Sylhet Today 24 PRINT

বাজে রণডঙ্কা

মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক |  ১৯ এপ্রিল, ২০২০

বিশ্বজুড়ে অভাবনীয় এক সংক্রমণ সন্ত্রাস চলছে। জিম্মি হয়ে পড়েছে পৃথিবী। নিস্তব্ধ ঢাকা, নিস্তব্ধ দেশ, এমনকি নিস্তব্ধ আজ গোটা পৃথিবী। সন্ত্রাসী অতি ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস যার নাম কোভিড-১৯। টার্গেট এ গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণি মানুষ। চোখে দেখা যায় না, এমনকি সাধারণ অণুবীক্ষণযন্ত্রেও দেখা যায় না, এত ক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের আক্রমণ থামিয়ে দিয়েছে পৃথিবী। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশটাও বর্তমানে ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়েই চলছে। অদৃশ্য এক দানব সবাইকেই বাধ্য করেছে গৃহবন্দি করতে। এইভাবে ঘরবন্দি থাকা মানুষের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবুও মানুষ আপাতত থাকতে হবে ঘরবন্দি।

বিশ্বে ফেব্রুয়ারি থেকেই কোভিড-১৯ মারাত্মক আকার ধারণ করে। বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম ইতালিফেরত দুই প্রবাসী এ রোগে আক্রান্তের খবর জানা যায়। ১৮ মার্চ জানা যায় প্রথম মৃত্যুর সংবাদ। ২৩ মার্চ জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায় রোগটি এখন আর বিদেশফেরত প্রবাসীদের মধ্যে সীমিত নেই, কমিউনিটি সংক্রমণ হচ্ছে। ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রমণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। শুরু হয় দেশব্যাপী লকডাউন। দেশের এই ক্রান্তিকালে খাদ্যাভাবে দিন মজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের নিদারুণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে পতিত হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ এতে শঙ্কা প্রকাশ করেন, যেহেতু কমিউনিটি সংক্রমণ হচ্ছে, তাহলে কি এ ঘরমুখো মানুষগুলো প্রাণঘাতী ভাইরাসটিও সঙ্গে নিয়ে গেল! এরপর দেশব্যাপী বিচ্ছিন্ন সংক্রমণের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, প্রতিদিন অনেক লোক আক্রান্ত হচ্ছেন এবং পাল্লা দিয়ে মৃত্যুও বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি রণকৌশল না নিলে সংক্রমণ আরও প্রকাশ্যে আসবে। নীতি-নির্ধারকদের ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের হাতে সময় এখন ভাইরাসবিরোধী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। পিসিআর টেস্ট সেন্টার আরও বাড়ানো, তবে বিশাল জনসংখ্যার তুলনায় তা অপ্রতুল। ঘনবসতিপূর্ণ দেশে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ বয়ে আনতে পারে করুণ ট্র্যাজেডি। কেবল মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রচারণা বারবার ভেসে উঠছে টেলিভিশনে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদি দুর্ভাগ্যবশত দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর ভেতরে ভাইরাসটির ব্যাপক সংক্রমণ ঘটে, তাহলে শিগগিরই গোটা জাতির অপ্রত্যাশিত ভাগ্য বিপর্যয় নিশ্চিত! ওইদিকে অধিকাংশ খেটে খাওয়া মানুষের সামান্য সঞ্চয় ফুরিয়ে যাচ্ছে। মানুষ অপেক্ষায়, মুক্তি আসবে কবে; ভাবছে, কতদিন? কতদিন মানুষকে এই তাড়া করবে মহামারি-মৃত্যু! এখনো মানুষের জানা নাই। বিশ্বের ঘরবন্দি মানুষের জন্য আরও তীব্র বিপদের রণডঙ্কা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, শীত বা গরম এ দুই আবহাওয়াতেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার জন্য শক্তিশালী। ছড়িয়ে পড়ার অর্থ প্রকৃতিতে বা মানবদেহে সক্রিয় থাকার ক্ষমতা। প্রকৃতিতে এটা কয়েক ঘণ্টা বেঁচে থাকে। মানুষের শরীরে প্রবেশের পর রোগের কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ না থাকলেও এ ভাইরাস ১২ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস নিয়ে আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ কিছু লোক সমাজে অবাধে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু শনাক্ত হবে না। অথচ তাদের সংস্পর্শে যারা আসবে তাদের মধ্যে অর্ধেক লোক রোগে আক্রান্ত হবে আবার বাকি অর্ধেক আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ অবস্থায় করোনাভাইরাস নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। বোঝা যাবে না, কার সংস্পর্শে সংক্রমণ ঘটল। পরীক্ষা না করা পর্যন্ত বোঝা যাবে না কে করোনাভাইরাস মুক্ত, কে সুস্থ আর কে প্রকৃত রোগী।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে সুপরিকল্পিতভাবে তাঁর বিধান ও রাসুল (সা:)-এর আদর্শ অনুসরণ করলে তাঁর সকল বান্দাকে নিশ্চয় মহামারী থেকে মুক্তি দেবেন, ইনশাআল্লাহ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.