Sylhet Today 24 PRINT

কেন আমরা দাসদের মতো সবকিছু মেনে নিই?

ফয়সল সাইফ |  ২৫ এপ্রিল, ২০২০

মিশরে বছরের পর বছর দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ বনী ইসরায়েলকে মুক্ত করার জন্য খোদা কিছু অলৌকিক শক্তি সহকারে মুসাকে পাঠালেন। শুরুতে বনী ইসরায়েলিরা মুসার আহ্বান আস্থায় নিতে চাইলো না। উল্টো তারা মুসার কাছে চিহ্ন দেখতে চাইলো। মুসা চিহ্ন দেখালেন। তারপরও বনী ইসরায়েলিরা মুসার সাথে মিশর থেকে বের হতে গড়িমসি শুরু করলো। বরং তারা তৎকালীন ফেরাউনের রক্তচক্ষুর ভয়ে মিশরেই দাসত্বের জীবনকে নিজেদের জন্য শ্রেয় মনে করলো। মুসা খোদার পক্ষ হতে বনী ইসরায়েলিদের জন্য মিশরের বাইরে মধু ও আঙুরে ভর্তি একটা দেশের প্রতিশ্রুতি দিলেন। লোভে বনী ইসরায়েলিরা রাজি হলো। কিন্তু শর্ত হচ্ছে, ফেরাউনকে সামলাতে হবে যেয়ে মুসাকেই। মুসা তার ভাই হারুনকে নিয়ে খোদার সাহায্যে নানা টালবাহানার পরও কঠিন হৃদয়ের ফেরাউনের কাছ থেকে বনী ইসরায়েলিদের মিশরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি আদায় করতে সক্ষম হলেন।

