Sylhet Today 24 PRINT

চলচ্চিত্রের প্রবাদপুরুষ জহির রায়হানের জন্মদিন আজ

মারূফ অমিত |  ১৯ আগস্ট, ২০১৭

বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবাদপুরুষ, পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার জহির রায়হানের ৮২তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৫ সালে ফেনী জেলার ধলিয়া ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। জহির রায়হানের আসল নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। তাঁর ডাকনাম ছিল জাফর।

১৯৫০ সালে যুগের আলো পত্রিকায় যোগদানের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন জহির রায়হান। পরে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হচ্ছে- শেষ বিকেলের মেয়ে, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী, আর কত দিন, কয়েকটি মৃত্যু, একুশে ফেব্রুয়ারি, তৃষ্ণা ইত্যাদি।

চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে; ‘জাগো হুয়া সাবেরা’ ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি ‘যে নদী মরুপথে’তেও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে ‘এ দেশ তোমার আমার’-এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান। জহির এ ছবির নামসংগীত রচনা করেছিলেন।

১৯৬১ সালে তিনি পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ‘কখনো আসেনি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’ মুক্তি দেন। জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। আন্দোলনটি তার ওপর যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, এর ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’তে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় ‘জীবন থেকে নেওয়া’র বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটকসহ অনেকে ভূয়সী প্রশংসা করেন।

জহির রায়হান নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রগুলো দেশ বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। প্রামাণ্যচিত্রগুলো হলো,স্টপ জেনোসাইড, বার্থ অব নেশন, লিবারেশন ফাইটার্স এবং ইনোসেন্ট জিনিয়াস।

তিনি পরিচালনা করেছেন সোনার কাজল, কাঁচের দেয়াল, বেহুলা, আনোয়ারা, জ্বলতে সুরাজকে নিচে’র মতো ছবি। তার পরিচালনায় অসমাপ্ত ছবি লেট দেয়ার বি লাইট।

পরিচালনার পাশাপাশি ছবি প্রযোজনাতে তাকে পাওয়া গেছে। তার প্রযোজনায় নির্মিত হয় মনের মতো বউ, জুলেখা, দুই ভাই, সংসার, শেষ পর্যন্ত এবং প্রতিশোধ।

১৯৬৫ সালে তিনি ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবির জন্য পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসরকারি পুরস্কার ‘নিগার পুরস্কার’ পান। শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। ছবিটি ৫টি শাখায় পুরস্কার পায়। ১৯৭২ সালে রাশিয়ার তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘জীবন থেকে নেয়া’ ও ‘স্টপ জেনোসাইড’ বিশেষ পুরস্কার লাভ করে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রবাদ পুরুষ জহির রায়হানের দুই স্ত্রী’র একজন সুমিতা দেবী। এই প্রয়াত অভিনেত্রীর দুই ছেলে বিপুল রায়হান ও অনল রায়হান। দুজনেই প্রতিষ্ঠিত নাট্য নির্মাতা। আরেক স্ত্রী সুচন্দা’র ছোট ছেলে তপু রায়হানও অভিনেতা। জাহির রায়হানের ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি বড় ভাই শহীদ সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে মিরপুর থেকে তিনি নিখোঁজ হন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.