Sylhet Today 24 PRINT

ঘোড়ার আগে ছড়ি কিনতে এত তাড়া কেন?

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ |  ০২ মে, ২০২০

খবরে দেখলাম ভেন্টিলেটর-সিসিইউ স্থাপনে ১৪শ' কোটি টাকার জরুরি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। এখানে যতটা জোর দিয়ে 'নিঃসন্দেহ' শব্দটা লিখলাম এতটা জোর ভেতর থেকে পাইনি! সত্যি বলছি, পাইনি!

ধরে নিলাম, আপনারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এই ১৪০০ কোটি টাকায় অন্যান্য সব খরচ বাদ দিয়ে কম করে হলেও ১০০০ ভেন্টিলেটর কিনতে পারবেন! অবশ্য হাসপাতালের পর্দা কেনা, স্টেথো কেনা, চেয়ার কেনা আর চায়ের কাপ কেনায় আপনাদের যে ইতিহাস আছে তাতে করে এই ১৪০০ কোটি টাকায় আপনারা যদি মাত্র ১৪টা ভেন্টিলেটরও কেনেন তাহলেও আমরা আমজনতা মোটেও আশ্চর্য হবো না!

বিজ্ঞাপন

অবশ্য দয়াপরবশ হয়ে যদি এই ১৪০০ কোটি টাকায় ন্যূনতম হাজার খানেক ভেন্টিলেটরও আপনারা কেনেন তাহলে বলব এত ভেন্টিলেটর কোথায় সংযুক্ত করবেন! কোভিড হাসপাতালের আইসিইউতে?

তার আগে জানতে চাই, আপনাদের কয়টা কোভিড হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন (ম্যানিফোল্ড সিলিন্ডার সিস্টেম বা অক্সিজেন প্লান্ট সিস্টেম) আছে? ভেন্টিলেটরগুলো কি সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ছাড়াই শুধু হাওয়া-বাতাস দিয়েই চালাবেন?

তার আগে জানতে চাই, এত ভেন্টিলেটর চালানোর মতো কতজন দক্ষ জনবল আপনাদের আছে? নাকি জনবল ছাড়াই রোবট দিয়েই ভেন্টিলেটর চালাবেন? ঘোড়া কেনার আগেই ছড়ি কিনতে এত তাড়া কেন?

তিনমাস হয়ে গেলো অথচ আজ পর্যন্ত কোভিড হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন (ম্যানিফোল্ড সিলিন্ডার সিস্টেম বা অক্সিজেন প্লান্ট সিস্টেম) স্থাপন করতে পারেননি! আগে হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনসহ ভেন্টিলেটর বসানোর উপযোগী অন্যান্য সকল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও লোকবল নিশ্চিত করুন তারপর নাহয় ভেন্টিলেটর কিনবেন।

দেশের কেন্দ্র থেকে শুরু করে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এর আগেও হাজার হাজার সব ইন্সট্রুমেন্ট আপনারা কিনেছেন। যেখানে যা প্রয়োজন নেই সেখানে সেইসব ইন্সট্রুমেন্টও আপনারা কিনেছেন যা বছরের পর বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এইভাবে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে তার প্রায় সবগুলোই আজ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। শঙ্কা হয়, ভেন্টিলেটরগুলোর দশাও কি এমন হবে?

বিজ্ঞাপন

এমনই তো হওয়ার কথা! ভেন্টিলেটর সংযুক্ত করার উপযুক্ত ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও ব্যবস্থাপনা না থাকলে সেগুলোও তো হাসপাতালের স্টোররুমে পচে-পচে মরবে!

এভাবেই তো বছরের পর বছর ধরে এই স্বাস্থ্যখাতেই রাষ্ট্রের কাড়ি কাড়ি টাকা গচ্চা যাচ্ছে! জনগণের ট্যাক্সে পকেট কাটছে! তাতে কী? অনেকের পকেট তো ঠিকই ভারি হচ্ছে! আবজালরাও দিনেদুপুরে ফুলেফেঁপে একেকটা বটগাছ হচ্ছে!

জিডিপি'র মাত্র ০.৮৯ শতাংশ আমাদের স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হয় যা প্রায় সারা পৃথিবীতেই বিরল। তারপরেও দেশের জনগোষ্ঠীর একটা বৃহদাংশ সরকারিভাবেই স্বাস্থ্যসেবাটা পাচ্ছে!

বাজেটের যে যৎসামান্য অংশটুকু আমাদের স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হয় তার আশিভাগও যদি প্রোপার ইউটিলাইজ হতো তাহলে নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যখাতে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের জনগণ সরকারের কাছ থেকেই আরও উন্নততর স্বাস্থ্যসেবা পেতো, তাদেরকে প্রাইভেট কর্পোরেট হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে হতো না।

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ: সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ); সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.