Sylhet Today 24 PRINT

সিনেমার টানে শিক্ষকতা ছাড়েন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

বিনোদন ডেস্ক |  ১০ জুন, ২০২১

অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েও বেশি দিন মন টেকেনি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের। লিখতেন কবিতাও, ছোট দৈর্ঘ্যের সিনেমায় হাতেখড়ি হয়েছে আগেই। সব মিলিয়ে তার পক্ষে ভালোবাসার জায়গা থেকে দূরে থাকা কঠিন ছিল। অনিশ্চিত শিল্প ভুবনে এসে সেলুলয়েডে লিখেছেন একের পর কবিতা।

বৃহস্পতিবার প্রয়াত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত এ নির্মাতা। ঢাকার চিত্রমোদীরাও তার জন্য শোকাহত। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ছাপ পড়েছে। এ দেশের রাইসুল ইসলাম আসাদ ও গুলশান আরা চম্পা ক্যারিয়ারের অন্যতম অভিনয় করেছিলেন বুদ্ধদেবের ছবিতে। এ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে তার যোগাযোগ বরাবরই আন্তরিক ছিল। কয়েক বছর আগেও নিজের নতুন ছবি নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে।

বুদ্ধদেব অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ শ্যামসুন্দর কলেজে। এর কয়েক বছর পর অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সিনেমায় তুলে ধরার জন্য শিক্ষকতা ছাড়েন।

তবে সিনেমার পোকা হঠাৎ-ই তাকে আক্রান্ত করেনি। সিনিয়র হাইস্কুলে পড়াকালে চাচার মাধ্যমে কলকাতা ফিল্ম সোসাইটিতে তার আসা-যাওয়া, পরবর্তীতে সদস্যপদ লাভ। যেখানে পরিচয় ঘটে চার্লি চ্যাপলিন, ইঙ্গমার বার্গম্যান, আকিরা কুরোসাওয়া, ভিত্তরিও দে সিকা, রবার্টো রোসেলিনি ও মাইকেল এনজেলো আন্তোনিওনির মতো পরিচালকের সিনেমার সঙ্গে। সত্যজিৎ রায়ের ছবিও তাকে দিয়েছে অনুপ্রেরণা। কিন্তু নিজস্ব একটি অভিব্যক্ত আয়ত্ত করেছিলেন বুদ্ধদেব, যা তাকে দিয়েছে ভারতীয় চলচ্চিত্রে বিশিষ্ট আসন।

তিনি ১৯৬৮ সালে ১০ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি ‘দ্য কন্তিনেন্ত অব লাভ’ দিয়ে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। ১৯৭৮ সালে নির্মাণ করেন প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের  ছবি ‘দূরত্ব’।

স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন অর্ধশতের বেশি। পূর্ণদৈর্ঘ্যের মধ্যে রয়েছে দূরত্ব  (১৯৭৮), নিম অন্নপূর্ণা (১৯৭৯), গৃহযুদ্ধ (১৯৮২), অন্ধ গলি (১৯৮৪), ফেরা (১৯৮৮), বাঘ বাহাদুর (১৯৮৯), তাহাদের কথা (১৯৯২), চরাচর (১৯৯৩), লাল দরজা (১৯৯৭), উত্তরা (২০০০), মন্দ মেয়ের উপাখ্যান (২০০২),  স্বপ্নের দিন (২০০৪), আমি, ইয়াসিন আর আমার মধুবালা (২০০৭), কালপুরুষ (২০০৮), জানালা (২০০৯), মুক্তি (২০১২), পত্রলেখা (২০১২), আনোয়ার কা আজিব কিসসা (২০১৩) ও টোপ (২০১৭)। এর মধ্যে ‘উত্তরা’ ও ‘লাল দরজা’য় অভিনয় করেন ঢাকার রাইসুল ইসলাম আসাদ। ‘লাল দরজা’য় আরও ছিলেন গুলশান আরা চম্পা।

বাঘ বাহাদুর, চরাচর, লাল দরজা, মন্দ মেয়ের উপাখ্যান, কালপুরুষ, দূরত্বের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ‘তাহাদের কথা’ বাংলাতে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম বিভাগে পুরস্কার জেতে। পরিচালক হিসেবে ‘উত্তরা’ এবং ‘স্বপ্নের দিন’-এর জন্য পান শ্রেষ্ঠ পরিচালকের স্বীকৃতি। জেতে আরও কয়েকটি বিভাগে পুরস্কার। এ ছাড়া ভেনিস, বার্লিন ও লোকার্নোর মতো মর্যাদাসম্পন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে তার ছবি পায় মনোনয়ন ও পুরস্কার। ২০০৮ সালের ২৭ মে স্পেনের মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে অজীব সম্মাননা দেওয়া হয়।

তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে গভীর আড়ালে, কফিন কিম্বা সুটকেস, হিমজগ, ছাতা কাহিনি, রোবটের গান, শ্রেষ্ঠ কবিতা, ভোম্বোলের আশ্চর্য কাহিনি ও অন্যান্য কবি।

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ১৯৪৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পুরুলিয়ার আনারাতে জন্মগ্রহণ করেন। তারা ছিলেন নয় ভাই-বোন। বাবা তারকান্ত দাশগুপ্ত ভারতীয় রেলওয়ের চিকিৎসা ছিলেন। তাই ছোটবেলা কেটেছে বিভিন্ন জায়গায়। বারো বছর বয়সে তিনি হাওড়া দিনাবন্ধু স্কুলে পড়াশোনা করার জন্য কলকাতায় যান। পরে স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি অধ্যয়ন করেন এ নির্মাতা।

অনেক দিন ধরেই বুদ্ধদেব কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন, চলছিল ডায়ালাইসিস। সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ছিল বার্ধক্যজনিত সমস্যা। বৃহস্পতিবার ডায়ালাইসিস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোরবেলা স্ত্রী সোহিনী দাশগুপ্ত দেখেন, তার শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। পরে তারা নিশ্চিত হন, বুদ্ধদেব মারা গেছেন।  এভাবে শরীরীভাবে স্তব্ধ হয়ে যান বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, কিন্তু তার সৃষ্টিশীলতা আছে চিরসবুজ হয়ে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.