Sylhet Today 24 PRINT

৬ বছরের শিশু ভিলেন, বিতর্কে বাংলা সিরিয়াল

বিনোদন ডেস্ক |  ২২ আগস্ট, ২০১৬

বয়স ছয়। টালিগঞ্জ গার্লস স্কুলের ছাত্রী। স্থায়ী নিবাস মালদহ। আর বর্তমান ঠিকানা- প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, কলকাতা। এই ৬ বছর বয়সেই সে গত কয়েক মাস ধরে নিয়ম করে সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টার স্লটে হাজির হচ্ছে বাঙালির ড্রইংরুমে। সৌজন্যে 'পটলকুমার গানওয়ালা'।

বলা হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গের টিভি সিরিয়ালের 'তুলি'র কথা। বাস্তবের নাম সিঞ্চনা সরকার। 'পটলকুমার গানওয়ালা' নামক জনপ্রিয় ধারাবাহিকের খলনায়িকা সে। তার কথা বলা, তাকানো, এক্সপ্রেশন— সব কিছুতেই 'ভিলেন' ছাপ স্পষ্ট। তাই সে ‘খল’ নায়িকা।

প্রশ্ন উঠেছে, এই বয়সের শিশু অভিনেতাকে দিয়ে এই নেগেটিভ চরিত্র করানো কতটা যুক্তিসঙ্গত? সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে চলছে বিস্তর চর্চা।

এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রখ্যাত লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘এটা একদম ঠিক হচ্ছে না। মোটেই ভাল মেসেজ নয়। আমি তো বলব অত্যন্ত কুরুচির পরিচয়। আমার বাড়িতেও এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি দেখেছি, মেয়েটি এত বুদ্ধি করে দুষ্টুমি করে যেটা ওর পক্ষে করা অসম্ভব। বাস্তবে এমন মেয়ে আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে এতটা নেগেটিভ দেখানো বোধহয় ঠিক নয়। শিশু তো কাদার তাল। ওর মনেও তো প্রভাব পড়তে পারে!’’

‘তুলি’র এক্সপ্রেশন কতটা নিজের, আর কতটা শেখানো? দীর্ঘদিন ধরে ‘তুলি’র চরিত্রে অভিনয় করতে করতে বাস্তবে সিঞ্চনার দৃষ্টিভঙ্গি এর আচরণে কি কোনো পরিবর্তন হতে পারে?

এমন প্রশ্নে মনোবিদ মোহিত রণদীপ বলেন, ‘‘আশঙ্কাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে ওকে না দেখে বলাটা বেশ মুশকিল। দেখতে হবে কতটা ও নিজে অভিনয় করছে, আর কতটা ওকে দিয়ে করানো হচ্ছে।’’

আদৌ কতটা বদলেছে ছোট্ট সিঞ্চনা? ‘তুলি’র মা রীতা সরকার বললেন, ‘‘দেখুন আমার মেয়ে ক্যামেরার সামনে তুলি আর ক্যামেরা অফ হলেই সিঞ্চনা। আমার মনে হয়নি ওর কোনো চেঞ্জ হয়েছে। ও ভাল অভিনয় করছে। আমি তাতেই খুশি।’’

আর দর্শক? তাঁদের মধ্যে ‘তুলি’র নেগেটিভিটির প্রভাব কতটা?

পঞ্চাশোর্ধ গৃহবধূ কৃষ্ণা মজুমদার বলেন, ‘‘বড়দের কুচুটেপনাটা আমি দেখি না। কিন্তু ওরটা দেখছি। এবার সেরা খলনায়িকার অ্যাওয়ার্ড ওর জন্য বাঁধা।’’

কলেজ পড়ুয়া শ্রীতমা জানান, ‘‘তুলি অভিনয়টা ফাটাফাটি করছে কোনও সন্দেহ নেই। সে জন্যই গায়ে জ্বালা ধরছে আমাদের। তবে আমার ভাইঝি ক্লাস ফোরে পড়ে। ওকে আমরা সিরিয়ালটা দেখতে দিই না। কারণ ওটা দেখে ওই অ্যাটিটিউডটা ও যদি কপি করার চেষ্টা করে, সেই ভয়টা তো আছেই।’’

শিশু মনস্তত্ব নিয়ে কাজ করা মনোবিদ সুদীপা বসু বলেন, ‘‘আমি খুব রেগুলারলি দেখি না। তবে বিতর্কটা শুনেছি। যারা রোজ দেখছেন তাঁদের বেশির ভাগই বিরক্ত। দর্শকরাই বলছেন, এতটুকু বাচ্চাকে ভিলেনের রোলে দেওয়াটা হয়তো ঠিক নয়। হিংসের চোটে অন্য একটি বাচ্চার (পটলের) জামাও পুড়িয়ে দিচ্ছে! এই সিরিয়ালটা অনেক বাচ্চাও তো দেখে। তারা তো বড়দের মতো অ্যানালিটিক হতে পারে না। ফলে তাদের ওপর একটা প্রভাব তো পড়বেই। আমরা তো দেখেও অনেক কিছু শিখি। তাই না?’’

এই মুহূর্তের সিরিয়ালে আরেক শিশু চরিত্র ‘ভুতু’ ওরফে আরশিয়া মুখোপাধ্যায়। 'ভুতু'র মা ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো- এই 'ভুতু' চরিত্র করার অফার পেলে রাজি হতেন? একটু ভেবে নিয়ে ভাস্বতী বললেন, ‘‘হয়তো রাজি হতাম না।’’

কেন? তিনি জানান, ‘‘ওরা তো ছোট। কোনটা অভিনয় আর কোনটা আসল সেটা বুঝতে পারে না। ফলে ব্যবহারে চেঞ্জ আসতে পারে। আমার মেয়েই তো টিভিতে দেখে কখনও বলে, দেখ তুলি কত দুষ্টু! তবে এর একটা অন্য দিকও আছে। সেটা নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার।’’

কী সেটা? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘তুলি আসলে অভিনয় করছে। আসল মানুষ অমনটা নয়। এটাই আমাদের, মানে বাব-মায়েদের বাড়িতে বাচ্চাদের বোঝাতে হবে। আর নেগেটিভিটি যদি বাস্তবে না থাকত, তা হলে তো সিনেমায় কখনও ভিলেন থাকত না, কোনো সুইসাইডও দেখানো হত না। সেটা আদৌ হয় কী?’’

তা হলে উপায় কি? শীর্ষেন্দুর মতে, এ সব না দেখানোই ভাল। মোহিতের কথায়, ‘‘আমাদের একটা প্রপার গাইডলাইন থাকা দরকার। এত ছোট বাচ্চাকে দিয়ে এগুলো করানো ঠিক কি না, সেটা আগে ঠিক করতে হবে।’’

সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.