Sylhet Today 24 PRINT

মুভি রিভিউ: ‘দেয়ালের দেশ’

জাকিয়া সুলতানা মুক্তা |  ১২ এপ্রিল, ২০২৪

‘দেয়ালের দেশ’ সিনেমায় শরিফুজ রাজ ও শবনম বুবলী

এবারের ইদে মুক্তিপ্রাপ্ত মুভি ‘দেয়ালের দেশ’। সনি স্কোয়ারে মুভিটির প্রথম শো এ গিয়ে পরিবারসহ সিনেমাটি দেখলাম। বলতেই হয় মুভিটা খুব যত্ন নিয়ে করা। দেখে এমনটাই মনে হয়েছে। কেননা গল্পের উপস্থাপনায় এতে বেশ পরিচ্ছন্ন ও ভীষণ আবেগী ভালোবাসার প্রকাশ ছিল।

আজকাল তো নিম্নবিত্তের ভালোবাসার গল্প নিয়ে, সেরকম আবেগঘন সিনেমা সেভাবে আর নির্মিত হয় না। এক্ষেত্রে ‘দেয়ালের দেশ’ মুভিটা উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। পরিচালক বেশ আন্তরিকতা নিয়ে সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন বোঝা যায়। তবে সম্ভবত অনুদানের মুভি হওয়ায় আরও যত্ন নিয়ে কাজটা সম্ভব হয়নি। যেমন- এডিটিং এ যথেষ্ট ঘাটতি চোখে পড়েছে। মৃত ব্যক্তির চরিত্র চিত্রায়নের সময়ে চরিত্রের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার বিষয়টি বড় পর্দায় বেশ দৃষ্টিকটু ও অবিশ্বাস্য হিসেবে নজরে পড়েছে। আরও একটু যত্নশীল হলে বিষয়টি লুকানো সম্ভব ছিল।

তবে ‘দেয়ালের দেশ’ মুভির নির্মাতা ও কলাকুশলীরা যে দাবি করেছেন অনুদানের সিনেমা নিয়ে ধারণাটা ওনারা পরিবর্তন করে দেবেন। কথাটার সত্যতা রয়েছে। কেননা এখানে অল্প আয়োজনে আন্তরিক কাজের ছাপ অত্যন্ত স্পষ্ট। বিশেষত অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ভালো কাজ করেছেন। মেকআপ-গেটআপে যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন। চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা আরও একটু মাটির কাছাকাছি গেলে ভালো করতেন। এটা অনেকটা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধীবর জীবনকে বাহির থেকে দেখে 'পদ্মা নদীর মাঝি' লেখার মতন হয়েছে। যদি কাজটা অদ্বৈত মল্লবর্মণের মতন 'জাউল্লা' হয়ে জেলে জীবনের কাহিনী লেখার অনুসরণে করা যেত, তবে এই মুভিটাও একটা 'তিতাস একটি নদীর নাম'-এর মতন সৃষ্টি হলেও হতে পারত। উল্লেখ্য এটি কোনো জেলে জীবনের কাহিনী নয়, মূলত এটি মর্গে কাজ করা এক ডোমের অবিশ্বাস্য ভালোবাসার কাহিনী। সংলাপে ও উচ্চারণে একটু দুর্বলতা চোখে পড়লেও সব মিলিয়ে প্রশংসা করা যায়।

সিনেমাটোগ্রাফি বেশ ভালো ছিল। অভিনয়ে বিশেষ করে নায়ক শরীফুল রাজের প্রশংসা না করে পারা যায় না। তবে নায়িকা হিসেবে বুবলীর প্রশংসা না করলে অন্যায় হবে। রাজের মেকআপ, গেটআপ, ডায়ালগ ডেলিভারি সবই অবিশ্বাস্য দারুণ ছিল। আর বুবলী শুধু অভিনয়ে দারুণ করেছে এটা বললেই হচ্ছে না, বরং বলতে হবে বর্তমানের মূলধারার জনপ্রিয় নায়িকাদের মাঝে এত সাহসী নায়িকা বোধ হয় পাওয়া দুষ্কর। পরিপূর্ণ বাণিজ্যিক ঘরানার নায়িকা হওয়া সত্ত্বেও, এমন আর্ট ফিল্ম ধাঁচের মুভিতে নিবেদিত হয়ে কাজ করার দুঃসাহস খুব কম নায়িকারই হবে।

আজকাল নায়ক-নায়িকা বা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মাটির স্পর্শবিহীন, সেখানে সত্যিকার অর্থেই সেই গ্রুমিং না থাকার পরেও যতটুকু তিনি করেছেন তা সত্যিই ভালো লেগেছে। এই একই কাজ মঞ্চ নাটক থেকে উঠে আসা কোনো অভিনেত্রী, অবশ্যই আরও যত্নশীল হয়ে করতে পারতেন বলে বিশ্বাস করি। কিন্তু বর্তমান মূলধারার নায়িকাদের একজন হয়েও তিনি মোটেও অভিনয়টা কম বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করেননি। চেষ্টা করেছেন, আন্তরিক ছিলেন এটা বোঝা যায়।

তবে ইদের মুভি হিসেবে হিসেবে এমন সিনেমা যথাযথ হয়নি, বিধায় আশংকা করছি সিনেমার সঠিক মূল্যায়নটা হয়তো হবে না। কেননা ইদের সময়ে লোকে আর্ট ফিল্ম দেখতে সেভাবে যেতে চাইবে না। কিন্তু বর্তমানে ইদের সময়টাতেই বাংলা সিনেমা বাজার কিছুটা টিকে আছে বিধায়, এরকম একটা আবেগঘন মুভিকে বাণিজ্যিক বা মূলধারার সিনেমার সাথে যুদ্ধে নামতে হয়েছে। এর বাইরে দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ বা প্রযোজকের সিনেমা ব্যবসা, উভয়ক্ষেত্রেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, এই বাস্তবতা। নইলে এই মুভিটা এমন ঘোড়দৌড়ে না পড়লে, বেশ ভালো সম্ভাবনাময় একটা সিনেমা হয়ে উঠতে পারত বা এখনও পারে। সম্ভাবনা আছে।

সবশেষে ‘দেয়ালের দেশ’ মুভিটা এক বাক্যে বললে, 'বর্তমান বাস্তবতায় যাপিত সংসারে জীবিত মানুষের মৃত ভালোবাসার আর কারোর কারোর ক্ষেত্রে প্রেমাস্পদের সাথে যাপনেচ্ছুক জীবন্ত সংসারের গল্প'।

সিনেমাটা ভালো লেগেছে। এর নির্মাতা ও কলাকুশলী সবার প্রতি শুভেচ্ছা রইল। ভালো কাজ হয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.