নির্ধারিত দিনে মুসার নেতৃত্বে শুরু হলো যাত্রা। কিন্তু মিশর থেকে বের হওয়ার আগেই ফেরাউন তার বাহিনীসমেত বনী ইসরায়েলিদের পিছন থেকে ধাওয়া দিলো। মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত লোকজন তখন মুসাকে দোষারোপ করতে লাগলো। মুসা খোদার কাছে সাহায্য চাইলেন। খোদা ফেরাউনকে তার বাহিনী সহকারে সমুদ্রে ডুবিয়ে বনী ইসরায়েলকে রক্ষা করলেন। দলবল নিয়ে নিরাপদে সমুদ্র অতিক্রম করার পর শুরু হলো মরুভূমির মধ্য দিয়ে আরেক কঠিন যাত্রা। তখন বনী ইসরায়েলিরা দীর্ঘ দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত, অনেকটাই ভারহীন। তারপরও খোদার প্রতিশ্রুত সেই দেশে পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত তারা আরও অনেকবার তুচ্ছ কারণে মুসাকে দোষারোপ করলো। মাঝেমধ্যে এই কষ্টসাধ্য যাত্রার পর সম্পদে পরিপূর্ণ একটা নতুন দেশে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার চেয়ে মিশরে ফিরে গিয়ে পুনরায় দাসত্ব বরণ করে নেওয়াকেই শ্রেয় মনে করে চেঁচামেচি করলো। মুসাকে বলল, তাদের মিশর ফিরিয়ে নিয়ে যেতে, এখানে মরুভূমিতে অনাহারে মরার চেয়ে সেখানেই বরং তারা তুলনামূলক সুখী ও নিরাপদ ছিলো। মুসা জানতেন দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকতে থাকতে এঁদের মগজে পচন ধরেছে, এঁদের চিন্তা অসংলগ্ন। তিনি তাদের জন্য খোদার কাছ থেকে খাদ্য ও পানীয় জল চেয়ে আনলেন। তবুও তারা পুরোপুরি আস্থাশীল হলো না। খোদা যাত্রাপথে নানা সময় বনী ইসরায়েলিদের কৃত পাপের জন্য বার-কয়েক কঠিন শাস্তিও দিলেন। তারপরও তারা পুরোপুরি শোধরাতে পারলো না। কারণ ততদিনে মিশরীয়দের দাস হিসেবে খাটতে খাটতে তারা নিজেদের অভ্যাসেরও দাসে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মানুষ এমনই—সে তার নিজ অভ্যাসের দাস। দীর্ঘ অভ্যাসবশত তার মধ্যে যে স্বভাব গড়ে উঠে সে সহজে তা ত্যাগ করতে পারে না। একবার যাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তা যত অসহ্যই হোক সে তা থেকে বের হতে চায় না। বনী ইসরায়েলিরা চায়নি। প্রতিদিন দ্বিগুণ-তিনগুণ কাজের পাশাপাশি চাবুকের মার খেতে হবে জেনেও তারা মিশরেই আবার ফিরতে চেয়েছে, মিশর ছাড়তে চায়নি। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলে দেখবেন, দিনে দিনে আমরাও—সমাজ কিংবা রাষ্ট্র যাই বলি না কেন—এমন একটা অসহনীয় ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি—যেটা থেকে আর বের হওয়ার ইচ্ছা সম্ভবত আমাদের মধ্যকার খুব বেশি মানুষের আর জাগে না। এমনকি হতে পারে এটা যে অসহনীয় সেটাই আমরা ধরতে পারছি না। যারাও ধরতে পারছে তারাও সংখ্যায় একেবারেই সামান্য। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এসব নিয়ে ভাবনা নেই বললেই চলে। যারা ভাবতে পারার পর্যায়ে যাচ্ছে কিংবা যেতে পেরেছে, তারাও একটা পর্যায় থেকে কোনো না কোনোভাবে প্ররোচিত। এখানে চিন্তার স্বাধীনতা খুবই সামান্য। যা-ও আছে তা-ও খুবই গতানুগতিক। একটা গোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে আশ্রয় করে চিন্তা করছে, তো আরেকটা গোষ্ঠী বিএনপিকে আশ্রয় করে চিন্তা করছে। অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোও নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের গণ্ডিতেই আবদ্ধ থেকে চিন্তা করছে। এভাবেই ভিন্ন ভিন্ন চিন্তার শ্রেণি গড়ে উঠেছে। কিন্তু খুব কমই প্রকৃত মুক্তির কথা ভাবছে।

আমরা আগে থেকেই অস্বস্তিকর অনেককিছুর সাক্ষী। লাখো কোটি টাকারও বেশি খেলাপি ঋণ, পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুট, হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নির্বিঘ্নে বিদেশ পালিয়ে যাওয়া, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করা, উন্নয়ন প্রকল্পে লুটপাট, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবার নিম্নমান, শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক উত্থানপতন ঘটিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, প্রত্যাশামাফিক জবাবদিহির অভাব, ক্রমাগত ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করে ফেলা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাম্য প্রতিষ্ঠা ও সম্পদের সুষম বণ্টনের স্বপ্নে রক্ত ও প্রাণ দিয়ে লড়াই করে স্বাধীন হওয়া একটা রাষ্ট্র সবসময়ই পয়সাওয়ালা লুটেরাদের পক্ষে থাকছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত এই করোনার কালে এসে রাষ্ট্রের দ্বিচারিতাপূর্ণ মনোভাবটি আগের তুলনায়ও অনেক বেশি উলঙ্গ হয়ে পড়েছে। সাধারণ নাগরিকদের জন্য ঠিকমতো চিকিৎসার ব্যবস্থা না করেই, সামান্য সর্দিকাশিতে বিদেশি হাসপাতাল ঘুরে আসায় অভ্যস্ত তথাকথিত ভিআইপিদের জন্য বিদেশি চিকিৎসা-সেবা আপাতত বন্ধ থাকার কারণে—রাষ্ট্র তাদের জন্য আলাদাভাবে দেশের সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা-সেবাটি নিশ্চিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

