কর্তৃক ত্রাণের হাজার হাজার বস্তা ভর্তি চাল চুরির মহোৎসব। এই চোরগুলো বুঝতেই পারছেনা কোন মহা সংকটের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি বা যাবো। এটা কোন সাধারণ অর্থনৈতিক বা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি না যে আজকে চাল চুরি করে স্টক করে একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দুদিন পরে বেশি দামে অভাবী লোকের কাছে বিক্রি করে কিছু মুনাফা লুটবে। সমগ্র মানবজাতি এ মুহূর্তে এমন এক মরণঘাতি ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করতেছে যা কোন ধনী-গরীব, চোর-ডাকাত, সরকারি দল-বিরোধীদল চেনে না- যে কোন মুহূর্তে আমাদের যে কাউকে তার এর শিকারে পরিণত করতে পারে- এমনকি এই চোরগুলো নিজেরাও এর শিকারে পরিণত হতে পারে, চাল চুরি করে পরে বেচে মুনাফা লুটা তো বহু দুরের ব্যাপার। অতদিন পর্যন্ত বাঁচার নিশ্চয়তা কি আছে?!

যাই হোক সরকারের উচ্চ পর্যায় হতে এগুলোকে শক্ত হাতে প্রতিহত করা হোক- তা না হলে ক্ষুব্ধ মানুষের জনরোষের কবল হতে শেষ রক্ষা নাও হতে পারে। ৭৪-এর দুর্ভিক্ষের মত যেন ‘আমার কম্বল গেল কই’-এই অবস্থা না হয়। মানুষ কিন্তু কিছুই ভুলেনা।

আরেকটা বিষয় না উল্লেখ করলেই নয়- সরকার মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং গুজব প্রতিরোধের জন্য ইতিমধ্যেই বিশেষ আইনের আওতায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে - শুধুমাত্র করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি বিষয়ক জনগণকে দেয়া মিথ্যা আশ্বাস, করোনা রোগী চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে গাফলতি, মৃতের সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি বা অস্পষ্টতা, সার্বিক সমন্বয়হীনতা নিয়ে সমালোচনার করার অভিযোগে। এই মুহূর্তে মানুষের জানের নিরাপত্তা প্রদান যেখানে সরকারের প্রধান কাজ সেখানে সরকারের ফোকাস হল মিডিয়াতে নজরদারিতে- সোশাল মিডিয়াতে কে কী বলছে সেদিকে পাত্তা দেয়ার! এ যুগে তথ্য গোপন করার আসলে খুব একটা সুযোগ নেই। সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেও নানা উপায়ে মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছায়ই। এছাড়া এই মুহূর্তে মানুষ নানা কারণেই নিজের বা নিজের আপনজনের প্রাণ হারানো নিয়ে শঙ্কিত। এটা জীবন-মরণের প্রশ্ন। তাই সরকারের কোন গাফলতি বা অব্যবস্থাপনায় কিছু প্রতিক্রিয়া আসাটাই স্বাভাবিক এই দুর্যোগের মুহূর্তে। কিন্তু পরিস্থিতির বিবেচনায় সেই প্রতিক্রিয়াকে পজিটিভ হিসেবে দেখাটাই সরকারের বিচক্ষণতার কাজ হবে। মনে রাখতে হবে এটা কোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বা কোন মানব শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ না যে জোর প্রয়োগ করে তাকে চাপিয়ে রাজনৈতিকভাবে জয়লাভ করার কোন বিষয় আছে। গোটা বিশ্বের মানুষ একাট্টা হয়ে এক অদৃশ্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। তাই এ পরিস্থিতিতে এই ধরনের উটকো নিষেধাজ্ঞা ও দমনমূলক আচরণ হিতে বিপরীত হতে পারে। এ সত্যটুকু যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে সরকার, ততই মঙ্গল।

এখন নাগরিক হিসেবে আমাদের নিজেদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, সরকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। সরকারের সমালোচনা জারি থাকবে সেটার প্রয়োজনও আছে। এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সবার জীবনই যখন হুমকির মুখে- এমনকি সরকারের লোকেরও, সেক্ষেত্রে সরকারের কোন গাফলতি ও অব্যবস্থাপনা যদি সবার জীবনকেই বিপদগ্রস্ত করে তোলে, দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে বিবেকবান মানুষকে সেই প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে। এধরনের প্রতিবাদ আমার জন্য, আমার আপনজনের জন্য, আপনার জন্য, আপনার আপনজনের জন্যও। শুধু খেয়াল রাখতে হবে সমালোচনা যাতে নির্ভরযোগ্য তথ্যের নিরিখে হয়- একতরফা শুধু সমালোচনার জন্য সমালোচনা যাতে না হয়।

আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে সাবধানতামূলক ব্যবস্থাগুলো নেয়া সম্ভব- যথাসম্ভব পারিবারিক ও সামাজিক সমাগম এড়িয়ে সামাজিক ও নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার, নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত-মুখ ধোয়া সবকিছুই যথাসম্ভব মেনে চলা- কমপক্ষে পরবর্তী ১-২ মাসের জন্য। বাইরে জনসমাগম এড়িয়ে এমনকি নামাজও আপাতত ১-২ মাস নিজের ঘরেই পড়াটা আপনার নিজের জন্য, আপনার আপনজনের জন্য এবং অপরের জন্যই মঙ্গলজনক। বরং বাসায় থেকে নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিয়ম করে ভিটামিন সি (লেবু, কমলা, ট্যাংগ ইনস্ট্যান্ট জুস ইত্যাদি), এক চামচ মধু, ডিমের কুসুম আপনার খাদ্য মিলে রাখুন। মন ভালো রাখার জন্য বই পড়ুন, পারলে কমেডি মুভি দেখুন, আত্মার প্রশান্তির জন্য নিজ নিজ ধর্মের ইবাদতে মগ্ন থাকতে পারেন।

এ সময়ে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে হবে। আরেকটি বিষয় যা আমাদের সাধারণ জনগণ করোনা রোগী নিয়ে বা মৃতদেহের ক্ষেত্রে এক ধরনের অস্বস্তি বোধ করছেন- তাদের জন্যই বলছি মৃত ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাস ৪-৫ ঘণ্টার বেশি বাঁচতে পারেনা। তাই মোটামুটি ৫-৬ ঘণ্টা পর মৃত লাশকে গোসল করিয়ে নিরাপদেই সামাজিক কায়দায় দাফন করা সম্ভব। এছাড়া এই সময়ে অনেক সোর্স হতেই করোনা রোগীকে ইথানল ভাপ বা ক্লোরকুইন জাতীয় ম্যালেরিয়ার ড্রাগ নেবার পরামর্শ শোনা যাচ্ছে। এগুলো মরণঘাতি! ভুলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজের বুদ্ধিতে বা কারো কথায় ইথানল ভাপ অথবা ক্লোরকুইন জাতীয় কোন ম্যালেরিয়ার ড্রাগ গ্রহণ করবেন না!

সরকার আর আমাদের সবারই সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই করোনা ভাইরাসের মত এই মরণঘাতি এই প্রাকৃতিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

মাহবুব চৌধুরী: কানাডা প্রবাসী লেখক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.