Sylhet Today 24 PRINT

এখনই সময় মানবিক হওয়ার

নীলসাধু |  ৩০ এপ্রিল, ২০২০

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে পুরো বিশ্বের চিত্র বদলে গেছে। দেশে দেশে সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন, কারফিউ চলছে। মারা যাচ্ছে হাজার লক্ষ মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩০ লাখের উপরে।

বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে পুরো দেশই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আক্রান্তদের সংখ্যা। মারা যাচ্ছেন ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষসহ সাধারণ মানুষ। পাড়া লকডাউন হচ্ছে, এলাকায় মাইকিং করে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে রাস্তাঘাট। মসজিদ মন্দিরে যাতায়াত সীমিত করা হয়েছে। মার্কেট, শপিং মলসহ বন্ধ রয়েছে গণ পরিবহন।

এ দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে কিছু ঘটনা আঁতকে উঠার মতন। করোনা–আক্রান্ত সন্দেহে মাকে জঙ্গলে ফেলে গেছে সন্তান। মুমূর্ষু রোগীকে নামিয়ে রাস্তায় চলে গেছেন অ্যাম্বুলেন্সের চালক। মৃত্যুর পর পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফনে বাধা দিয়েছেন প্রতিবেশীরা। সন্তান ও স্ত্রী সারা রাত লাশ পাহারায় ছিলেন অনেক অনুরোধ-অনুনয়েও কেউ এগিয়ে আসেননি এমন খবর আমরা দেখছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে দাফন করা নিয়ে জটিলতার খবর নিয়মিতই শুনছি আমরা। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৃতদেহ করোনা ভাইরাস ছড়ায় এমন কোনো নজির পাওয়া যায়নি। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে দাফন বা সৎকারে অংশ নিলে সংক্রমণের আশঙ্কা নেই।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন স্থানের বিচ্ছিন্ন এসব ঘটনায় প্রমাণ হয় আমাদের মধ্যে অসহায়-বোধ গভীরতর হচ্ছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, মহামারিতে বা বড় দুর্যোগে মানুষ অতি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা তৈরি হয়। এ সময় সঠিক তথ্য বিশ্বাসযোগ্য ভাবে দেওয়ার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার উদ্যোগ থাকা দরকার।

এ সময়ে মানুষের মনে সাহস জোগাতে সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। সকলের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেয়া খুব জরুরি যে করোনা রোগীদের শতকরা ৮০ ভাগ সুস্থ হয়ে উঠেন। তাদের হাসপাতালে যাবারও প্রয়োজন হয় না। মাত্র ২০ ভাগ রোগীকে হাসপাতালে যেতে হতে পারে। তবে তার জন্য আপনাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

আমাদের দায়িত্ব যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সাহস দেয়া। সুস্থ হয়ে উঠার জন্য মানসিক শক্তি যোগান দেয়া। দেশের যে অবস্থা তাতে আগামী মাস শেষে লক্ষ রোগী থাকতে পারে। আপনি আমি যদি এই লক্ষ মানুষকে ভালোবাসা যত্নের বদলে মানসিক যাতনা, ব্যঙ্গবিদ্রূপ করে তাকে ও তার পরিবারকে ত্যাগ করি তবে বিষয়টি একেবারেই অমানবিক। আমরা সকলে যদি একে অন্যের পাশে থাকি তবে এই মহাদুর্যোগ মোকাবেলা করা কিছুটা হলেও সহজ হবে। না হলে আজ আপনি যা করছেন তা আগামীকাল আপনার কাছেই ফিরে আসতে পারে যা হবে খুব দুঃখজনক। এই মহামারীতে আমরা কে কখন আক্রান্ত হয়ে পড়ি তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই সকলের কাছে অনুরোধ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন। মানবিক আচরণ করুন। মহামারী মোকাবেলায় এক হয়ে লড়াই করুন, আর তাতেই করোনা পরাজিত হবে।

দয়া করে করোনা আক্রান্তদের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। তাদের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ করবেন না। আক্রান্তদের কোনোভাবেই হীন চোখে দেখার সুযোগ নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অপরাধী ভাবাও ঠিক নয়। কাল আমি বা আপনি নিজেও অসুস্থ হতে পারেন এ কথাটি মনে রেখে হলেও তাদের প্রতি সদয় হউন।

আমাদের সকলেরই বুঝতে হবে যে সমস্যার মুখোমুখি আমরা হয়েছি, তা একা স্বাস্থ্যকর্মী বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মোকাবেলা করতে পারবে না। এর দায় শুধু সরকারের নয়। আমাদের সকলেরই আচরণ গত জায়গায় পরিবর্তন দরকার।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এমন ভয়াবহ মহামারী আসে একশ বছরে একবার। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিজের দায় বোধের জায়গা হতে নিজেকে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে রেখে যেতে চাইলে আমাদের উচিত মানবিক আচরণ করা, মানুষের পাশে সহায় হয়ে থাকা।

আসুন একে অন্যকে সাহস যুগিয়ে যাই। সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেই। বন্ধুর মতন আচরণ করি। প্রতিবেশীর প্রতি সহযোগিতামূলক হই। মনে রাখবেন আমাদের এখনই সবচেয়ে বেশি মানবিক হওয়ার সময়।

নীলসাধু: কবি, সংগঠক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.