আমরা আমাদের রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের প্রতি তবুও বিরক্ত হবো না; কারণ আমরা এসব দেখতে দেখতে অভ্যস্ত। ধসে পড়া রানা প্লাজার স্তূপ থেকে ভীষণ প্রয়োজনের মুহূর্তে রাষ্ট্র অসহায় শ্রমিকদের দ্রুত উদ্ধারে যখন অক্ষম—তখন স্থানীয় জনতাকেই স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় এগিয়ে আসতে হয়, পানির পাইপের ভেতর পড়ে যাওয়া একটা শিশুকে উদ্ধার করতে যেয়ে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের সক্ষমতা সাধারণ এক নাগরিকের বুদ্ধিমত্তার কাছেই যখন মুখ থুবড়ে পড়ে, তখনও আমরা হতাশা বোধ করি না। বরং দেশ কোন কোন ক্ষেত্রে কতটুকু এগিয়ে বিশ্বের রোল-মডেলে পরিণত হয়েছে, প্রতিনিয়তই আমরা সেইসব বাগাড়ম্বর শুনি, এবং বিশ্বাসও করি। বিশ্বাস করে পুলকিতও বোধ করি।

এই নিঃশর্ত বিশ্বাস, কিংবা সবকিছুতে এমন অভ্যস্ত হয়ে উঠার পেছনে নিশ্চয়ই আমাদের দাসত্বসুলভ আচরণের দায় খুব প্রবলভাবেই আছে?—যেটা প্রতিনিয়তই রাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিকের বদলে নগণ্য প্রজার বোধে আমাদের কোনোরকমে বেঁচে থাকতে প্ররোচনা যোগায়। মিশরের সেই বনী ইসরায়েলিদের মতোই আমাদের মনও দাসত্বে আচ্ছন্ন, তাদের মতোই দাসত্বেও আমরা তুলনামূলক নিরাপদ বোধ করি। এই নিরাপদবোধের পেছনে আরেকটা কারণ সম্ভবত—জনসাধারণের উপর রাষ্ট্রের কর্তাশ্রেণির অনুগত মোল্লা-পুরোহিত ও বুদ্ধিজীবীশ্রেণির ব্যাপক প্রভাব। বাংলাদেশের যেকোনো শাসকগোষ্ঠীর অনুকূলে এই দুটো অনুপ্রেরণাদায়ীশ্রেণি খুবই নিষ্ঠার সাথে কাজ করে। তাই দেখবেন, এদেশের পাঠকনন্দিত লেখক করোনা মোকাবিলার ব্যর্থতায় গোটা বিশ্বের শাসকদের মাথা কামিয়ে দিতে যেয়ে যে কবিতা লেখেন, সেখানে তার নিজের দেশের কথা থাকে না। তবুও আমরা ভালোবেসে তাদের বই-ই বেশি কিনি, তাদের কথা শুনি; কারণ তারা সহজবোধ্য। আমরা গোর্কি, দস্তেয়ভস্কি, সার্ত্রে, নিৎসে, হেগেল, ফ্রয়েড, মার্কস, কান্ট, ভলতেয়ার, চেখভ, রুশো, ইবসেন, শ, কাফকা কিংবা তলস্তয় তেমন পছন্দ করি না। তাদের জটিল অথচ প্রয়োজনীয় চিন্তাকে অগ্রাহ্য করে চলি; কারণ ওসব নিয়ে মাথা ঘামাতে আমাদের ভালো লাগে না। আমরা আমাদের নিজের দেশের ইলিয়াস-ছফাদেরও তুলনামূলক অগ্রাহ্য করেই চলি। না ছুঁয়েই আমরা তাদের মধ্যে দুর্বোধ্যতার ভয় করি, তাই তাদের চিন্তার গুরুত্ব ও সৌন্দর্যকে আস্বাদন না করে নিজেদের চিন্তার বিকাশ হতে বঞ্চিত রাখি। আমরা তা-ই পড়ি, তা-ই দেখি, তা-ই শুনি—যা আমাদের কাছে সহজ এবং একইসাথে আমাদের বিনোদিতও করে। আমরা সবসময় নিরসকেই সরল ও গুরুত্বপূর্ণ ভেবে সর্বত্যাগী মনোভাব নিয়ে তা আঁকড়ে থাকতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। সত্যিকারার্থে এই আত্মবিনাশী সংকল্পবদ্ধতাই আমাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দাসত্বের মানসিকতা আমাদের সেভাবেই চালিত করছে, যেভাবে আমাদের তথাকথিত মনুষ্যপ্রভুরা চাইছেন। দাসত্বসুলভ চিন্তাভাবনা ভেতর থেকে আমাদের দুর্বল করে দিয়েছে। এর ফলে যতটা নিচু আমরা নই, নিজেদের ততটাই নিচু ভেবে সবকিছুই নীরবে মেনে নিচ্ছি। এর ফলে যাদের কাঁধে প্রতিনিধিত্বের ভার আমাদের থেকে অর্পিত, তারাই কর্তা সেজে আমাদের শাসানোর সুযোগ পাচ্ছেন। আমরা ন্যূনতম প্রতিবাদের শক্তিও হারিয়ে ফেলেছি; কারণ আমাদের প্রতিনিয়তই শেখানো হয় যে কোন কোন জায়গায় প্রতিবাদ করা আমাদের সাজে না।

