Sylhet Today 24 PRINT

আমাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য আত্মহত্যার চেষ্টা করে সালমান, দাবি সামিরার

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা তারকা সালমান শাহর মৃত্যুরহস্য ঘিরে ২৯ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে বিতর্ক। কেউ বলেন ‘আত্মহত্যা’, কেউ বলেন ‘হত্যা’। বছর দুয়েক আগে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রয়াত অভিনেতার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক জানিয়েছেন, সালমান শাহ মানসিকভাবে ছিলেন ‘সুইসাইডাল বাই নেচার’, অর্থাৎ আত্মহত্যাপ্রবণ।

১৯৯২ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেছিলেন সালমান শাহ, যাঁর পুরো নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। সামিরা ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরার মেয়ে এবং বিউটি পারলার ব্যবসায় জড়িত। সালমানের দুটি সিনেমার পোশাক পরিকল্পনাতেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। সিনেমায় স্টাইল ও ফ্যাশন বিষয়ে সালমান প্রায়ই তাঁর পরামর্শ নিতেন।

২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সালমানের জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সামিরাকে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে শোনা গেছে, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। শুধু তা–ই নয়, আগেও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।

সালমান কেন আত্মহত্যা করবেন? প্রথম স্বামী সালমান শাহর আত্মহত্যা প্রসঙ্গে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সামিরা বলেন, ‘ও (ইমন) মেন্টালি সুইসাইডাল বাই নেচার। এর আগেও তিনবার সুইসাইডের চেষ্টা করেছে। মেট্রোপলিটন হাসপাতালের রেকর্ড চেক করলে সেটা জানা যাবে। সেখানে দুবারের রেকর্ড আছে। আরেক হাসপাতালে আছে তৃতীয় রেকর্ড। তিনটাই আমাদের বিয়ের আগের ঘটনা। তিনটা ঘটনাই আমি জানি। একবার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে করেছিল। আরেকবার আমাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য করেছে। আরেকবার অন্য একটি ঘটনায় সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।’

সালমান কেন আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠলেন, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সামিরা বলেন, ‘ইমন কিন্তু ছবিতে ক্যারিয়ার করতে চায়নি। সে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। এরশাদ (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) ও নীলা চৌধুরীকে নিয়ে এক ঘটনায় নীলা চৌধুরী জেলে যান। তিনি ময়মনসিংহ কারাগারে থাকা অবস্থায় ইমন একদিনও তার মাকে দেখতে যায়নি। কেন? ইমন কিন্তু তার মাকে মা বা আম্মা বলে ডাকত না, বলতো “মহিলা”। আমাদের সামনে অবশ্য ওভাবে বলত না। নীলা চৌধুরী যখন শুটিং সেটে যেতেন, ইমন বলত, “মহিলা আসছে”। সেটা শুনে ডলি জহুর আন্টি একদিন তাকে বকা দিয়ে বলেছিলেন “তুই এভাবে ডাকছিস কেন? তোর তো মা হয়।” ইমন তখন হেসে উড়িয়ে দিয়েছে।’

সামিরা আরও বললেন, ‘ইমনের মনে অনেক কষ্ট ছিল। ইমন অনেক কিছু দেখে বড় হয়েছিল, যেগুলো ওর দেখার কথা ছিল না। বাচ্চাদের ওপর সেসব ঘটনা বাজে প্রভাব ফেলে। আমরা এখন যেমন হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করি, তখন তো এগুলো করতাম না। তখন আমাদের কোনো কাউন্সিলিংয়ের সুযোগ ছিল না। ছিল না রিহ্যাব। এখন রিহ্যাব আছে, কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা আছে। আমরা তেমন কিছু অনুভব করলে কারও সঙ্গে আলাপ করে তা ভাঙার চেষ্টা করি, বোঝার চেষ্টা। তখন তো ইমন এসব কাউকে বলতে পারেনি। “সালমান শাহ” হওয়ার পর তো আরও বলতে পারেনি। যাকেই বলবে, সেটা নিউজ হয়ে যাবে।’

সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বরাবরই দাবি করে আসছেন, তাঁর ছেলে আত্মহত্যা করেননি, বরং তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিলেন, ‘খুন নয়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন।’ পিবিআই সেদিন সালমানের আত্মহত্যার পেছনে পাঁচটি কারণও দাঁড় করিয়েছিলেন।

মাত্র ২৫ বছরের জীবনে সালমান শাহ ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন—সব কটিই ছিল বাণিজ্যিকভাবে সফল। নব্বইয়ের দশকে দেশের চলচ্চিত্রে রোমান্টিক হিরোর নতুন ধারা শুরু হয় তাঁর হাত ধরে। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেমযুদ্ধ’সহ তাঁর প্রতিটি সিনেমাই বক্স অফিসে হিট হয়।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর একে একে থানা–পুলিশ, সিআইডি, র‍্যাব, পিবিআইসহ একাধিক সংস্থা তদন্ত চালায়। সব প্রতিবেদনেই ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলা হলেও সালমানের পরিবারের আপত্তিতে প্রতিবারই তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করা হয়।

চলচ্চিত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র সালমান শাহর অকালমৃত্যুর রহস্য আজও অমীমাংসিত থেকে গেছে। কিন্তু সালমান শাহ আত্মহত্যাপ্রবণ ছিলেন—এই দাবি আবারও আলোচনায় ফিরিয়ে এনেছেন তাঁর সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। এদিকে ২৯ বছর আগে সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় সপ্তাহখানেক হত্যা মামলা করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলাটি তদন্তের জন্য রমনা থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ আদেশ দেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
✉ sylhettoday24@gmail.com ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.