বিজ্ঞাপন

নিশ্চিত করে বলতে পারেন, কারা আমাদের ওসব শেখায়? তারাই—যাদের তুলনামূলক অযোগ্যদের ভিড় থেকে খুঁজে এনে আমাদের সামনে নসিহতদাতা হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। একের পর এক, এই নসিহতদাতারা আমাদের সামনে আসতেই থাকে। তারপর তাদের নসিহত শুনে আমরা মুগ্ধ হই, তাদের ভালোবাসি। এক সময় তাদের থেকে আর মুখ ফেরাতে পারি না। তাদের প্রতি জন্মানো ভালোবাসাবোধ আমাদের খুব বেশি প্রতারিত করে।

দেখবেন, ছোটবেলায় আমরা যারা ফুটবলে ব্রাজিল সাপোর্ট করতাম—আমাদের মুগ্ধতা রোনালদো, রোনালদিনহো, কাকা হয়ে পরবর্তীতে এখন নেইমারে এসে ঠেকেছে। কিন্তু মেসিকে আমরা ভালোবাসছি না; কারণ সে যত ভালোই হোক, সে তো আর্জেন্টাইন! একইভাবে আমাদের আর্জেন্টিনা-ভক্তদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। এমনকি তারা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পর্যন্ত মেসি-যুগে মেসির পরের স্থানটিও দিতে নারাজ; কারণ সে মেসির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। আর মেসি কিংবা রোনালদো—ব্যক্তিগত জীবনে যা-ই করুন, যা-ই বলুন—আমরা-ভক্তরা সব ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখে অভ্যস্ত। এমনকি আমরা স্বভাবতই তাদের পক্ষে মুখ চালাই, নিজেরা নিজেরা মারামারি করি। খুনোখুনিও হয়!

একইভাবে মাদ্রাসা কিংবা স্কুল থেকে কলেজ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর সময়টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে যেসব নসিহতদাতাদের আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়, আমরা তাদের এতোই ভালোবেসে ফেলি যে তাদের অবস্থানের মধ্যে ত্রুটি খুঁজতে যাই না। আমাদের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাষ্ট্রের কর্তাশ্রেণি ওসব খুব করে কাজে লাগায়। নসিহতদাতাদের কেউ কেউ আমাদের শত্রু চিনিয়ে দেন—যেই শত্রু প্রকৃতপক্ষে তাদেরই। তারা আমাদের চিন্তার স্বাধীনকে গলা চেপে হত্যা করে দলাদলির এক অন্ধকার কুপে ছুঁড়ে ফেলেন। সেখানে থাকতে থাকতে আমরা হয়ে উঠি একেকটা কুয়োর ব্যাঙ। এর ফলে যা হয়, কুয়োর উপরের গোটা পৃথিবী ও অনন্ত মহাবিশ্বের বিশালত্ব আমাদের জানাশোনার বাইরেই থেকে যায়। এমনকি আমরা যখন কোনো জঙ্গল দেখতে যাই, তখনও তারা কেবল আমাদের সেখানকার নির্দিষ্ট একটা গাছ খোঁজারই নসিহত দেন; ফলে গাছের ভাবনায় আচ্ছন্ন থেকে থেকে আমরা জঙ্গলটাই মিস করে ফেলি। আমরা এমন মানুষের কাছ থেকে প্রেরণা খুঁজতে যাই, যিনি বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে—কেবল ভবিষ্যৎ অনুগ্রহ প্রাপ্তির প্রত্যাশায় নির্দিষ্ট একজনকে খুশী করতে যেয়ে—নিছক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ীকে অগ্রাহ্য করে দৃষ্টিকটু ভঙ্গিমায় স্বাধীনতাপূর্ব সময়কার অখণ্ড ভারতবর্ষের এক বাঙালি নোবেল বিজয়ীর নাম তুলে ধরেন। আমরা চিন্তার দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারি না; কারণ এইসব ভণ্ডদের চিনতে আমাদের দেরী হয়ে যায়, কিংবা আমরা আদৌ তাদের আলাদা করতে পারি না। আমরা এমন মানুষকে সাধু হিসেবে বিবেচনা করি—যে ঘৃণা ছড়ায়। এমন মানুষকে জ্ঞানের বাতিঘর হিসেবে বিবেচনা করি—যে জ্ঞানের পথে হেঁটে চললেও অজ্ঞতার গণ্ডি অতিক্রম করতে পারেনি। এমন মানুষে প্রেরণা খুঁজি—যার চরিত্রেই সমস্যা। এমন মানুষে ভরসা খুঁজি—যার সামর্থ্য সীমিত। এমনকি আমরা অতিভক্তির ফলে সাধারণ গোছের মানুষেও আহাম্মকের মতো মিশরীয়দের খোদা ফেরাউনের খোদায়ী শক্তির প্রত্যাশা করি—যে নাকি দম্ভভরে বলতো, সে সূর্যের উদিত হওয়া ও অস্ত যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে, সে নীল নদের পানি প্রবাহ ঠিক রাখে, সে ফসল ফলায়, এমনকি মিশরীয়দের ভালোমন্দও তার হাতেই।

বিজ্ঞাপন

স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের পক্ষে কি সত্যিই বিশ্বাস করা সম্ভব যে, মানুষ সুপারম্যানের মতো ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে? কিংবা পৌরাণিক কোনো দেবতার পর্যায়ে চলে যেতে পারে? ভয়, শৈশব কিংবা টিনএজ বয়সের প্রিয় ব্যক্তিত্বের প্ররোচনায় পরবর্তীতে প্রতারিত হওয়া কিংবা প্রাপ্তির লোভ ছাড়া এটা কখনোই বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। সুতরাং যতদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রিয় নসিহতদাতাদের মধ্যে বুদ হয়ে থাকবো, ততদিন পর্যন্ত আমাদের মুক্তি নেই। আমরা এমনকি অলীক সবকিছুও বিশ্বাস করতেই থাকবো, এবং সবসময় মিসরে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ বনী ইসরায়েলিদের মতোই নিজেদের সুখী ও নিরাপদ ভাববো, চাবুকের আঘাত সইতে সইতেও।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.